|
|
|
|
থানায় পুলিশকে মেরে মহিলার দাবি, ‘আমি তৃণমূল’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বইমেলায় পুলিশের উপরে ক্ষুদ্ধ হয়ে কলকাতা পুলিশের এক কর্মীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “আপনাদের চাবকানো উচিত।” তা নিয়ে বিতর্কের ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই, তৃণমূল কংগ্রেসের ‘স্বঘোষিত’ এক নেত্রীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৌবাজার থানায় ঢুকে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠল। এর পরেও অবশ্য শুক্রবার রাত পর্যন্ত ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি সারাদিন নিজের বাড়িতে বসে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেলেও পুলিশের দাবি, তাঁকে ‘খুঁজে পাওয়া’ যাচ্ছে না। তৃণমূল বলেছে, ওই মহিলা দলের কেউ নন।
পুলিশের অভিযোগ, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের বাসিন্দা পম্পা ওরফে পমা দত্ত (৩৮) নামে ওই মহিলা বৃহস্পতিবার রাতে থানায় ঢুকে কর্তব্যরত অফিসারকে চড় মারেন এবং অন্য এক অফিসারের গলা টিপে ধরেন। এক পুলিশ অফিসারের উর্দিতে তিনি গরম ‘চিলি চিকেন’ ঢেলে দেন বলেও অভিযোগ। পুলিশ জানায়, তিনি থানার চেয়ার-টেবিল উল্টে দেন, টেনে হিঁচড়ে থানার জরুরি কাগজপত্রও ফেলে দেন। এ সবের পরেও পুলিশ ওই মহিলাকে গ্রেফতার করল না কেন? পুলিশের দাবি, রাতে কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করার নিয়ম নেই। আটক করে রাখার মতো পরিকাঠামোও ছিল না। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল থেকে আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিকে পুলিশকে মারধরের কথা অস্বীকার করে পম্পার পাল্টা অভিযোগ, পুলিশই তাঁর ওড়না কেড়ে নিয়েছিল। |
|
নিজের বাড়িতে সেই মহিলা। (ডান দিকে) কর্তব্যরত পুলিশের উর্দিতে
ঢেলে দেওয়া হয়েছে খাবার। ছবি: দেবাশিস রায় ও নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ সূত্রের খবর, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ধারে এক পানশালায় গানবাজনার একটি দলের কিছু যুবককে রাত ১১টা নাগাদ থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। অভিযোগ, পানশালায় গানবাজনা করার বৈধ লাইসেন্স ওই যুবকদের নেই। পুলিশের অভিযোগ, রাত ১টার কিছু পরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থানায় ঢোকেন পম্পা। অভিযুক্ত যুবকদের লক-আপে না রেখে কেন বাইরে বসিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে, তা জানতে চান তিনি। অফিসারেরা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ওই যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যদি তাঁদের গ্রেফতার করা হয়, তবেই তাঁদের লক-আপে রাখা যাবে। কিন্তু পম্পা তা মানতে চাননি। পুলিশের দাবি, ওই পানশালার মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে পম্পার পুরনো বিবাদ ছিল। তাই পানশালার বাজনদারদের ধরার খবর পেয়ে থানায় গিয়ে গোলমাল বাধান তিনি।
পুলিশ জানায়, কর্তব্যরত অফিসার ‘চিলি চিকেন’ কিনে রেখেছিলেন। অভিযোগ, টেবিল থেকে ওই প্যাকেট তুলে পম্পা ছুড়ে দেন অফিসারের গায়ে। অন্য এক অফিসার গোলমাল মেটাতে গেলে পম্পা তাঁর গলা টিপে ধরেন বলেও অভিযোগ। পুলিশ জানায়, চেয়ার-টেবিল উল্টে চিৎকার করে তিনি বলতে থাকেন, “জেনে রাখ, আমি মমতাদির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সিপি-কে বলে তোদের চাকরি খাব। জানিস আমি কে?” ওই থানার এক অফিসার বলেন, “মহিলাকে আটকাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারত!”
পুলিশ সূত্রের খবর, আধ ঘণ্টা ধরে থানার মধ্যে তাণ্ডব চালান পম্পা। বলতে থাকেন, “ওই যুবকদের লক-আপে না ঢোকানো পর্যন্ত তিনি বাড়ি যাবেন না।” রাত দেড়টা নাগাদ তিনি থানা থেকে বেরোন। এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় বলে পুলিশের দাবি। সকালে
ঘটনা ও মামলা দায়ের করার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান কর্তব্যরত অফিসার।
প্রশ্ন উঠেছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশকর্মী না থাকায় ওই মহিলাকে না হয় থানা আটক করা যায়নি। কিন্তু লালবাজার থেকে মহিলা পুলিশকর্মীদের ডেকে আনা হল না কেন? পুলিশকর্তারা এই প্রশ্নের জবাব দেননি। এ দিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ আশ্বাস দিয়েছেন, “অভিযুক্তকে শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।” পুলিশ জানায়, ওই মহিলার বিরুদ্ধে পুলিশকর্মীকে মারধর, হাসপাতাল ভাঙচুরের একাধিক অভিযোগে মামলা চলছে।
পুলিশের অভিযোগের বিষয়ে কী বলছেন পম্পা?
শুক্রবার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে নিজের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। তার চার্জশিট পুলিশ দিয়েছে কি না, তা জানতেই থানায় গিয়েছিলাম।” কিন্তু এ কথা জানতে রাত একটায় থানায় গেলেন কেন? পম্পা এর জবাব দেননি। তাঁর বক্তব্য, অভিযুক্তদের পুলিশ লক-আপে না ঢুকিয়ে ‘চিলি চিকেন’ খাওয়াচ্ছে দেখে তিনি অনুরোধ করেন, অভিযুক্তদের খাবার না দিতে। পুলিশ তাঁকে পাত্তা না দেওয়ায় তিনি এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন।
তিনি কী তৃণমূলকর্মী? পম্পার বক্তব্য, “সকলেই জানেন আমি তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী। দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল করছি।” পম্পার এই দাবি অবশ্য মানতে রাজি হননি ৪৮ নম্বর ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সুনীল সাহা। তিনি বলেন, “পম্পা দত্ত দলের কর্মী নন।” |
|
|
|
|
|