প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পল্লম রাজু ভারতে উচ্চশিক্ষার পরিস্থিতি লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন। ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্বের শীর্ষ কুড়িটির তালিকায় নাই, প্রধানমন্ত্রী তাহার জন্য শিক্ষকদের নিম্নমানকেই দায়ী করিয়াছেন। শিক্ষামন্ত্রীর আক্ষেপ, শিল্পের সহিত উচ্চশিক্ষার দূরত্ব তৈরি হইয়াছে, তাই অসার ডিগ্রি লইয়া ছাত্ররা কাজের খোঁজ পাইতেছে না। ভারতে ২০০টি কমিউনিটি কলেজ খুলিয়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হইবে ছাত্রদের, এমনই পরিকল্পনার কথা জানাইয়াছেন রাজু। গোটা বিষয়টিতে আশ্বাসের কথা এটাই যে, শিক্ষার বিষয়টি রাজনীতি ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে গুরুত্ব পাইয়াছে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া মানের প্রসঙ্গটিকে আলোচনার কেন্দ্রে আনিয়াছেন। কিন্তু জনসমক্ষে তাঁহাদের বক্তব্যে উচ্চশিক্ষার মৌলিক সমস্যাগুলি অধরাই থাকিয়া গেল।
অথচ উচ্চশিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে তাহার মান বাড়াইতে গেলে কী করিতে হইবে, সেই সংলাপের সূত্রপাত করিতে গেলে সে কথাগুলি বলিবার প্রয়োজন ছিল। ভারতকে আর্থিক উন্নয়নের পথে চালিত করিতে হইলে যে আরও প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন, এবং তাহার জন্য উচ্চশিক্ষার বৃত্তে আরও অধিক তরুণতরুণীকে আনিতে হইবে, এই কথাটি এখন স্বীকৃতি পাইয়াছে সরকারি মহলে। দ্বাদশ পরিকল্পনায় ইহার প্রতি বিশেষ জোর দিয়াছে যোজনা কমিশন। বর্তমানে ১৮-২৫ বৎসরের তরুণতরুণীদের পাঁচজনে একজনও কলেজ শিক্ষার সুবিধা পান না। নিম্নবর্ণ এবং মহিলাদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার হার আরও কম। অতএব কেবল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বাড়াইলেই হইবে না, কাহাদের পড়িবার সুযোগ হইতেছে, তাহাও দেখা দরকার।
বৈষম্য রহিয়াছে কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহিত রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলিরও। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির অনুদানে কার্পণ্য নাই। অথচ দেশের নব্বই শতাংশেরও অধিক ছাত্রছাত্রী যেখানে পড়েন, সেই রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাহার সামান্যই পায়। রাজ্য সরকারের অনুদানের অধিকাংশই কেবল বেতনের জন্য খরচ হইয়া থাকে। ফলত পরিকাঠামো দুর্বল, বহু শিক্ষক পদ শূন্য, গবেষণার ব্যবস্থা অতি সামান্য। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শর্ত পূরণ করিতে না পারায় এ দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্ধেক কলেজ অনুদান পায় না। যাহারা পায়, তাহাদেরও কলেজ চালাইবার খরচ মেটাইতেই পান্তা ফুরায়। সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নতি করিবার কোনও প্রকল্পে সেই টাকা লাগাইবার সুযোগ নাই। এই অবস্থায় সীমান্তের জেলাগুলির দরিদ্র তরুণতরুণীরা অধিক বঞ্চিত হন। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় হইতে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কোনওটিই আজ অবধি আশেপাশের প্রতিষ্ঠানগুলির মান বাড়াইতে পারে নাই। উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন করিতে হইলে উপর উপর ব্যবস্থা করিয়া কাজ হইবে না। কঠিন সংস্কারের পথে হাঁটিতে হইবে। |