রাজ্যে শাসক ও বিরোধীর মধ্যে ‘সততা-দ্বৈরথ’ জমে উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে একটি টিভি চ্যানেলে প্রশ্ন তোলায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে জানিয়ে বুধবারই চিঠি দিয়েছে তৃণমূল। আবার মমতার আঁকা ছবি বিক্রি নিয়েও দলীয় সভায় সততার প্রশ্ন তোলায় মানহানির মামলা করা হবে বলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকেও বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতার বিরুদ্ধে বুদ্ধবাবু যে অসততার অভিযোগ করেছেন, তার সপক্ষে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণ দাখিল করতে না পারলে মামলা করা হবে বলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়েছেন। মমতার আঁকা ছবি কে কিনল, কত টাকায় বিক্রি হল, তা নিয়ে বুধবার মানিকতলায় দলীয় সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্তবাবুও মুখ্যমন্ত্রীর সততা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি নেত্রীর মানহানি করেছেন জানিয়ে সূর্যবাবুকে মামলার নোটিসে পাঠিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূলের মামলার হুমকির জেরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তিন দিনের ত্রিপুরা-সফরে এসেছেন বিমানবাবু। এই রাজ্যে প্রচারে এসেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুও। বিমানবাবু জানান, তিনি কলকাতা ছাড়ার আগে পর্যন্ত তৃণমূলের তরফে বুদ্ধবাবু বা সূর্যবাবু, কারও নামেই আইনি পদক্ষেপের চিঠি আলিমুদ্দিনে পৌঁছয়নি। চিঠি এলেও ওই মামলা দাঁড়াবে না বলে বিমানবাবুর দাবি। তাঁর কথায়, “এক জন প্রশ্ন করেছে, আপনি কি এক জনকে সৎ বলে মনে করেন? বুদ্ধ বলেছে, না, মনে করি না। এতে কী মামলা হবে? উকিল কী যুক্তি দেবেন?” ত্রিপুরার মান্দাইয়ে আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবুর বক্তব্য, “৪৮ ঘণ্টা কেন, ৭২ ঘণ্টাতেও ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। একটা প্রশ্নের জবাব দিয়েছে (বুদ্ধ)। এতে কী ক্ষমা চাইবে?” সূর্যবাবুর ক্ষেত্রেও মামলার হুমকিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তৃণমূল নেত্রীর সততা নিয়ে সিপিএম যে প্রশ্ন তুলেছে, তাতেই যোগ দিয়ে বিমানবাবুর আরও মন্তব্য, “সততার প্রতীক বলে বিজ্ঞাপন দিতে হবে কেন? তা হলে তো যে চোর, তাকে বোর্ডে লিখে জানাতে হবে আমি চোর! ডাকাত বা ধর্ষণকারীকেও প্ল্যাকার্ড লিখে নিয়ে ঘুরতে হবে! যে সৎ, তাকে দেখে লোকে এমনিই বুঝবে বা জানবে যে, সে সৎ।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শংসাপত্র দিয়ে বিমানবাবু বলেন, “বুদ্ধ যে সৎ, তা নিয়ে তো প্রশ্ন নেই! যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিল বা তার পরেও ছোট ফ্ল্যাটে থাকে। আগে আরও ছোট জায়গায় থাকত।”
এ দিন বুদ্ধবাবুর সততা নিয়ে দিনহাটায় রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “নিজের স্ত্রী মেয়ের নামেও উনি (বুদ্ধবাবু) এনজিও খুলেছেন সরকারি টাকা কামাবার জন্য। মমতার তো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও নেই। জেনে রাখুন, উনি মাত্র ২৫০ টাকার শাড়ি পরেন। ৬০ টাকার হাওয়াই চটি পরেন। টালির ঘরে থাকেন। যে নেত্রী সততা আদর্শ নিষ্ঠা সাহসিকতার প্রতীক, সেই নেত্রীর সমালোচনা করছেন অপদার্থ সিপিএমের নেতারা।” সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় ওই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে বুঝেই শিষ্টাচার হারিয়ে লাগাম ছাড়া কথা বলছেন তৃণমূল নেতারা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের সৎ মানুষদের এক জন।”
মমতার সততা নিয়ে বুদ্ধবাবু প্রশ্ন তোলায় ক্ষুব্ধ একদা তৃণমূলের জোটসঙ্গী এসইউসি-ও। দলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু বলেন, “আমরা বুদ্ধবাবুর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করছি। আমাদের কাছে এমন প্রমাণ নেই যে বলতে পারি, ব্যক্তিগত ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসৎ।” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও মনে করেন, “বুদ্ধবাবু হতাশা থেকে ওই কথা বলেছেন। বুদ্ধবাবুর মুখে ওই জাতীয় মন্তব্য মানায় না। তথ্যপ্রমাণ-সহ ওই মন্তব্য করলে তার একটা গুরুত্ব থাকত।” |