|
|
|
|
‘মাও-শূন্য’ ঝাড়গ্রামে চড়ছে জমি-বাড়ির দাম |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
কিষেনজির মৃত্যুর পরে ক্রমেই থিতিয়েছে জঙ্গলমহলে মাওবাদী সক্রিয়তা। আতঙ্ক কেটেছে মানুষের। তারই জেরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ঝাড়গ্রাম শহরের জমি-বাড়ির বাজার। এক বছর আগেও যেখানে বাড়ি বেচে অন্যত্র চলে যাচ্ছিলেন বাসিন্দারা, সেখানেই এখন জমি-বাড়ির দাম চড়ছে। তৈরি হচ্ছে বহুতল। সুযোগ বুঝে দালালচক্রও সক্রিয়। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি দরের চেয়ে অনেক বেশি দামে জমি বিক্রি হচ্ছে। তাই শহরে জমির দরের উর্ধ্বসীমা বাড়াতে অর্থ (রাজস্ব) দফতরে সুপারিশ করেছে ঝাড়গ্রামের নিবন্ধন ও মুদ্রাঙ্ক শুল্ক অধিকার বিভাগ।
শহরের প্রাণকেন্দ্র রঘুনাথপুরে বছর খানেক আগে যে জমির দাম কাঠা প্রতি দু’-তিন লাখ টাকা ছিল, সেই জমিই এখন কাঠা প্রতি পাঁচ-ছয় লক্ষে বিক্রি হচ্ছে। গাইঘাটা, ভরতপুর ও শিরিষচকে ২০ হাজার টাকা কাঠার জমি বেড়ে ৭০-৮০ হাজার টাকা হয়েছে। শহরের প্রত্যন্ত শ্রীরামপুরেও লাফিয়ে বাড়ছে জমির দাম। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফ্ল্যাটের দামও। শহরের প্রোমোটার গণেশ দাস বলেন, “বছর খানেক আগে ১৩০০ টাকা প্রতি বর্গফুটের ফ্ল্যাটে খদ্দের মিলছিল না। এখন দাম বেড়েছে ফ্ল্যাটের। তবু ২২০০ টাকা প্রতি বর্গফুট দরে আগাম ফ্ল্যাট বুকিং হয়ে যাচ্ছে।” ঝাড়গ্রাম পুরসভার সিপিএম চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারেরও বক্তব্য, “বাইরের লোকজন এখনও সে ভাবে ঝাড়গ্রামে বাড়ি করে থাকতে আসছেন না। তবে, গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন পেশার মানুষ শহরে এসে বসবাস করতে চাইছেন। ফলে, জমি কেনাবেচার হার বেড়েছে। শহরে দশটি বহুতল তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া দু’টি রিয়েল এস্টেট সংস্থা কমপ্লেক্স করতে চেয়ে পুরসভার কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।”
কয়েক বছর আগেও ছবিটা ছিল আলাদা। লালগড় আন্দোলন পর্বে ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের মাঝামাঝি জঙ্গলমহলে দাপিয়ে বেরিয়েছে মাওবাদী ও জনগণের কমিটি। তখন ঝাড়গ্রাম ছেড়েছিলেন অনেকেই। অনেকেই বেশ কমে জমি-বাড়ি বেচে দেন। যেমন, অবসরপ্রাপ্ত এয়ারফোর্স-ইঞ্জিনিয়ার তারকনাথ বসু। ঝাড়গ্রামে ৬ কাঠা জমিতে একতলা বাড়ি ২০১০ সালে বেচে মুম্বই চলে যান তারকনাথবাবু। কলকাতাবাসী প্রবীণা জয়শ্রী ঘোষও ২০১১ সালে তাঁর দু’কাঠা জমি-সহ একতলা বাড়িটি জলের দরে বেচে দেন। হাইস্কুলের শিক্ষিকা মিলন শর্মা পুরকায়স্থ থাকতেন ঝাড়গ্রামে ভাড়াবাড়িতে। পরে শহরে ফ্ল্যাট কেনেন। কিন্তু তাও বেচতে হয় তাঁকে। মিলনদেবীর কথায়, “অশান্তির কারণে বাকি জীবনটা আর ঝাড়গ্রামে থাকার ঝুঁকি নিইনি। ২০০৯ সালে অর্ধেক দামে ফ্ল্যাট বেচে দুই ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় আসি।”
কিষেনজির মৃত্যুর পর ছবিটা পাল্টায়। ঝাড়গ্রামে বসতবাড়ি তৈরির প্রবণতা বাড়ে। মাওবাদী আতঙ্ক কমায় ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসাও আগের তুলনায় অনেকটা চাঙ্গা হয়েছে। পর্যটকের দল ফের ঝাড়গ্রামমুখো হচ্ছেন। এই বিষয়টিও জমি-বাড়ির দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। আর রয়েছে প্রশাসনিক দিক থেকে ঝাড়গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই মহকুমাকে পৃথক জেলা হিসেবে গড়ে তোলার তোড়জোড় চলছে। আলাদা পুলিশ জেলা হয়েছে ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রাম পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস পুরপিতা পেশায় দলিল-লেখক বিজয়প্রকাশ মাহাতোর মতে, “ঝাড়গ্রাম জেলা হলে তখন জেলা-সদরে জমির দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” শহর ঝাড়গ্রাম আধুনিকও হয়ে উঠছে। মেন রেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। সেই কাজ শেষ হলে শহরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। মাওবাদী আতঙ্ক কমার সঙ্গে এই সব কারণের সমাপতনেই জমি-বাড়ির বাজার চাঙ্গা হয়েছে ঝাড়গ্রামে।
|
লালগড়ের রাস্তায় উদ্ধার ল্যান্ডমাইন
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জঙ্গল রাস্তা থেকে ল্যান্ডমাইন উদ্ধার হল লালগড়ে। শনিবার সকালে খাসজঙ্গল যাওয়ার রাস্তায় ওই মাইন দু’টি পাওয়া গিয়েছে। একটা সময় জঙ্গলমহল থেকে মাইন উদ্ধার ছিল নিত্যকার ঘটনা। তবে কিষেনজির মৃত্যুর পরে এই এলাকায় মাওবাদী সক্রিয়তা ক্রমেই থিতিয়েছে। কমে গিয়েছে অস্ত্রশস্ত্র, মাইন উদ্ধারের ঘটনাও। এ দিন যে ল্যান্ডমাইন দু’টি উদ্ধার হয়েছে, তা-ও বেশ কিছু দিনের পুরনো বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ওই রাস্তায় দু’টি ল্যান্ড মাইন পাওয়া গিয়েছিল। আমরা সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছি।” এ দিন সকালে লালগড়ের ভেপুরা থেকে খাসজঙ্গল যাওয়ার রাস্তায় দু’টি ল্যান্ডমাইন পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্টিলের ক্যানে তার সংযুক্ত ল্যান্ড মাইন দু’টির কিছুটা অংশ মাটিতে পোঁতা ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় যৌথ বাহিনী। বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা পৌঁছে মাইন দু’টি নিষ্ক্রিয় করে দেন। |
|
|
|
|
|