|
|
|
|
|
|
|
রঘু রাই-এর হারানো মানিক |
একাত্তরের ছবি |
চল্লিশ বছরেরও বেশি আগের কথা। পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্রোতের মতো উদ্বাস্তু মানুষের মিছিল আসছে ভারতে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত রঘু রাই। সটান চলে গেলেন বনগাঁ সীমান্তে। নিজেই বলছেন সেই উত্তেজনার কথা, ‘আই প্যাকড মাই ব্যাগস অ্যান্ড অ্যারাইভড ইন ক্যালকাটা বাই দ্য মর্নিং ফ্লাইট অ্যান্ড ড্রোভ স্ট্রেট টু যশোর রোড, লিডিং টু দ্য বর্ডার অব হোয়াট ইজ নাউ কলড বাংলাদেশ।’ তার পরে? তখনও ‘ম্যাগনাম’-খ্যাতি না পাওয়া তরুণ দেখার চোখ আর ক্যামেরা নিয়ে হাজির ছিলেন অবিরাম সেই আসার পথে। ছবি তুলেছিলেন অনেক। নিছক তথ্য ধরে রাখা, ডকুমেন্টেশন নয়, আরও এক আশ্চর্য জাদুমাখা সেই সাদা-কালোয় অতঃপর ধরা পড়েছিল অসুখ, মৃত্যু, উদ্বেগ, যন্ত্রণা আর অসহায়তার নানা ছবি। শুধু তাই নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনির অভিযানের সঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। বিপদ মাথায় নিয়েও সেই মুক্তি -অভিযানের বিরল কিছু মুহূর্ত ধরা পড়েছিল তাঁর ক্যামেরায়। |
|
কিন্তু সাদা-কালোয় ধরে রাখা স্বাধীনতার যুদ্ধ আর স্বাধীন আনন্দের আশ্চর্য সেই মুহূর্তগুলি এত কাল ছিল অন্ধকারে। গত চার দশক ধরে সেগুলি হারিয়ে গিয়েছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন রঘু। সম্প্রতি ভুলে যাওয়ার ডার্ক রুম থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ছবিগুলি। তারই এক অনবদ্য অ্যালবাম বাংলাদেশ: দ্য প্রাইস অব ফ্রিডম (নিয়োগী বুকস, ১৪৯৫.০০)। ‘দ্য রিফিউজিস’, ‘ইট ওয়াজ আ ওয়ার’ আর ‘রিবার্থ: অ্যামিড ব্লাডশেড’ তিন ভাগে বিভক্ত বইটির ভূমিকা লিখেছেন আর এক আলোকচিত্রী যিনি নিরন্তর কাজ করে চলেছেন বাংলাদেশ নিয়ে, শহিদুল আলম। ছোট্ট একটি ভূমিকায় ছবিগুলির ইতিহাস আর বাংলাদেশের জন্মের পিছনে ইন্দিরা গাঁধীর ভূমিকার কথা লিখেছেন রঘু রাই। তার সঙ্গে আছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জেকবের একটি একান্ত লেখাও যেখানে জেনারেল মানেকশ-র কথা আর যুদ্ধক্ষেত্রের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ধরা পড়েছে। এ বইমেলায় থিম বাংলাদেশ-এর সেরা উদ্যাপন বোধ হয় এই বই-ই। সঙ্গে তারই দু’টি ছবি।
|
শহরের স্মৃতি |
একটার পর একটা পুরনো বাড়ি ভেঙে মাথা তুলবে বহুতল, কলকাতার খুব চেনা ঘটনা এটা। হয়তো কোনও বাড়িতে একটা অপূর্ব জানালা ছিল। সেটা এক দিন ঠেলাগাড়ি চেপে চলে যাবে বিস্মৃতির দেশে। একডালিয়ায় এমনই একটা জানালা আর একটা দরজা চোখে পড়ে তাঁর। খোঁজখবর করে, বহু টেলিফোনের পর সাড়ে তিন হাজার টাকায় কিনে ফেললেন সেটি। বেশ কিছু ঘটনাপ্রবাহ পেরিয়ে, তাদের ঠাঁই হল ফ্ল্যাটে। জানালার জায়গায় নয়, ঘরের দেওয়ালে। একটুকরো পুরনো কলকাতা ঢুকে পড়ল নতুন বাড়িতে। নিজের জীবনের এমনই টুকরো টুকরো গল্প দিয়ে কলকাতার উপাখ্যান সাজিয়েছেন অমিত চৌধুরী। বহু পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক, ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপকও বটে। কলকাতার সঙ্গে তাঁর দেখা-না-দেখায় মেশা সম্পর্ক। ২০০৯-১১, তিনি আবিষ্কার করেছিলেন আরও এক কলকাতাকে দ্রুত বদলে যেতে থাকা শহর কলকাতা। পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত হল সেই স্মৃতিকথা, ক্যালকাটা: টু ইয়ার্স ইন দ্য সিটি (৫৯৯.০০)।
|
বাংলার কিংবদন্তি |
বর্ধমানের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা দেবীর বালিকার রূপ ধরে শাঁখা পরার বৃত্তান্ত সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার কল্যাণে সুপরিচিত। কিন্তু ক’জন জানি ছাতনার বাসুলি, বরাকরের কল্যাণেশ্বরী, বহরমপুরের কাছে বিষ্ণুপুরের কালীকে নিয়েও একই কাহিনি প্রচলিত! বাংলার প্রতিটি অঞ্চলে এমন কত কাহিনি বহমান, কে তার খোঁজ রাখে। খোঁজ রেখেছেন শীলা বসাক, লোকসংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে তাঁর স্বচ্ছন্দ পরিক্রমায় এর আগে পেয়েছি বাংলার নকশি কাঁথা-র মতো গবেষণাগ্রন্থ। এ বার তিনি উপহার দিলেন বাংলার কিংবদন্তি (আনন্দ, ২৫০.০০), দুই বাংলার গ্রাম-গ্রামান্তরের লোকশ্রুতির বিপুল সংকলন।
|
ব্রাত্য |
ছক-বাঁধা নাটকে কোনও দিন আটকে থাকেননি তিনি, ব্রাত্য বসু। নানা প্রেক্ষাপট, নতুন নাট্যভাষা, নতুনতর আঙ্গিকের খোঁজে তাঁর দীর্ঘ নাট্যযাত্রা। অশালীন, অরণ্যদেব, চতুষ্কোণ, উইঙ্কল টুইঙ্কল, ভাইরাস এম, কৃষ্ণগহ্বর, রুদ্ধসঙ্গীত, সুপারিকিলার, দর্জিপাড়ার মর্জিনারা পুনরাবৃত্তিহীন সেই যাত্রার ইতিহাস ব্রাত্য (দীপ) প্রকাশ হল রবিবার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের হাতে, বইমেলায়। নাট্যকারের নানা সাক্ষাৎকার, নাট্য সমালোচনা এবং নাট্যকারের বাইরেও সামগ্রিক মানুষটির সত্তা দু’মলাটে ধরতে চেয়েছেন সম্পাদক শোভন গুপ্ত। সে দিনই সপ্তর্ষি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হল ব্রাত্য বসুর থিয়েটার-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন থিয়েটার নিয়ে।
|
গৌড়ের ইতিবৃত্ত |
প্রাচীন বাংলার নানা ‘রাজধানী’ সম্পর্কে লোকশ্রুতি যতটা, পাথুরে প্রমাণ তত নেই। মধ্যযুগে একটা শহর কিন্তু দীর্ঘ দিন এই গৌরব ধরে রেখেছিল। মালদহ জেলার গৌড় নিয়ে গবেষণা কম হয়নি, তবু দুই মলাটে আধুনিক বীক্ষার অভাব ছিল। সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং এ শহরে প্রত্নচর্চার সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান, তাদের মুখপত্র ‘প্রত্নসমীক্ষা’র গ্রন্থাকারে প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যায় সেই অভাব অনেকটাই মিটল। গৌড়/দি মিডিভ্যাল সিটি অব বেঙ্গল সির্কা ১৪৫০-১৫৬৫ (৮০০.০০) সংকলনের ১৪টি নিবন্ধে, ৫টি বড় মানচিত্রে আর বহু রঙিন ও সাদাকালো ছবিতে গৌড়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব, এমনকী গৌড়ের পাথরে কলকাতার সেন্ট জন্স চার্চ তৈরি বা হেনরি ক্রেটনের গৌড়-অনুসন্ধান সবই উঠে এসেছে। বইমেলায় তথ্য-সংস্কৃতি-র স্টলে রয়েছে ওদের অন্য প্রকাশনাও (বাংলার কাঠের কাজ, বাংলার কুটির, নির্মলকুমার বসু, হিতেশরঞ্জন সান্যাল, সরসীকুমার সরস্বতীর প্রবন্ধ সংকলন)।
|
আমি নরেন |
দারিদ্রের সঙ্গে নিয়ত লড়াই করে চলা তরুণটির টেবিলে থাকত বিবেকানন্দের ছবি। মিশনারি কলেজে বই কেনার জন্য পাওয়া অনুদানে ছাত্রটি কিনেছিল স্বামী বিবেকানন্দের পত্রাবলি। এ ভাবেই মণি ভৌমিকের তারুণ্যের স্বপ্ন আর সংগ্রামে জড়িয়ে ছিলেন বিবেকানন্দ, আরও স্পষ্ট করে বললে নরেন থেকে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার ইতিহাস। বিখ্যাত এই বাঙালি বিজ্ঞানী এ বার উপন্যাসের আকারে লিখলেন আমি নরেন: বিদেশে বিবেকানন্দ (অনুলিখন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, পত্র ভারতী)।
|
অনুপস্থিত |
সাড়ে তিন দশকে এই প্রথম, বইমেলায় ‘প্রতিক্ষণ’ নেই। আছে শুধু স্মৃতিটুকু। পূর্ণেন্দু পত্রীর হাতে সাজানো স্টল, ছড়ানো জায়গা জুড়ে কয়েকটি শিল্পিত বই, লাগোয়া আড্ডাঘরে উষ্ণ আড্ডা। মজার মজার ঘটনা ঘটত এ স্টলে। যেমন, এক বার ঘোষণা হল, চটপট সব থেকে অসম্ভব বইটার নাম যিনি বলতে পারবেন তিনি পুরস্কার পাবেন। এক জন এসে সটান বললেন, ‘ছোটদের কামসূত্র’। কিন্তু কেন এ বার রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে এই অনুপস্থিতি? প্রকাশনার কর্ণধার প্রিয়ব্রত দেব বলছেন, “মিডিয়া-স্টলের নানাবিধ চটকের সামনে দীর্ঘ লাইন গত বছর থেকেই আমাদের স্টলের দরজা আটকে দিচ্ছিল। গিল্ডকে বার বার জানিয়েও ফল হয়নি। তাই এ বার ঠিক করলাম যাব না। বই-বিক্রিটা শুধু মেলার উপরেই নির্ভর করে তা আমি বিশ্বাস করি না।” এ বার প্রতিক্ষণ প্রকাশ করল পেন্টিংস অব অবনীন্দ্রনাথ টেগোর-এর (সম্পা. আর শিবকুমার) সুলভ সংস্করণ। ছবি বা লেখা এক রেখে এমন সংস্করণ প্রকাশের ভাবনাও বইপাড়ায় বিরল।
|
মা |
|
প্রশাসনিক প্রধানের দায়িত্ব, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, বিতর্ক সামলেও কবিতাকে ছুটি দেননি তিনি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ণিমা, রুটি, পাথর, শয়তান, সোনার বাংলা, ভাইরাস, বয়স, জন্মাইনি তাঁর লেখা এমনই তিরিশটি কবিতা এ বার বইয়ের পাতা থেকে উঠে এল সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। আবহ তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। আহির মিউজিক-প্রকাশিত সিডিটির নাম ‘মা’।
|
বই পড়া |
“জীবনের গভীর উপলব্ধির জন্য বই অপরিহার্য নয়। এশিয়ার অনেক মহাপুরুষ ছিলেন নিরক্ষর। ...বই পড়ে সংসারের কোনও উপকার করেছি এমন মিথ্যা অহংকার আমাদের নেই। নিজেরও উপকার করি না, শুধু আনন্দ পাই” এই আশ্চর্য সৎ স্বীকারোক্তিটি ‘পড়ার নেশা’ প্রবন্ধে, চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমন ২৬টি রচনায় বই পড়া, না-পড়া নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি রবীন্দ্রনাথ থেকে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, সুকুমার রায়, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত পেরিয়ে শ্রীপান্থ, সুনীল, শঙ্খ, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়রা— বই যথা সংকলনে (সম্পা: অরুণ ঘোষ, অবভাস, ২০০.০০)। বিচল হরফে ছাপা প্রথম বই থেকে বইয়ের বিবর্তন ধারার সন্ধানী চৈতালী দত্ত’র বই ভাবনা-য় (ভাষা ও সাহিত্য, ১৫০.০০) ‘কলকাতাবাসীর পাঠ-স্পৃহা’ প্রসঙ্গে পরিসংখ্যানভিত্তিক ক্ষেত্রসমীক্ষা বেশ শ্রমসাধ্য প্রয়াস।
|
শিক্ষার উদ্যোগ |
উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বাংলায় শিক্ষাবিস্তারে একদিকে মিশনারি উদ্যোগ (শ্রীরামপুর, বর্ধমান), অন্য দিকে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা, হিন্দু পাঠশালা, জনাই স্কুল। পাঠ্যবইয়ের জন্য ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি, পাঠশালার জন্য ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি। সর্বোপরি বিদ্যাসাগর। এই নিয়েই বিনয়ভূষণ রায়ের দীর্ঘ গবেষণার ফসল ‘শিক্ষাসার’ থেকে ‘বর্ণপরিচয়’ (চিকিতুষী প্রকাশনী, ২৫০.০০)। অজস্র খুঁটিনাটি তথ্য তুলে এনেছেন তিনি। আবার ডেভিড হেয়ারের জীবন ও কর্মকাণ্ড এবং তাঁর স্মৃতিরক্ষার নানা উদ্যোগের বিবরণ জীর্ণ পত্রপত্রিকা থেকে উদ্ধার করে প্রসঙ্গ ডেভিড হেয়ার (এশিয়ান পাবলিকেশন, ২৫০.০০) সংকলন করেছেন বিনয়বাবু। উনিশ ও বিশ শতকের শিক্ষা নিয়ে সাময়িকপত্র থেকে ৬৯টি রচনা সংকলন করেছেন অপূর্ব সাহা, সেকালের শিক্ষা/ উজ্জ্বল উদ্ধার (আলাপ, ৪৫০.০০) বইয়ে। সুমুদ্রিত বইটি ঔপনিবেশিক শিক্ষার অমূল্য দলিল।
|
রাত-প্রভাতের গান |
আমার ছেলে আর্জানকে গল্প শোনানোর ইচ্ছের সঙ্গে ছিল আমার দেখা কোনও একটা ঘণ্টা আর পাহাড়ের ছবি। তা থেকেই এ-গদ্যের জন্ম... বলছিলেন মৌসুমী ভৌমিক। তাঁর নতুন বই রাত-প্রভাতের গান-এ (সপ্তর্ষি, ৬০.০০) উদাস পাহাড় আর এক আশ্চর্য ঘণ্টাধ্বনি ধুয়োর মতো ঘুরে ফিরে, ‘কোথা থেকে যেন... ঝর্না বেয়ে নেমে আসে।’ ছবি ফুটিয়ে গল্প বলেন মৌসুমী, তাতে লেগে থাকে না-শোনা গানের গন্ধ। কথন রঙিন হয়ে ওঠে বইটির পাতায় পাতায় শিল্পী তওফিক রিয়াজ-এর আঁকা ছবিতে। বাচ্চা-বুড়ো সকলের জন্যেই এ-বই।
|
বঙ্কিম ও ভারতচন্দ্র |
সাহিত্যের নিরিখ ছাড়াও ১৭৫তম জন্মবর্ষে বঙ্কিমচন্দ্রকে বিচার করতে হবে সমসময়ের প্রেক্ষিতে। তেমন ভাবনা থেকেই কোরক-এর (সম্পা: তাপস ভৌমিক) ‘বিশেষ বঙ্কিমচন্দ্র সংখ্যা’, প্রবীণ-নবীনের কলমে ঋদ্ধ। এতে ‘বঙ্কিম-সমসাময়িক বিভিন্ন ব্যক্তিত্বর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কর নিরিখে তৎকালীন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে তুলে ধরতে চেয়েছি’, জানিয়েছেন সম্পাদক। সঙ্গে বঙ্কিমের পড়াশোনা থেকে চাকরি, তাঁর ব্যক্তিত্বের নানান দিক, বঙ্কিম চর্চা। এবং এই সময় (সম্পা: অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়) ‘রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের ত্রিশতজন্মবর্ষ বিশেষ সংখ্যা’-য় বিস্তারিত ও অনুপুঙ্খ আলোচনায় ভারতচন্দ্রের মূল্যায়ন। ‘অষ্টাদশ শতকে... সর্বব্যাপী অবক্ষয়ের মধ্যে ভারতচন্দ্রই যুগক্রান্তিকে ধরতে পেরেছিলেন।’ সম্পাদকীয় মন্তব্য।
|
স্মরণীয় কথা |
হাকিম চটে চোরকে বললেন, এই নিয়ে তুই পাঁচ বার আমার সামনে এলি, তোর লজ্জাসরম নেই? চোরের উত্তর: হুজুর প্রমোশন না পেয়ে বদলি না হলে আমি কী করব? গল্পটি মুজতবা আলির। অসুস্থ রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতন থেকে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে আনা হল, পথ্য চিড়ের মণ্ড। কলকাতায় পৌঁছলে এক জন জিজ্ঞাসা করলেন, পথে কষ্ট হয়নি তো? কবির উত্তর: এই তো সারা পথ এদের মুণ্ডু খেতে খেতে এলাম। বরণীয় ব্যক্তিদের মজার কথা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লিখেছেন প্রয়াত শিশুসাহিত্যিক ননীগোপাল চক্রবর্তী। এই সব লেখারই সংকলন বরণীয়দের স্মরণীয় কথা (এম সি সরকার)।
|
ক্ষুধার্ত বাংলা |
১৯৪৩-এর মন্বন্তরে আনুমানিক ৩৫ লক্ষ মানুষ মারা যান অবিভক্ত বাংলা-য়। সাহিত্য ও শিল্পকর্ম, স্মৃতিচারণ, সংবাদ-প্রতিবেদন, দলীয় কর্মসূচি, রিপোর্ট, নানা গবেষণায় ধরা আছে সেই ইতিহাস। মন্বন্তরের সে সব বিশ্লেষণ বিলোপ বা বিস্মরণের বিরুদ্ধেই মধুময় পাল সম্পাদনা করেছেন ক্ষুধার্ত বাংলা (দীপ, ৪০০.০০)। চিত্তপ্রসাদ গোপাল হালদার সুভাষ মুখোপাধ্যায় জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র সোমনাথ হোরের সঙ্গে এ কালের বিশিষ্টরাও ঋদ্ধ করেছেন সংকলনটিকে।
|
রানী চন্দ |
‘আমার এই মেটে ঘরই ভালো।’ বললেন বটে কবি, কিন্তু ‘শ্যামলী’র পর ‘পুনশ্চ’ও হল। কবির এই খেয়ালি ভাবনার সাক্ষী রানী চন্দ। রবীন্দ্র-অবনীন্দ্রের কত নিভৃত অনুভূতির সাক্ষী রানী, লিখেছেন ‘সাধারণ মানুষই তো ছিলাম... অসাধারণ ছিল আমাদের প্রাণের অফুরন্ত উল্লাস...।’ কী লাবণ্যময় কলম ছিল তাঁর, ছিলেন চিত্রকরও। তাঁরই রচনা থেকে তাঁর সৃষ্টিময় বেঁচে-থাকার কথা লিখেছেন কবিতা চন্দ: রানী চন্দ/ জীবন, কুড়োনোকথায় (সূত্রধর, ১২৫.০০)। ৯ ফেব্রুয়ারি বইচিত্র-য় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ-বই প্রকাশ, বলবেন রানী চন্দের গদ্য নিয়ে স্বপন চক্রবর্তী, তাঁর ছবি-আঁকা নিয়ে সুশোভন অধিকারী, সর্বোপরি তাঁকে নিয়ে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।
|
কলকাতা নিয়ে |
এ শহরের প্রতিটি কোণে লুকিয়ে রয়েছে অজস্র ইতিহাস। আছে আলোকচিত্র, ছবি, রেখাচিত্র। ‘পুরশ্রী’র সম্পাদক অরুণকুমার রায় উদ্যোগী এ সবেরই সংকলনে। বইমেলায় পুরসভা প্রকাশ করছে মাদাম বেলনসের ছবির বই, শিল্পী সমীর বিশ্বাসের তুলি-কলমে কলকাতা, আলোকচিত্রে কলকাতা, মনোগ্রাফ অব আর এন মুখার্জি বা মন্মথনাথ ঘোষের ফরগটন সিটিজেনস অব ক্যালকাটা, অশোককুমার রায়ের ঠিকানা কলকাতা: ঐতিহ্যময় বাড়ি। এ শহরে সংগ্রহশালার সংখ্যাটিও কম নয়। দীর্ঘ দিন ধরে রেখা ও লেখায় এমন তথ্য সংগ্রহ করেছেন গোপী দে সরকার। তারই প্রথম পর্যায় কলকাতার সংগ্রহালয় প্রকাশ পাচ্ছে আগামী কাল বইমেলায় কলকাতা পুরসভা প্যাভিলিয়নে।
|
সিপাহির কথা |
সুবেদার সীতারামের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন শোভন বসু, অসামান্য সেই আত্মকাহিনির বঙ্গানুবাদ করে। লেফটেনান্ট-কর্নেল নরগেট ১৮৭৩-এ সীতারামের মূল লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রথম প্রকাশ করেন। সম্প্রতি উইলিয়াম ডালরিম্পল তাঁর রিটার্ন অব আ কিং বইয়ে সীতারামের বিবরণী অনেকটাই ব্যবহার করেছেন। এ বার দুষ্প্রাপ্য নরগেট-সংস্করণটি সম্পাদনা করলেন আনন্দ ভট্টাচার্য (ফ্রম সিপয় টু সুবেদার, কুনাল বুকস, ৭৫০.০০)। দীর্ঘ ভূমিকায় তিনি এই বিবরণীর নানা দিকে আলোকপাত করেছেন। বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহের প্রভাব কতটা পড়েছিল, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। দুর্লভ তথ্য খুঁজে আনন্দ দেখিয়েছেন, প্রভাব বড় কম ছিল না। তাঁর সম্পাদিত দি রিভোল্ট অব ১৮৫৭ অ্যান্ড বেঙ্গল/ সিলেকশনস ফ্রম কনটেম্পোরারি নিউজপেপার্স, (প্যাপিরাস, ৩০০.০০) ঢাকা নিউজ, বেঙ্গল হরকরু অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান গেজেট, ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া, হিন্দু পেট্রিয়ট ইত্যাদির সংবাদ-সংকলন, আর রেবেলিয়ন ১৮৫৭/ আ সিলেকশন (রেডিয়ান্স, ৩৯৫.০০) কে, বল, অ্যালেন, ও’ম্যালি-র লেখার গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ।
|
কবির নীরা |
বইয়ের নাম কবির নীরা (পারুল)। কিন্তু কবির চোখে নয়, বাচিক শিল্পী, ভাস্কর আর চিত্রীর চোখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা কেমন তারই সংকলন। এক পৃষ্ঠায় লেখা, এক পৃষ্ঠায় চিত্র অথবা ভাস্কর্য। রবীন মণ্ডল, বিপিন গোস্বামী, তাপস সরকার, চারু খান, রামকুমার মান্না প্রমুখর ভাবনায় নানা নীরা গৌতম বাগচী সম্পাদিত এ বইয়ে। এ দিকে এ বার বইমেলায় প্রকাশিত হল এসএমএসে জন্মানো কবিতার সংকলন কবিতার এসএমএস ভালবাসার হয় না শেষ (কমলিনী প্রকাশন)। কবি মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশাসূত্রে হিসেবনিকেশই তাঁর কাজ, কিন্তু তারই ফাঁকে ছুটন্ত গাড়িতে বসে এসএমএস-এ কবিতা লিখে পাঠাতেন বন্ধুদের। প্রধানত তাঁদের উৎসাহেই মোবাইল থেকে ছাপার অক্ষরে আসা কবিতা, কিংবা কবিতাকণাগুলির।
|
বিস্ফোরক |
‘জীবনের শেষের দিকে যামিনী রায় অনেক ছবি নিজে আঁকতে পারতেন না, ওঁর পুত্র পটলবাবু আঁকতেন, শিল্পী কখনও কখনও টাচ আপ করতেন, কখনও সেটা না-করেও সই করে দিতেন।’ বিস্ফোরক এই বক্তব্য যামিনী-পৌত্র দেবব্রত রায়ের। ‘মাসিক বসুমতী’ পত্রিকার সাম্প্রতিক যামিনী রায় সংখ্যায় পত্রলেখা নাথ তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সেখানে এসেছে মেদিনীপুরের এগরার শিল্পী বসন্ত জানার কথাও, যাঁর ছবি কিনে নিজে সই করে বিক্রি করতেন যামিনী রায় এমন অভিযোগ উঠেছিল। এ ছাড়াও নানা আলোচনা, নরেশ গুহর চিঠি ও শিল্পীর আঁকা ছবি।
|
মনমেজাজ |
মানব মিত্রকে মনে আছে? ‘দূরের জানালা’ লিখতেন ‘দেশ’ পত্রিকায়? ওটা অবশ্য ছদ্মনাম, আসল নাম, তখন সুমন চট্টোপাধ্যায়, অধুনা কবীর সুমন। ‘আজকাল’-এ লেখা তাঁর দীর্ঘ কলাম মনমেজাজ (কমলিনী) এ বার প্রকাশিত হল বই হয়ে। ছোট ছোট হেডপিস, ছবিতে সাজানো বইটি দৃশ্যত বড় যত্নে নির্মিত। এ দিকে বাংলা বইয়ের নির্মাণকথা নিয়ে বেরিয়েছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের মুখপত্র ‘পুস্তকমেলা’র বিশেষ সংখ্যা।
|
বেতার-স্পন্দন |
তখনও রাত কাটেনি, অন্ধকার, আমাদের জাগিয়ে দেওয়া হল... ’, ভোররাতে ঘুম ভেঙে রেডিয়োতে মহালয়া শোনার অভিজ্ঞতা বলছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রেডিয়োটা ছিল তাঁর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কাকার, কিন্তু ওটা হয়ে উঠেছিল বাড়ির সকলের, এবং বাড়ির অলংকার বা অহঙ্কারও। ‘বেতারে নিজের গলা শোনানোর ইচ্ছে তখন থেকেই’, বলতে-বলতে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি ফেলে আসা কালের দিকে, তখনকার রেডিয়ো-বৃত্তান্ত যেন ইতিহাস হয়ে উঠছিল তাঁর বক্তৃতায়। দ্বাদশতম প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতা, বিষয়: বেতার স্পন্দন, ২৯ জানুয়ারি সন্ধেয় গোর্কিসদনে। উদ্যোগে প্রণবেশ সেন স্মারক সমিতি, সহায়তায় রাশিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড কালচার ও আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব। সত্যজিতের ‘অপু’ হওয়ার আগে রেডিয়োতে ঘোষকের চাকরিটা পেলেও তিনি ছিলেন মনোনীত দ্বিতীয় প্রার্থী, প্রথমজন নেননি বলেই পেয়েছিলেন। সেই প্রথমজন অনিল চট্টোপাধ্যায়, তাঁর সঙ্গে কিছুকাল পরেই সত্যজিতের ‘দেবী’তে অভিনয় করবেন, তা কি তখন জানতেন সৌমিত্র! রেডিয়োতে থাকার সুবাদে সেখানে শুদ্ধ শীলিত লাবণ্যময় বাংলা বাচিক অনুশীলনের ঋণ স্বীকার করলেন, বিশেষত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র জয়ন্ত চৌধুরী বা নীলিমা সান্যাল সম্পর্কে মুগ্ধতা জানালেন, তারপর বললেন ‘আজকাল বাংলা বলাটা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে, এটা খারাপ লাগে।’ শেষে ছিল শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন।
|
|
|
|
আশিতে পা |
লাট্টু আর ডাংগুলি খেলতে মাঠে ভিড় জমানোর দিন হঠাৎ বদলে গেল গ্রামোফোন রেকর্ডের গৃহকোণে। চুঁচুড়ার ডাফ মিশন হাইস্কুলের ছাত্রটির রবিবারের তখন সঙ্গী উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খান, ডি ভি পালুস্কর, হেমন্ত-ধনঞ্জয়-সতীনাথ। স্কুল থেকে কলেজে ঢুকে টুকটাক গান গাওয়া শুরু জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের। প্রথাগত শিক্ষার শুরু ১৯৫৩-য় সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। বাসা কলেজ স্ট্রিটের এক মেসবাড়ি। সেখানেই বিকেলের আড্ডাধারী দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দিনেন চৌধুরী। তখন গানের জলসায় জটিলেশ্বরের পরিচিতি সতীনাথের গাওয়া হিট গান গেয়ে। তখনই এক অবসরের দিনে লেখা, ‘বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায়, বিনা কারণে’। গানটা রেকর্ড হয় অনেক পরে, ১৯৬৮-তে। তার পর থেকে জটিলেশ্বর বললেই অধিকাংশের মনে পড়ে ওই গানটা। কিন্তু বাংলা গানের ভুবনে ওঁর আরও অনেক উপহার আছে। ‘বনের পাখি মনের মতো হয় না’, মধুসূদনের ‘কৃষ্ণকুমারী’র নৃত্যগীতিনাট্যরূপ দিতে গিয়ে লেখা অনেক গান। সুধীন দাশগুপ্তের সুরে গেয়েছেন বহু জনপ্রিয় গান। তবে খুব বেশি রেকর্ড করেননি, তিনি আজও কিছুটা আড়ালেরই শিল্পী। আড়ালেই আশিতে পা রাখলেন বাংলা কাব্যসঙ্গীতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। সেই উপলক্ষে ৬ ফেব্রুয়ারি সংবর্ধনার আয়োজন করেছে ‘মিউজিক’। রিজেন্ট এস্টেট সরকারি আবাসনের কাছে অঙ্কুর সভাঘরে ওই সন্ধ্যায় নিজের কথা বলবেন, গাইবেন জটিলেশ্বর। তাঁর গান গাইবেন শ্রীকান্ত আচার্য, চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত প্রমুখ। |
|
|
|
|
|
|