কম খরচে বেশি লাভ
এ বার ধানের ফাঁকেই সর্ষে চাষ
ধান জমিতে সর্ষে চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কালনা মহকুমায়। বিশেষত, আমন থেকে বোরো ধান লাগানোর মাঝের সময়টাই জমিতে সর্ষে লাগিয়ে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। চাষিরা জানান, এই চাষে খরচ কম, আবার একই জমিতে বাড়তি একটা ফসলও মেলে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে সর্ষে চাষের চাহিদা।
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে রবি মরসুমে কালনা মহকুমার ১০,৫০০ হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়েছিল। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২,০০০ হেক্টর জমি। এর বেশির ভাগই চাষই হয়েছে ধান জমিতে। কৃষিবিজ্ঞানে এই ধরনের চাষের নাম ‘পয়রা ক্রপিং’।
কালনায় ধান জমিতে সর্ষে চাষ শুরু হয় অবশ্য অনেক আগেই। ২০০৪ সালে। মন্তেশ্বরের মধ্যমগ্রাম, জামনা, বালুড়িয়া, পিপলা, মামুদপুর এলাকার ৫০ হেক্টর জমিতে কৃষি দফতর প্রথম‘পয়রা ক্রপিং’ পদ্ধতিতে সর্ষে চাষ করে। পরের বছর চাষে উৎসাহিত হন এলাকার আরও কিছু চাষি। চাষের এলাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১,২০০ হেক্টরে। ২০০৬ সালে এই পদ্ধতিতে চাষের এলাকা হয় ২,৫০০ হেক্টর। এরপরে অবশ্য পরপর দু’বছর ধরে চাষের এলাকা কিছুটা কমে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে মন্তেশ্বরের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ফের ব্যাপক হারে শুরু হয় ধান জমিতে সর্ষে চাষ। শুধু মন্তেশ্বরই নয়, মহকুমার আরও চার ব্লকেও ক্রমশ বিস্তার লাভ করে এই পদ্ধতিতে চাষ।
কালনার সিংরাইল গ্রামের এই খেতেও আগে ধান চাষ হত।
এখন অবশ্য সেখানে ফলছে সর্ষে। —নিজস্ব চিত্র।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আমন ধান কাটার সপ্তাহখানেক আগে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের শেষ দিকে জমিতে ছড়িয়ে দিতে হয় সর্ষে বীজ। সে সময় জমিতে ভিজে ভাব থাকায় সর্ষে অঙ্কুরোদ্গমে সুবিধে হয়। কাটা ধান জমিতে শুকোনোর মধ্যেই সর্ষেগাছগুলি প্রায় আঙুল সমান লম্বা হয়ে যায়। ধানজমিতে প্রচুর সার দেওয়া থাকায় নতুন করে সর্ষে জন্য আর সার দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। চাষের মাঝামাঝি শুধু একবার সেচ দিতে হয়। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে নিম্নচাপ অথবা অন্য কোনও কারণে বৃষ্টি হলে সে প্রয়োজনও থাকে না। শুধু বীজের দাম আর জমি থেকে সর্ষে কাটার জন্য খেতমজুরের খরচ জোগাড় করলেই ঘরে উঠবে ফসল। কালনা ১ ব্লকের সর্ষে চাষি রসিদ শেখ বলেন, “সাধারণ সর্ষে চাষের থেকে এই পদ্ধতিতে ফলন কিছুটা কমে। তবে আমন এবং বোরো চাষের মাঝে বাড়তি একটি ফসল পাওয়া যায়, এটাই বড় কথা।” তাঁর দাবি, সামান্য কিছু খরচ করে উৎপাদিত সর্ষে থেকে সংসারের ভোজ্য তেলের সমস্যা মেটে। বাড়তি যা থাকে, বাজারে বিক্রি হয়। ঘর এবং বাইরে দু’তরফের যোগান মেটায় বেশির ভাগ চাষিই উৎসাহিত হয়েছেন এই চাষে। কালনার আনুমাল এলাকার চাষি অনন্ত মণ্ডলের কথায়, “চাষে ঝামেলা কম। যা হয় তাই লাভ। তাই ধান জমিতে প্রতিবারই সর্ষে চাষ করি।”
তবে লাভ ছাড়াও এই পরা ক্রপিং পদ্ধতির চাষে কিছু সতকর্তা নেওয়াটাও জরুরি। মহকুমা কৃষি দফতরের আধিকারিকদের দাবি, এই ধরনের চাষে ভাল ফল পেতে গেলে আমনের চাষ নির্ধারিত সময়েই করতে হবে। বরং সপ্তাহখানেক আগে করলেও ক্ষতি নেই। যাতে জমিতে ধান কাটার পর সর্ষে গাছ পর্যাপ্ত শীত পায়। কারণ শীত না পেলে সর্ষে জমিতে ব্যাপক জাবপোকার সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এছাড়া ধানের জমিতে পরপর কয়েক বার সর্ষে চাষ করা হলে মাটির অম্লত্ব বেড়ে যেতে পারে বলে তাঁদের দাবি। সে ক্ষেত্রে সর্ষের জমিতে শিকড়-ফোলা রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। মহকুমা কৃষি দফতরের এক সহকারী কৃষি অধিকর্তা নিলয় কর বলেন, “পয়রা ক্রপিং পদ্ধতিতে চাষের আগে জমির মাটি পরীক্ষা করা উচিত। অম্লত্ব বেড়ে গেলে জমি চুন অথবা ডলোমাইট দিয়ে শোধন করা উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.