|
|
|
|
যৌন নির্যাতন রোধের অর্ডিন্যান্স |
অনেক কিছুই নেই, ক্ষুব্ধ
নারী আন্দোলনের কর্মীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
|
ধর্ষণ আইন নিয়ে তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স জারি করে কৃতিত্ব নিতে চেয়েছিল মনমোহন সরকার। কিন্তু নারী-আন্দোলনের কর্মীরা মোটেই এতে খুশি নন।
বেশ কিছু সংগঠন আজ অভিযোগ তুলেছে, সরকার নিজের সুবিধা মতো বেছে বেছে বর্মা কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেছে। কমিটির রিপোর্টে সার্বিক ভাবে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সমস্যা সমাধানের কথা দেখানো হয়েছিল। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে তৎপরতা প্রমাণ করতে গিয়ে তা অগ্রাহ্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে এই অর্ডিন্যান্সে সই না করার অনুরোধ জানিয়েছেন আন্দোলনের নেত্রীরা।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে এস বর্মার সুপারিশের ভিত্তিতেই অর্ডিন্যান্স তৈরি হলেও বেশ কিছু সুপারিশ তার মধ্যে স্থান পায়নি। যেমন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে তাঁদের নির্বাচনে লড়ায় নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছিলেন বর্মা। সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা)-র সংশোধন, সেনা-জওয়ানদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মামলার সাধারণ আইনে বিচারের সুপারিশ ছিল। সে সব নিয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি কেন্দ্র। আজ দিল্লিতে কবিতা কৃষ্ণণ, বৃন্দা গ্রোভার, সুনীতা ধর, মধু মেহরার মতো নারী-অধিকার কর্মীরা যুক্তি দিয়েছেন, হাজার হাজার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিলেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ রুখতে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সরকার। কবিতা কৃষ্ণণ এ দিন বলেন, “বর্মা কমিটির রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক ছাড়াই সরকার যে ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করছে, তা অগণতান্ত্রিক। সরকারকে অধিকাংশ সুপারিশ এড়িয়ে যেতে দেখেও আমরা স্তম্ভিত।” প্রাক্তন আইপিএস কিরণ বেদীও দাবি করেছেন, এই অর্ডিন্যান্স বর্মা কমিটির রিপোর্টকে লঘু করে দিয়েছে। বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, অর্ডিন্যান্সটি জারি হওয়ার পরেই তাঁরা প্রতিক্রিয়া জানাবেন। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে যে তাঁরা সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন, সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সিপিএম অবশ্য এই অর্ডিন্যান্সকে পুরোপুরি খারিজ করছে। তিন সপ্তাহ পরেই যখন সংসদের অধিবেশন বসতে চলেছে, তখন অর্ডিন্যান্স জারির প্রয়োজন কী ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পলিটব্যুরো। পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাটের বক্তব্য, বর্মা কমিটির রিপোর্টে পুলিশ-প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। সেই মূল প্রশ্ন থেকে সরে গিয়ে শুধুই শাস্তি বাড়িয়ে নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরথের জবাব, শাস্তি কঠোর হলেই অপরাধীদের মনে ভয় বাড়বে। তাঁর বক্তব্য, “সরকার বর্মা কমিটির অধিকাংশ সুপারিশই মেনে নিয়েছে। বাজেট অধিবেশনেই এই অর্ডিন্যান্স সংসদে পাশ করানো হবে।” স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ মনে করিয়েছেন, এই অর্ডিন্যান্সই যে চূড়ান্ত আইন, এমনটা নয়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বর্মা কমিটির গোটা সুপারিশ খতিয়ে দেখছে। সেই অনুযায়ী ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন হবে। গত কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যৌন নির্যাতন বিরোধী অর্ডিন্যান্সে সিলমোহর বসায়। এই নিয়ে আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে। দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতা তরুণীর পরিবার অবশ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তরুণীর ভাই জানিয়েছেন, সরকার যে ভাবে ধর্ষণে অপরাধীদের ফাঁসির বিধান করেছে, তা প্রশংসনীয়। তাঁর বোনের সঙ্গে যারা অপরাধ ররেছে, তাদের সকলের যাতে ফাঁসি হয়, তার জন্য ধর্ষণের মতো অপরাধে অভিযুক্তকে ১৬ বছর বয়সেই প্রাপ্তবয়স্ক বলে গণ্য করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। বর্মা কমিটির সুপারিশে অবশ্য বয়স কমানোর বিরোধিতাই করা হয়েছিল। অর্ডিন্যান্সেও এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রের বক্তব্য, নাবালক বিচার আইনের সংশোধনের সময় বিষয়টি মনে রাখা হবে। |
|
|
|
|
|