জঙ্গিপুরের ভাগীরথী সেতুর নীচে বেআইনি নির্মাণের ফলে বারো বছরের পুরনো সেতু দিয়ে পারাপারের উপরে প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলে গিয়েছে। ওই সেতুটিকে তাই বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জঙ্গিপুর প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা ও পুর কর্তারা সেতুর অবস্থা খতিয়ে সেতুর নীচে গড়ে ওঠা সমস্ত বেআইনি নির্মাণ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেতু সংলগ্ন এলাকা ঘুরে অরবিন্দ কুমার বলেন, “পূর্ত দফতর জানিয়েছে সেচুর নীচে অবৈধ নির্মাণ গড়ে ওঠায় তার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ছে। সেতুর নিকাশি ব্যবস্থাও অকেজো হয়ে পড়েছে। দু-দিকের অ্যাপ্রোচ রোড এবং সেতুর নীচে যাঁরা দোকান করেছিলেন তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশে কাজ না হলে দু’ দিন সময় দিয়ে সব অবৈধ নির্মাণ প্রশাসনই ভেঙে দেবে।”
ফুলতলা থেকে সাগরদিঘির বাসস্ট্যান্ড ও রঘুনাথগঞ্জের বাসস্ট্যান্ডের দু’ পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণে ফলে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যানজট হচ্ছে। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। জেলা প্রশান সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের যানজট মুক্ত করতে ওই রাস্তা অন্তত ১০ ফুট চওড়া করা হবে। সে ক্ষেত্রে ওই অবৈধ নির্মাণই মূল বাধা। গত শুক্রবার এ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। সব দলের নেতারাই এ নিয়ে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।” পূর্ত দফতরের জঙ্গিপুরের সহকারি বাস্তুকার রাজেন্দ্রকুমার মণ্ডল বলেন, “সেতুর ভারসাম্য ঠিক রাখতে সব থামের উপর এক বিশেষ রাবারে প্লেট বসানো রয়েছে। সেতুর প্রতিটি গার্ডারের মধ্যে কয়েক মিলিমিটার ফাঁক থাকে। ভারি যান চলাচলের সময় সেতুটি সুরক্ষিত রাখতেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু বেআইনি নির্মাণের ফলে সেই ব্যবস্থাটাই টলে গিয়েছে।”
সেতুর নীচে জবরদখলকারীদের অন্যতম আমান শেখ বলেন, “সেতু তৈরির অনেক আগে থেকেই ওই এলাকায় অনেকে ব্যবসা করছেন। তাঁদের অনেককে পুরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স, বিদুত্ দফতর থেকে বৈদ্যুতিক সংযোগ পেয়েছেন। তাবলে আমাদের ওই অনুমোদন দেওয়া হল কেন?” জবরদখলকারীরা সংখ্যায় প্রায় চারশো। ওই জরদখলকারীদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল কেন? তদানীন্তন পুরপ্রধান সিপিএমের মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য জানান তাঁর আমলে কোনও বেআইনি ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তবে, বর্তমান পুরপ্রধান, ওই দলেরই, মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “বছর কয়েক আগে শর্তসাপেক্ষে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল ঠিকই তবে এঁদের স্পষ্ট বলেও দেওয়া হয়েছিল সেতুর কোনও ক্ষতি হয় এমন কোনও পাকাপোক্ত নির্মাড় করা যাবে না। সেই সঙ্গে এক দিনের নোটিশে তাদের উত্খাত করা হতে পারে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”
স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর বিকাশ নন্দ ধরেছেন এই জায়গাটাতেই। তিনি বলেন, “প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা সেতু চালু হয় ২০০১ সালের ডিসেম্বরে। ১২ বছরের মধ্যেই সেতুর তলায় কয়েকশো পাকা নির্মাড় গড়ে উঠেছে পুরসভার মদতে। এখন ও সব বলে তো লাভ নেই। সিপিএমের মদতেই ওরা বসেছে ওখানে। এখন উঠতে বললে হবে কেন?” |