আবেদন পত্রে নাম থাকা সত্বেও তাঁরা কিষান ক্রেডিট কার্ড পাননি। যার জেরে এই কার্ডের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন লাক্ষা চাষিরা। অথচ এই রাজ্যে লাক্ষা চাষিদের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর এই পাঁচটি জেলায় লাক্ষা চাষ বেশি হয়। তার মধ্যে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতেই এই চাষির সংখ্যা প্রায় ২০ ও ৭০ হাজারের মতো। সারা রাজ্য ধরলে সেই সংখ্যা লক্ষাধিক হবে। বাঁকুড়ার মাওবাদী প্রভাবিত ব্লকগুলিতেও বেশ কিছু লাক্ষা চাষি রয়েছেন। রানিবাঁধের মমতা মাণ্ডি, নিয়তি মুদি বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে লাক্ষা চাষ করছি। শুনেছিলাম কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। কিন্তু পাইনি।” তাঁদের আক্ষেপ, “এই কার্ড পেলে সহজে যেমন ঋণ পাওয়া যেত, তেমনি চাষের পরিমাণ আরও বাড়াতে পারতাম।” বাঁকুড়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “শুনেছিলাম এই চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। এই কার্ড পেলে চাষিরা লাক্ষা চাষে আরও উৎসাহ পেতেন।”
সমস্যা কোথায়? বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, কিষান ক্রেডিট কার্ডের আবেদনপত্রের সঙ্গে চাষিদের জমি সংক্রান্ত খাজনার রসিদ ও পর্চার প্রতিলিপি সংযোজন করতে হয়, যা লাক্ষা চাষিদের থাকে না। কিন্তু কেন? তিনি বলেন, “পলাশ, কুল, কুসুম গাছের ডালে এই চাষ হয়। এই সব গাছ বাড়ির উঠোন, জমির আল বা পুকুর পাড়ে লাগানো যেতে পারে। তাই তাঁদের পক্ষে জমির রসিদ বা পর্চা দেখানো সম্ভব নয়।” জেলা প্রশাসনের ওই আধিকারিক জানান, এ বছরে বাঁকুড়া জেলার ৭৫০ জন লাক্ষা চাষিকে এই কার্ড দেওয়ার কথা ছিল। ৬০০ জনের আবেদন ব্যাঙ্কে পাঠানো হলেও প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকায় সেই আবেদন ব্যাঙ্ক মঞ্জুর করেনি। শুধু বাঁকুড়া জেলা নয়, রাজ্যের ৫টি জেলার কোনও লাক্ষা চাষি কিষান ক্রেডিট কার্ড পাননি।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোগ বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা আর কে মিদ্যা বলেন, “লাক্ষা চাষিদের সহজে ঋণ দিতে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবেদনপত্রে জটিলতার জেরে সেই কার্ড দেওয়া যায়নি। তবে চাষিদের বীজ লাক্ষা ও যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর জন্য সরকারের কাছে টাকার আবেদনও করেছি।” |