বিডিও অফিসের আসবাব ভাঙচুর করে সেখান থেকে সরকারি নথি লোপাটের অভিযোগে তিন তৃণমূল কর্মী গ্রেফতারের ঘটনায় বুধবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল চাঁচল। ধৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই দিন সকাল থেকে চাঁচল-১ বিডিও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল সমর্থকরা। এ দিকে থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করায় ক্ষুব্ধ বিডিও সহ দফতরের কর্মী ও আধিকারিকরা নিরাপত্তার দাবিতে অফিসের বাইরে গিয়ে সারা দিন ধর্নায় বসে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলের পাঁচশো কর্মী সমর্থক চাঁচল-১ ব্লক অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। তাঁরা ডেপুটেশন দিতে যান। ওই সময় বিশেষ কাজে বিডিও মালদহ শহরে ছিলেন। যুগ্ম বিডিওকে ডেপুটেশন দিতে দফতরে ঢুকেই তাঁরা ভাঙচূর শুরু করে বলে অভিযোগ। পর পর ছয়টি ঘরে ভাঙচুর চলে। তছনছ করা হয় সরকারি নথি। সন্ধ্যার সময় বিডিও চাঁচলে পৌঁছে দফতরের পরিস্থিতি দেখে জেলাশাসককে জানান। এর পরে রাতে চাঁচল থানায় তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মুজিবর রহমান সহ ১১ তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রাতে তিন জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে। প্রতিবাদে বুধবার তৃণমূলের কর্মী সমর্থক ব্লক সভাপতি মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখালে উত্তেজনা চরমে ওঠে।
ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে দলের নেতা কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সামজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান ১০০ দিনের কাজের টাকা চুরি করেছে। জেলাশাসক বিডিওকে পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দিই। তার পরেও বিডিও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। ওই কারণে দলের কর্মীরা মঙ্গলবার ব্লক অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখায়। বদনাম করার জন্য কংগ্রেসের কিছু সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষরা ব্লক অফিস ভাঙচুর চালিয়ে সরকারি নথি লুঠপাঠ করে। অথচ বিডিও আমাদের দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেন।”
চাঁচল ১ বিডিও ভূপ্রভা বিশ্বাস বলেন, “মঙ্গলবার ডেপুটেশন দেওয়ার নামে যারা ব্লক অফিসে হামলা চালিয়ে সরকারি নথি লোপাট করেছে তাদের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। বেশি কিছু বলতে পারব না।” চাঁচল ১ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সভাপতি এনতাজ হোসেন বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা ব্লক অফিসের ৬ ঘরে ভাঙচুর চালায়। নথি লোপাট করেছে।”
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তৃণমূল ব্লক সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, “মঙ্গলবার মহানন্দপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান ও ডাকবিভাগের এককর্মীর বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়ের নালিশসহ ১২দফা দাবিতে ডেপুটেশন দিতে ব্লকে যাই। সেই সময় কংগ্রেসের কিছু নেতা কর্মীরা অফিসে ভাঙচুর চালায়।” কংগ্রেস অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তৃণমূল কর্মীরা ফের বিডিও অফিস ঘেরাও করলে বিডিও, যুগ্ম বিডিও সহ দফতরের কর্মী আধিকারিকরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। বিডিএ আধিকারিকদের নিয়ে সিড়িতে বসে পড়েন। কর্মীরা সামনে বসে নিরাপত্তার দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই অবস্থান আন্দোলন চলে। কর্মীরা নিরাপত্তার দাবিতে অবস্থান চালিয়ে গেলেও তা জানেন না চাঁচলের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “এত বড় ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কেউ বলেনি। বিডিও মঙ্গলবার ডেপুটেশন নেওয়ার কথা বলে না-থেকে ঠিক করেননি। যারা ভাঙচুর করেছেন তাঁরাও ঠিক করেননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।” পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে কর্মীরা যে অভিযোগ করেছে তা অস্বীকার করেছেন মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল। তিনি এ দিন বলেন, “তিন জনকে ধরা হয়েছে। অন্যদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।” |