এ বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যখন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) না গড়ার জেদে অটল থেকে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলছে, তখন ভারতের লক্ষ্মীকে হাতছানি দিতে সীমান্তের ধারেই এসইজেড গড়তে নামল ওপার বাংলা। জমি সমস্যা কাটিয়ে দেশের সাতটি ডিভিশনের সাতটি এলাকায় এসইজেড গড়ছে ঢাকা। এর তিনটিই ভারতের লাগোয়া। বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে আজ বৈঠকে এ কথা জানিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মহম্মদ কাদের বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতও এই এসইজেড-এ কারখানা গড়ে সুবিধা নিক। ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’-এ যোগ দিতে আগরা থেকে এসেছিলেন কাদের। আজ আনন্দ শর্মার সঙ্গে বৈঠক সেরে পৌঁছেছেন দিল্লি। জানাচ্ছেন, ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ককে পোক্ত করতে ‘সফল বৈঠক’ হয়েছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব তিনি ভারতকে দিয়েছেন, কিছু সহায়তাও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছে।
তিস্তা চুক্তি বা ছিটমহল হস্তান্তর নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কে যথেষ্ট তিক্ত হয়েছে। এই পরিবেশে মনমোহন সরকার বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নে সহায়তা করে সম্পর্কে অক্সিজেন জোগাতে তৎপর। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন বহু বছর ধরে শুল্ক-জটে আটকে ছিল। মনমোহন সিংহ ইতিমধ্যেই সমস্ত বাধা তুলে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের বাণিজ্য ভারতের থেকে অনেক বেশি। সম্প্রতি কলকাতায় এসে কাদের বলেছিলেন, ভারত যে বাংলাদেশ থেকে কম আমদানি করে, এর জন্য তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বুঝতে হবে দু’দেশের পণ্যের চাহিদা প্রায় একই এবং ভারত স্বনির্ভর হওয়ায় তার সব কিছুই তারা পর্যাপ্ত উৎপাদন করে। তা হলে বিদেশি মুদ্রা খরচ করে তারা কেন আমদানি করবে? উত্তর পূর্বের নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্য ভাল বাজার পেতে পারে। কারণ ওই এলাকায় ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে সিমেন্ট বা অন্য সামগ্রী পৌঁছতে যা খরচ, তার চেয়ে কম খরচে বাংলাদেশ থেকে পণ্য যেতে পারে। এ দিন আনন্দ শর্মার সঙ্গে বৈঠকে কাদের বলেন, দু’দেশের আমদানি-রফতানির সিংহ ভাগটাই হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে। কিছু বাণিজ্যিক লেনদেন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও। তার কারণ উত্তর-পূর্বেই বাংলাদেশের স্বাভাবিক বাজার হতে পারে। কাদের কলকাতায় বলেছিলেন, রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি ভারতের বেসরকারি বিনিযোগ টানার উপরেই জোর দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকায় বাংলাদেশের ‘বিশেষ মর্যাদা’র কারণে সেখানে উৎপাদিত ভারতীয় পণ্য বিনাশুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে এই সব উন্নত দেশের বাজারে যেতে পারবে। চিন, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ বেশ কিছু দেশ এই সুযোগে বাংলাদেশে কারখানা গড়তে আসছে। ঢাকা চায় ভারতও সুযোগের সদ্ব্যহার করুক। আর সে জন্য তিনটি এসইজেড করা হচ্ছে ভারতের গা ঘেঁসে। কাদের বলেন, আর সমস্ত বিষয় নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও দেশের স্বার্থে যে বিদেশি লগ্নি চাই, এ নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধী ও শাসক দল একমত। এ নিয়ে বিশেষ বিরোধিতা নেই। সরকারেরও কোনও ছুৎমার্গ নেই। তবে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, আলোচনার মাধ্যমে যা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী আজ জানিয়েছেন, “আনন্দ শর্মাকে জানিয়েছি, এখানকার বিশেষ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করুক ভারতীয় সংস্থা, বিনিযোগ করুক। বাংলাদেশে কারখানা গড়তে এগিয়ে আসুক তারা। ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।” |