ঠিক যেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সেটাই যেন ফিরে ফিরে আসে।
কথায় কথায় যে ভাবে তাঁকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলা হয়, লিখতে চেয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে। সেই লেখাই আবার পাকিস্তানের মাটি থেকে নানাবিধ মন্তব্য টেনে আনল। আরও এক বার রাজনীতি ও কূটনীতির নিশানা হয়ে উঠলেন শাহরুখ খান। আবারও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তাঁকে বলতে হল, “আমি ভারতীয় হিসেবে গর্বিত। এখানে আমার নিরাপত্তার কোনও অভাব নেই।”
উত্তেজনার পারদ আগেই খানিকটা চড়ে ছিল। রবিবারই হাফিজ সইদ প্রস্তাব করেছিলেন, শাহরুখ বরং পাকিস্তানেই চলে আসুন! হাফিজ সইদ জামাদ-উদ-দাওয়া প্রধান, ২৬/১১-র মুম্বই সন্ত্রাসের অন্যতম চক্রী। পাক জঙ্গি নেতা এ দেশের চিত্রতারকাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন!! ভুরু কুঁচকোতে শুরু করেছিল অনেকেরই। এ বার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিকের মন্তব্যের জেরে সেই উত্তেজনাই বেড়ে গেল আরও কয়েক গুণ। সোমবার ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মালিক শাহরুখ খানের নিরাপত্তার জন্য সওয়াল করেছেন। মিষ্টি সুরে ভারতকে বিঁধে মালিক বলেন, “শাহরুখ জন্মসূত্রে ভারতীয়, তিনি ভারতীয়ই থাকতে চাইবেন। কিন্তু আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ করব, তাঁকে যেন উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়! ভারতের সব ভাইবোনেদের যাঁরা শাহরুখ সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলছেন তাঁদের মনে করিয়ে দেব, শাহরুখ এক জন চিত্রতারকা!”
এমন মোক্ষম চিমটিতে স্বভাবতই ক্রুদ্ধ ভারত। কংগ্রেস থেকে বিজেপি, সকলেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপি আবার ধুয়ো তুলেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে সম্প্রতি ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ নিয়ে মন্তব্য করাতেই ভারতকে এ হেন কথা বলার সুযোগ পেল পাকিস্তান। |
মুম্বইয়ে মঙ্গলবার। ছবি: পি টি আই |
‘মাই নেম ইজ খান’ ছবির মুক্তি ঘিরে বিক্ষোভ থেকে শুরু আইপিএল-এ পাক ক্রিকেটার নেওয়া শাহরুখের বিরুদ্ধে বারবারই স্লোগান তুলেছে মৌলবাদীরা। ক’দিন আগে একটি পত্রিকায় সেই অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন শাহরুখ। ‘খান’ পদবিধারী হওয়ার সুবাদে কী ভাবে বারংবার তাঁর দেশপ্রেম প্রশ্নের মুখে পড়েছে, সে কথা অকপটে বলেছেন তিনি। শাহরুখ তাঁর লেখায় কারও নাম করেননি, এ দেশের কোনও বিশেষ ঘটনা-মুহূর্তের কথাও উল্লেখ করেননি। শুধু বলেছেন, ছুতোয়নাতায় তাঁকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে মিছিল বেরিয়েছে এই দেশে, যে দেশই কি না তাঁকে সুপারস্টার হিসেবে প্রভূত ভালবাসা দিয়েছে।
শাহরুখের এই লেখা নিয়েই নড়ে বসেছে সকলে। পাকিস্তানকে এক হাত নিয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি এ দিন বলেন, “নিজেদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামান মালিক। দেখুন পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা কেমন আছেন।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ জানিয়েছেন, ভারত নিজের নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে সক্ষম। মালিকের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, “ওঁকে নিজের দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে বলুন।” কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ অলভি-র পাল্টা তোপ, “পাকিস্তান তো মেহেদি হাসানকেই উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারেনি। আমাদের কী করণীয় তা শেখাতে হবে না।” বিজেপি-র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “এ দেশের সংখ্যালঘুরা যথেষ্টই সুরক্ষিত। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী ভারতের বিষয়ে মন্তব্য না করে নিজের দেশের কথা ভাবুন।” সেই সঙ্গে বিজেপির মতে, খামোখা ভারতের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে অভিযুক্ত করে পাকিস্তানের হাতে ভারত-বিরোধী মন্তব্যের অস্ত্র তুলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দেই।
তবে ভারত সরকারি ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ করছে না। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমের কাছে যা বলছেন, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। তবে সরকারি ভাবে সে দেশের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তাই এ নিয়ে কোনও চটজলদি প্রতিক্রিয়ার প্রশ্ন উঠছে না।” মুম্বই পুলিশ আলাদা করে ঘোষণা করে দিয়েছে, শাহরুখের নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক নেই। বরং তাঁর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শাহরুখের উপর থেকে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা কিছু দিন আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। হাফিজ সইদ মুখ খোলার পরেই গত রবিবারই সেই নিরাপত্তা আবার মোতায়েন হয়েছে।
এই গোটা বিতর্কে শাহরুখের নিজের কী বক্তব্য? তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, হাফিজ সইদের কথা শুনেই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন শাহরুখ। এ দিন মালিকের কথার বিরুদ্ধে তাঁকে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে হয়েছে। যে প্রবণতার বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছিলেন, সইদের কথা সেই প্রবণতাকেই উস্কে দিয়েছে।
“নিজের দেশের চেয়ে পড়শি দেশের প্রতি আমার আনুগত্য বেশি, এ রকম অভিযোগ বারবার করা হয়েছে আমার প্রতি”, সখেদে লিখেছিলেন শাহরুখ। এখন পড়শি দেশ থেকে ক্রমাগত তাঁকে নিয়ে নানা মন্তব্যে আবারও একই পরিস্থিতি জন্ম নিচ্ছে। বিজেপি ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছে, শাহরুখ নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিন! শাহরুখ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, “আমার লেখার ভুল মানে করা হচ্ছে। যাঁরা অযাচিত উপদেশ দিচ্ছেন, তাঁদের বলছি, ভারতে আমরা খুবভাল আছি।”
খান-পদবীধারী মাত্রেই যে জঙ্গি নয়, সেটা তুলে ধরতে শাহরুখ ‘মাই নেম ইজ খান’ সিনেমা করেছিলেন। সেই সিনেমার প্রচারে গিয়েই মার্কিন বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
এ বার নিজের দেশে শাহরুখকে নিরন্তর প্রমাণ দিতে হচ্ছে, মাই নেম ইজ খান অ্যান্ড আই অ্যাম আ পেট্রিয়ট!
|
কমল হাসন অভিনীত ও পরিচালিত বিশ্বরূপমের মুক্তি ঘিরে অনিশ্চয়তা কাটল। তামিলনাড়ুতে সিনেমাটির মুক্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। সিনেমায় একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে কয়েকটি সংগঠন। পরে সিনেমাটির মুক্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তামিলনাড়ু, কর্নাটক-সহ কয়েকটি রাজ্য।
|
|
|
অনন্যা: মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে বিদ্যা বালন। ছবি: পিটিআই |
|
|