মনোবলে চিড় ধরবে, বলছেন প্রাক্তন কর্তারা
তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশদের অপমানসূচক মন্তব্য করে ফের বিতর্কের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি কী ভাবে জনসমক্ষে সরকারি কর্মীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। যাঁরা ২৪ ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দেখভাল করেন তাঁদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন আচরণ পুলিশের মনোবলেই চিড় ধরাবে বলেও মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশ-কর্তাদের অনেকেই। লালবাজার কিংবা ভবানী ভবনে পুলিশ-কর্তা ও নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার এটাই ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়।
বুধবার রাতে ঠিক কী হয়েছিল বইমেলায়? মুখ্যমন্ত্রী নির্ধারিত গেট দিয়ে না-বেরিয়ে অন্য গেট দিয়ে বেরোতে গিয়ে সেখানে গাড়ি না-পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কুসুমকুমার দ্বিবেদী নামে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এক অফিসারের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “আপনাদের ধরে চাবকানো উচিত।” পুরো ঘটনাটি ঘটেছে এমন একটা সময়, যখন মমতার চার দিকে অসংখ্য মানুষের জটলা।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এই আচরণের জন্য এখনও প্রকাশ্যে দুঃপ্রকাশ করেননি। তাঁর মন্তব্য নিয়ে পুলিশ মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন হলেও বৃহস্পতিবার মহাকরণে কিন্তু তিনি খোশমেজাজেই ছিলেন। দ্বিবেদীকে এ দিনও দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ে, কঠিন মুখ করে তিনি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনীতে থেকে দ্বিবেদীর মতো অফিসারেরা হাজার অপমান সত্ত্বেও কোনও মন্তব্য করতে পারেন না। তিনি তা করেননিও। কিন্তু দ্বিবেদীর যিনি অভিভাবক, সেই কলকাতার পুলিশ কমিশনারেরই বাহিনীর স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তাদের কেউ কেউ।
রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব অরুণপ্রকাশ মুখোপাধ্যায় বলছেন, এক জন সরকারি কর্মচারীকে এ ভাবে অপমান করার এক্তিয়ার কারও নেই। কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের বিবৃতি দেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। না হলে পুলিশের নিচুতলার মনোবল ভেঙে যেতে পারে। অরুণপ্রকাশবাবু বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছি। কিন্তু কোনও মন্ত্রীকে এমন কথা বলতে দেখিনি।”
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্যে পুলিশের মনোবল নষ্ট হবে। তবে, কমিশনার বা ডিজি-র বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল বলে অরুণপ্রকাশবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রসূনবাবু বলেন, “এটা তাঁরাই ঠিক করবেন।” তিনি পুলিশ কমিশনার থাকলে বিবৃতি দিতেন কিনা জানতে চাওয়া হলে প্রসূনবাবু বলেন, “কাল্পনিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কোনও কথা বলব না।”
প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা এই ঘটনার প্রতিবাদ না-করলে নিচুতলার কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। এক প্রাক্তন পুলিশকর্তার মন্তব্য, “এমন ব্যবহার পেলে কেমন লাগবে, সেটা পুলিশ কমিশনার বা ডিজি-র মতো কর্তারাই ভাল বলতে পারবেন।” একই বক্তব্য নিচুতলার কর্মীদের। তাঁরা বলছেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যদি জনসমক্ষে এমন ব্যবহার করেন, তা হলে তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে কী বার্তা যাবে, সেটা সহজেই বোঝা যায়।
কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘পরে মন্তব্য করব’ বলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তার পর সারা দিনে আর ফোন ধরেননি। এক বারও ফোন ধরেননি রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বিব্রত তাঁর দলের অনেক নেতাই। যদিও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা। রাজ্যের এক প্রবীণ মন্ত্রীর অনুরোধ, “দয়া করে আমাকে এর মধ্যে জড়াবেন না।” রাজ্য মন্ত্রিসভায় প্রাক্তন আইপিএস আছেন তিন জন। রচপাল সিংহ, হায়দর আজিজ সফি এবং উপেন বিশ্বাস। ঘটনাচক্রে তাঁরা কেউই বৃহস্পতিবার সারা দিন ফোন ধরেননি। তবে রাজ্যের আর এক প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা, বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহের মন্তব্য, “দিদি হয়তো ভালবেসেই বলে থাকবেন। তবে প্রকাশ্যে এমনটা বলা ঠিক নয়।”
আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “এ রকম কিছু শুনিনি। সংবাদপত্র মনগড়া কথা লিখেছে।” আর মুখ্যমন্ত্রীকে ধৈর্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু। আগরতলায় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু দু’বছর হতে না-হতেই অধৈর্য হয়ে গিয়েছেন! বার বার বলছি, ধৈর্য রাখুন। না-হলে খুব মুশকিল হবে।”
ধৈর্য হারানো মুখ্যমন্ত্রীর কাউন্সেলিং দরকার বলে মনে করছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর কটাক্ষ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতেই পারেননি উনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। ওঁর ধারণা, দলের লোকেদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেন, সরকারি স্তরেও করা যায়।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য অন্য প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “পুলিশকে চাবকানোর ভয় দেখালে তারা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেব।”
পুলিশের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ নিয়ে মানবাধিকার কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। এপিডিআর-এর সংগঠনের সম্পাদক ধীরাজ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য পুলিশকর্মীদের মর্যাদায় আঘাত করেছে। যে হেতু তাঁদের প্রতিবাদ করার উপায় নেই এবং কর্তারাও কিছু বলছেন না, তাই এপিডিআর মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শীঘ্রই এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসবে বলেও কমিশন সূত্রে খবর।

মুকুল রায়

এ রকম কিছু শুনিনি।
সংবাদপত্র মনগড়া কথা লিখেছে।
শঙ্খ ঘোষ

কিছু বলার নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে
আর ভাল-মন্দ কী বা বলা যায়!
প্রদীপ ভট্টাচার্য

মুকুলবাবুর নেত্রী পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাকে সাজানো বলেছিলেন।
মুকুলবাবু তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। তাই অবাক হচ্ছি না।
সূর্যকান্ত মিশ্র

উনি কী ভাবে পুলিশকে ধমকেছেন, তা
টিভিতে দেখা গিয়েছে। অথচ ওঁর দলের
নেতা নাকি দেখতে পেলেন না! মুখ্যমন্ত্রী
তো এত সাজানো দেখেছেন। মুখ্যমন্ত্রী
বলুন, এটাও সাজানো!
শুভাপ্রসন্ন

এটা সুচিন্তিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে কলুষিত
করার চেষ্টা। ওঁর সঙ্গে যাঁরাই কাজ করেন,
তাঁদের সঙ্গেই ওঁর আত্মিক সম্পর্ক।
পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে,
এ সব অমূলক ব্যাখ্যা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.