নতুন বাংলা বছরে দুই বাংলার মধ্যে আর একটি মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হচ্ছে। নতুন ট্রেনের উদ্বোধন যাতে পয়লা বৈশাখেই হতে পারে, তার চেষ্টা চলছে বলে রেল মন্ত্রকের ইঙ্গিত। এটিকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে খুলনা পর্যন্ত চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এখন কলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত যে মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করে, সেটি যায় নদিয়ার গেদে সীমান্ত ধরে।
রেল ও বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রের খবর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেসের ব্যাপারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তার পরে দু’দেশের রেল, বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র-কর্তারা বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে একাধিক বার বৈঠক করেন। সেখানে নীতিগত মতৈক্যের পরে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ভারতীয় বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা যাচ্ছেন। নয়াদিল্লির সচিব মহলের খবর, সেখানে তিনিও দ্বিতীয় মৈত্রী সম্পর্কে বাংলাদেশের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। |
কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসের সূচনায়। —ফাইল চিত্র |
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী রবিবার বলেন, “নতুন মৈত্রী এক্সপ্রেস চালানো নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। সৌহার্দ্যের বন্ধন আরও দৃঢ় করতে আমরাও মনে-প্রাণে চাইছি, ট্রেনটি চলুক। পরিকাঠামোও রয়েছে। এখন শুধু বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতির অপেক্ষা।” দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) এনামুল হক চৌধুরীর বক্তব্য, “আখাউড়া-আগরতলা, দিনাজপুর-রাধিকাপুর, মালদহ-শিবগঞ্জ লাইনেও যাত্রিবাহী ট্রেন চালানোর কথা হচ্ছে। তবে আপাতত অগ্রাধিকার পাচ্ছে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত হয়ে কলকাতা-খুলনা মৈত্রী এক্সপ্রেস।”
নতুন মৈত্রীকে নববর্ষের প্রথম দিনেই চালু করার তোড়জোড় চলছে। এ জন্য সম্প্রতি দিল্লিতে দু’দেশের রেল-কর্তারা আর এক দফা বৈঠক করেছেন। তাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) শেখ জাহিরুল ইসলাম ও ভারতীয় রেল বোর্ডের অতিরিক্ত সদস্য (ট্র্যাফিক) দেবীপ্রসাদ পাণ্ডে উপস্থিত ছিলেন। যাত্রীদের ঝকমারি কমানো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মৈত্রী-যাত্রায় এখন কী রকম ঝক্কি পোহাতে হয়? |
রেল-সূত্রের খবর: এখন কলকাতা স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসে এক দিকের যাত্রা সম্পূর্ণ হতে ৮-৯ ঘণ্টা লেগে যায়। অভিবাসন ও শুল্ক পরীক্ষার জন্যই দু’দেশের সীমান্তে তিন-চার ঘণ্টা থেমে থাকতে হয়। ওই সময়টা কমানোর চেষ্টা চলছে। “স্বরাষ্ট্র ও শুল্ক দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে ট্রেনেই যাবতীয় চেকিং মিটিয়ে ফেলা হয়।” বলেন রেল প্রতিমন্ত্রী। এক রেল-কর্তার মন্তব্য, “অভিবাসন ও শুল্ক চেকিংয়ের হয়রানির সুবাদে যাত্রীদের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস নিয়ে কিছুটা অনীহা তৈরি হচ্ছিল। দু’দেশের অভিবাসন দফতর অনেক বার বৈঠক করে কিছুটা সময় অবশ্য কমিয়েছে। তাতে যাত্রী খানিকটা বেড়েছে।”
এ বার সময় আরও ছাঁটলে মৈত্রী এক্সপ্রেসে যথেষ্ট যাত্রী হবে বলে আশা রেলের। রেলকর্তারা বলছেন, ট্রেনেই চেকিং চুকিয়ে ফেলা গেলে কলকাতা থেকে খুলনা প্রায় ৯৫ কিমি পাড়ি দিতে পাঁচ-সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। বনগাঁ থেকে যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত যে রেলপথ ধরে মৈত্রী ছুটবে, সেই লাইনে এখন শুধু মালগাড়ি চলে। একাত্তরের যুদ্ধের পর থেকে লাইনটি বন্ধ ছিল। ২০০১-এর জানুয়ারিতে শিয়ালদহের তদানীন্তন ডিভিশন্যাল রেলওয়ে ম্যানেজার সুভাষরঞ্জন ঠাকুরের উদ্যোগে সেটি মেরামত করে ফের সচল করা হয়েছে। সুভাষবাবু বলছেন, “নতুন মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতা ছেড়ে যশোর ও খুলনা স্টেশনে থামলে অনেক যাত্রীর সুবিধা হবে। অভিবাসন ও শুল্ক তল্লাসি দ্রুত মিটলে যাত্রীও বাড়বে।”
দুই বাংলার মৈত্রী-বন্ধন এ ভাবে আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছেন দু’দেশের কর্তারা। |