হার্ডওয়্যার ক্লাস্টার (শিল্পগুচ্ছ) গড়তে কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে রাজ্য সরকার।
আর্থিক টানাপোড়েনের জেরে এমনিতেই ভাঁড়ে মা ভবানী দশা রাজ্যের। কোনও শিল্পের পরিকাঠামো গড়তে এক লপ্তে মোটা অঙ্কের সংস্থান করা এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে শক্ত। এই পরিস্থিতিতে হার্ডওয়্যার ক্লাস্টার গড়ার জন্য কেন্দ্রের হাত ধরতে চাইছে তারা। ব্যবহার করতে চাইছে দিল্লির অর্থ। ঠিক যেমনটা করা হয় বিভিন্ন দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচীর ক্ষেত্রে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, নৈহাটি ও ফলতায় ‘ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার’ তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত করেছে রাজ্য। সেখানে কেন্দ্রের ‘ইলেকট্রনিক সিস্টেম অ্যান্ড ডিজাইন ম্যানুফ্যাকচারিং’ নীতির সদ্ব্যবহার করতে আগ্রহী তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এ জন্য প্রথমে বেছে নেওয়া হচ্ছে নৈহাটির শিল্পতালুককে। শিল্পোন্নয়ন নিগমের সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে ৫০ একর জমির ব্যবস্থা প্রায় পাকা করে ফেলেছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর।
কেন্দ্রীয় নীতি অনুযায়ী, এই ক্লাস্টার তৈরির জন্য আগে ৫০ থেকে ১০০ একর জমি জোগাড় করতে হবে রাজ্যকে। ক্লাস্টার-পিছু ৫০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্য ছাড়াও শরিক হিসেবে থাকবে একটি বণিকসভা। গবেষণামূলক কাজকর্মের জন্য যুক্ত থাকবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও। |
অর্থাৎ, রাজ্য জমি জোগাড় করতে পারলে, প্রাথমিক বিনিয়োগ করবে কেন্দ্র। আর লগ্নিকারী নিয়ে আসার দায়িত্ব বর্তাবে বণিকসভার উপর। রাজ্য সরকারি সূত্রে খবর, নৈহাটির প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকটি বণিকসভার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতে সফট্ওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার শিল্পে লগ্নি টানার উপরেও জোর দিয়েছে রাজ্য। তাই এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের টাকা ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার সুযোগ কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না তারা। যে কারণে বিশেষজ্ঞ সংস্থার উপর প্রকল্প পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারাই তৈরি করবে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট। সরকারি সূত্রে খবর, চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই কেন্দ্রের কাছে সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
রাজ্যের আশা, কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পেতে সমস্যা হবে না। কারণ, এই শিল্পে বিনিয়োগ টানতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রও। আন্তর্জাতিক বাজারে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের মাত্র এক শতাংশ ভারতের দখলে। তাই সেই দখল বাড়াতে স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহী দিল্লি। অবশ্য অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, এ রাজ্যে সফট্ওয়্যার পার্ক তৈরিতে লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরে পিছিয়ে গিয়েছিল কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, সফট্ওয়্যারে লগ্নি টানার দৌড় দেরিতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই ভুল হার্ডওয়্যার শিল্পে শোধরাতে চেষ্টা করেছিল বাম সরকার। এই সরকার আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে সৌর বিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্রপাতিকেও নিয়ে এসেছে হার্ডওয়্যার শিল্পের তালিকায়। নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতেও এই শিল্পকে বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে। তবুও এখনও এই শিল্পে দেশের বাজারে রাজ্যের ভাগ প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৫-এর মধ্যে দেশে এই শিল্পজাত পণ্যের বাজার হবে ১৯.২৪ লক্ষ কোটি টাকার। তাই তা ধরতে এখন থেকেই জোর কদমে দৌড় শুরু করতে চাইছে রাজ্য। সোনারপুর হার্ডওয়্যার পার্ক দ্রুত লগ্নিকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার উপযুক্ত করতে ওয়েবেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টানাটানির মধ্যেও মঞ্জুর হয়েছে বরাদ্দ টাকা। এর পর কেন্দ্রীয় অর্থে ক্লাস্টার গড়তে পারলে বড় লগ্নি টানা সহজ হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। |