|
উত্তরে ঐতিহ্য, দক্ষিণে নতুনত্ব |
চা-প্রীতি |
এই চায়ের গন্ধে সেই সকালবেলাটা মনের মধ্যে ফিরে আসে। তোমার মনে পড়ে?’
চায়ের গন্ধ আর সকালবেলার সেই আদি-অনন্ত যোগসূত্র ধরা পড়েছে বুদ্ধদেব বসুর গল্প ‘একটি সকাল ও একটি সন্ধ্যা’য়। নিজে চা খেতে ভালবাসতেন। তাই বুঝি তাঁর লেখায় ঘুরে ফিরে এসেছে চা-বৃত্তান্ত। তবে কলকাতার সকাল আর চা যেন মিলেমিশে একাকার। শীতের সকালে শহর জুড়ে একই ছবি রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে চা ফুটছে, বেঞ্চে জটলা। চা-কে ঘিরেই কলকাতার দিন শুরু। যেমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে, ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তিনটে ছুঁলেই ট্রাম কোম্পানির লোকজন আর শ্মশানযাত্রীদের জন্য খুলে যায় বাগবাজার স্ট্রিটের ‘লক্ষ্মীনারায়ণ কেবিন’। দুধ-লেবু-লিকার সবই মেলে। লাল মেঝে-পুরনো কড়িকাঠ-প্রায় অন্ধকার ঘরটির বয়স পেরিয়েছে একশো। সভা করতে এসে নেতাজিও নাকি খেয়েছিলেন এই দোকানের চা। |
|
কর্মচারী যুধিষ্ঠির করণের দাবি, এখানকার চা খেয়েছেন রাজীব গাঁধী থেকে শুরু করে শচীনদেব বর্মণ, মান্না-হেমন্ত সিদ্ধার্থশঙ্কর, তাবড় সেলিব্রিটি। বাগবাজারেই বছর চুয়ান্নর ‘ভোলানাথ কেবিন’-এর ইউএসপি ফ্লেভার। ফোটান চা বিক্রি করে না সুকিয়া স্ট্রিটে শ্রীমানি মার্কেটের ১০২ বছরের ‘রবিদার চা’। উত্তরের চা-চিত্রে যদি সাবেকিয়ানা, তবে দক্ষিণে রীতিমত এক্সপেরিমেন্ট। কলকাতাকে প্রথম মিল্কমেড-চায়ের সঙ্গে পরিচয় করান নাকি সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এর দিলীপদা। দক্ষিণের দোকানে দার্জিলিং-অসম-নীলগিরির পাশে রয়েছে কাশ্মীরি কাওয়া, মশলা চা ইত্যাদি। তবে খাঁটি দুধ-চায়ের কদর এসএসকেএম সংলগ্ন বলবন্ত সিংহ ইটিং হাউস-এও (সঙ্গের ছবি)। এখানে চা তৈরি হয় ফুটন্ত জলের ওপর। চা-খোরদের জন্য রয়েছে বড় আকারের পোয়াপাত্তি চা। একদা বিজ্ঞাপনে দেখা যেত শরীর ভাল রাখতে চা খান। এখনও ঘুরে ফিরে চা-এর সঙ্গে জুড়ে যায় স্বাস্থ্য-কথা। চিরযৌবনা কলকাতার তো বয়স বাড়ে না। তাই বুঝি কলকাতাবাসী মগ্ন চা-প্রেমে। যেমন নরেন্দ্রনাথ মিত্র লিখেছিলেন,— ‘ভোরের রোদ লাগা
চায়ের পেয়ালা
তামাটে পানীয়
কবোষ্ণ রূপালি ধোঁয়া ওঠে
ঠোঁটে।’ (‘যৌবন’)
|
মোহিত-স্মরণ |
‘আদ্যন্ত কবি মোহিতের নির্যাস মিশে গেছে তাঁর নাটকে, সিনেমায়... তিনি নিজের সৃষ্টিকে ছড়িয়ে দিতে পারেন স্বপ্নের জগতে। মোহিতের এই প্রথাগত নিয়ম ভাঙার ব্যাপারটাই আমাকে আকর্ষণ করত সব থেকে বেশি।’ মৃণাল সেনের মুগ্ধতা মোহিত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। এমত বঙ্গজনেরা লিখেছেন তাঁকে নিয়ে, রঙ্গপট নাট্যপত্র-এর (সম্পা: তপনজ্যোতি দাস) ‘মোহিত চট্টোপাধ্যায় স্মরণসংখ্যা’-য়। এ পত্রের তিনিই ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা-উপদেষ্টা, নানা স্মৃতি সমীক্ষায় ধরতে চাওয়া হয়েছে কবি বন্ধু অনুরাগী চিত্রকর অভিনেতা নির্দেশক নাট্যকার প্রাবন্ধিক গবেষক বা এককথায় স্রষ্টা মোহিতকে। রয়েছে তাঁর নিজের লেখা নাটক নিবন্ধাদি, জীবন ও কর্মকৃতি।
|
একা কুম্ভ |
|
প্রথাগত শিক্ষার প্রথম ধাপের পর আর এগোনোর সুযোগ পাননি সদানন্দ পাল। ঢাকার রায়েরবাজারের কুমোরপাড়ার এই কিশোরকে যোগ দিতে হয় পারিবারিক মাটির পাত্র তৈরির পেশায়। তার পর দেশভাগ। উদ্বাস্তু জীবন। দিনমজুরি, পান-বিড়ি ফেরি, আর চাক ঘুরিয়ে মাটির পাত্র বানানো। কঠোর জীবনসংগ্রাম, দারিদ্র্যে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা। তবু তারই মধ্যে লিখেছেন কবিতা, নাটক, ছোটগল্প। আর জীবনের সংগ্রামের মুহূর্তগুলিকে তাঁর লেখনীর চাকে ঘুরিয়ে সৃষ্টি করেছেন মাটিমাখা আত্মকথা একা কুম্ভ । বাংলায় মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের সাহিত্যগুণান্বিত আত্মকথন খুব কম। একা কুম্ভ এ বার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত সুপ্রভা মজুমদার স্মারক পুরস্কার পেল।
|
কাচের পুতুল |
সদ্য পেরলো বিশ শতকের আমেরিকান নাটকের প্রাণপুরুষ টেনেসি উইলিয়াম্স-এর (১৯১১-১৯৮৩) জন্মশতবর্ষ। ‘আরশি’-র ‘ইচ্ছের অলিগলি’ (‘আ স্ট্রিটকার নেম্ড ডিজায়ার’), ‘অন্বেষক’-এর ‘কাচের পুতুল’ (‘দ্য গ্লাস মিন্যাজারি’ থেকে রূপান্তরিত) তাঁরই শ্রদ্ধায় নিবেদিত নাট্য-অর্ঘ্য। প্রথমটিতে মূলের পটভূমি-পরিপার্শ্ব অপরিবর্তিত। ‘কাচের পুতুল’-এ সুদূর সেন্ট লুইসের টম-লরা-অ্যামান্ডার অ্যাপার্টমেন্ট-জীবন হয়ে উঠেছে উত্তর কলকাতার নবীন কুণ্ডু লেনের বাসিন্দা রবু, বুলা আর তাঁদের মায়ের দিনযাপনের ক্লিন্ন রোজনামচা। অরুণ মুখোপাধ্যায়ের আবহে বিষণ্ণ এই নাটকটির আগামী অভিনয় ৩০ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ছ’টায়, তপন থিয়েটারে।
|
বসন্ত মেলা |
সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে ‘নারী সেবা সঙ্ঘ’। সঙ্গে যোধপুর পার্কে সংস্থার দফতরে আয়োজিত হয় ‘বসন্ত মেলা’। মেলার বয়স হল ৩৭। এ বছর মেলা বসছে ১-৩ ফেব্রুয়ারি (১২-৭টা)। রকমারি সম্ভার নিয়ে মেলায় থাকবে মহিলাদের ১৭৫টা স্টল। অন্য দিকে বাংলা লোকগানের বিশাল সম্পদ সংরক্ষণ ও তার প্রসারের জন্য ১৯৬২-তে জন্ম নিয়েছিল লোকসংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ‘ভ্রমরা’। ১৯৯২ থেকে এরা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করে চলেছে লোকশিল্পীদের গাওয়া গান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সমৃদ্ধ পুস্তিকা শিকড়ের সন্ধানে। ২৯ জানুয়ারি সন্ধে ছ’টায় ভ্রমরার শিল্পীরা নিবেদন করবেন ‘শিকড়ের গান’। পরিবেশিত হবে ‘পূর্ব-উত্তর’ বাংলার বিস্মৃতপ্রায় ধারার কিছু লোকগান।
|
অনীশ্বরতা |
ভারতীয় দর্শনে অনীশ্বরতার ইতিহাস নিয়ে বাংলায় প্রথম কাজ শুরু করেন অক্ষয়কুমার দত্ত। কাজ করেছেন দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ও। কিন্তু কেউ-ই ভারতীয় দর্শনে অনীশ্বরতার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লেখেননি। দশ বছরের চেষ্টায় ভারতীয় দর্শনে অনীশ্বরবাদ (প্রোগ্রেসিভ পাবলিশার্স) বইটি লেখেন রণজিৎ সরখেল। দর্শনবিদ না হলেও রণজিৎবাবু সারা জীবন দর্শন চর্চা করেছেন। ২৯ জানুয়ারি কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায় বই-চিত্র সভাঘরে বইটি প্রকাশ উপলক্ষে ‘ভারতীয় দর্শনে অনীশ্বরবাদ’ বিষয়ে আলোচনা করবেন প্রবাল দাস।
|
শতবর্ষে শঙ্কু |
ফেলুদার কায়দায় ব্যাক-ক্যালকুলেশন করে দেখা গেল শঙ্কু এখন হান্ড্রেড প্লাস। সদ্য একশো ডিঙনো শঙ্কুকে নাকি এক দল ধাপ্পাবাজ বলবে, সত্যজিৎকেও তারা ছাড়বে না। এ সব জানতে পেরেছেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নকুড়বাবু, চিঠি লিখে জানিয়েছেন তিলুবাবুকে। তার পর? শঙ্কু, সিধু জ্যাঠা, ফেলুদা কি সামলাতে পারবে এই সব বাঁকা প্রশ্ন? তাই নিয়ে বইমেলায় বিশ্বজিৎ রায়ের বই প্রোফেসর শঙ্কুর শেষ ডায়রি (লালমাটি)। এ আসলে জ্ঞানের নানা পথ ও পদ্ধতির লড়াই। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমাজ রাজনীতির গল্প সিধু জ্যাঠা তো তাই বললেন!
|
স্পষ্টবক্তা |
|
‘সন্ধের আগে বাড়ি ফেরার কার্ফু আমি মানি না।’ এমন জেহাদের সঙ্গে উষসী চক্রবর্তী লেখেন তাঁর এম-এ’তে ফার্স্ট জেঠিমার কথা: ‘জেঠিমা তো কায়স্থ ঘরের মেয়ে, তায় বাড়ির বউ। পাক্কা ১৫ বছর তাই শ্বশুরবাড়ির চৌকাঠ পেরোনোর অনুমতি হল না।’ পিতৃতন্ত্রকে আক্রমণ করে তাঁর একটি লেখার শ্লেষাত্মক শিরোনাম ‘ভালো মেয়ে হল সেই মেয়ে, যার যৌনতা হবে পৌরুষের শর্তে।’ অন্দর-বাহিরের শাসনে নিত্যদিন ধ্বস্ত মেয়েদের প্রতিবাদী স্বর উষসীর ধারালো কলমে, অঞ্জন দত্তের ছবিতে সত্যবতীর মতোই এখানেও তিনি স্পষ্টবক্তা। সে সব লেখার সংকলনই বেরচ্ছে বইমেলায়: মেয়েঘেঁষা লেখারা (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ), প্রাক্-কথনে অঞ্জন দত্ত। ২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় ইউবিআই অডিটোরিয়ামে বইটি প্রকাশ করবেন আবীর চট্টোপাধ্যায় ওরফে ব্যোমকেশ। সত্যবতী’র বই বেরনোর বিপদটা আঁচ করতে পারছেন তো ‘পুরুষ’ ব্যোমকেশ? সঙ্গের ছবিতে আবীর ও উষসী।
|
উদ্যোগ |
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগে তত্ত্ব ও প্রয়োগের দিক থেকে থিয়েটার শেখানো হয়। কিন্তু সাধারণ দর্শক তা দেখতে পান না। অথচ এই নাট্য বিভাগের প্রযোজনা দাপিয়ে বেরিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সহ নানা জায়গা। বহু দিন পর এ বছর তেমনই এক আয়োজন করে ফেলেছে নাট্য বিভাগ। অধ্যাপক দেবাশিস রায়চৌধুরীর নির্দেশনায় ২৯ জানুয়ারি মধুসূদন মঞ্চে অভিনীত হবে ‘অতএব’। ফরাসি নাট্যকার পিয়ের কর্নেই-এর নাটক অবলম্বনে। সঙ্গে থাকছে ‘নটীর পূজা’।
|
স্বপ্নপূরণ |
|
তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। ‘দেশ’ পত্রিকায় ভূতত্ত্ববিদ সুদীপ্তা সেনগুপ্তের আন্টার্কটিকার ধারাবাহিক ভ্রমণকাহিনি পড়ে সেই আজব দেশটি দেখার জন্য মনে সুপ্ত বাসনা জাগে। অবশেষে স্বপ্নপূরণ সরকারি কর্মী সুতপা যতির। আট-নয় মাসের প্রস্তুতি শেষে গত নভেম্বরে বেরিয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে। কলকাতা থেকে দুবাই হয়ে আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে জাহাজে হাজার কিমি পথ পেরিয়ে আন্টার্কটিকার পেনিনসুলা অঞ্চলে। রবারের বোটে করে বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে বেড়ানো। শূন্যের অনেক নীচে তাপমাত্রা, মাঝে মাঝে তুষার-ঝড়। দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। তার মধ্যেই পেঙ্গুইন, সিল, তিমির সঙ্গে সময় কাটানো। ২৯ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ছ’টায় বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে সেই অনবদ্য অভিজ্ঞতার কথা শোনাবেন সুতপা।
|
চলমান প্রসঙ্গ |
বছর ষাটেক আগের কথা। জাতীয় গ্রন্থাগারের বিখ্যাত গ্রন্থাগারিক চণ্ডী লাহিড়ীকে উপদেশ দিলেন, ‘যখন যেখানে যা কিছু পড়বে, বই সংবাদপত্র, চানাচুরের ঠোঙা ভালো লাগলে কেটে রেখে দেবে। বাট ডু নট ইউজ ইয়োর ব্লেড ইন মাই লাইব্রেরি।’ উপদেশটি অক্ষরে অক্ষরে মেনেছিলেন লাহিড়ীমশাই। আর সেই ‘চৌর্যবৃত্তি’তে ভরে উঠেছে তাঁর অ্যানেকডোটসের খাতা। কয়েক হাজার অ্যানেকডোটের সেই সংগ্রহ থেকেই প্রকাশিত হয়েছে প্রথম কিস্তি, বই আকারে (চলমান প্রসঙ্গ, পারুল, ৩০০.০০)। সঙ্গে তারই প্রচ্ছদ।
|
শিরোভূষণ |
মাথার ভূষণ বা সাজসজ্জার উপরেই নাকি নির্ভর করে তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিচয়। সে কালের রাজা-উজির বা বিশিষ্ট ব্যক্তি অথবা বিভিন্ন জনজাতির মস্তকভূষণের দিকে একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে বিষয়টি। ভারতীয় সংগ্রহালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সংগৃহীত হয়েছে এমনই অনেক অভিনব মস্তকভূষণের নমুনা। এ থেকে বাছাই করা কিছু সংগ্রহ নিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী ‘শিরোভূষণ’। উপলক্ষ সংগ্রহালয়ের ১৯৯তম জন্মদিন। এই দিনই সকাল ১১টায় ভারতীয় সংগ্রহালয়ের প্রাণপুরুষ ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ স্মারক বক্তৃতা দেবেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডি কে ভট্টাচার্য। প্রদর্শনীটি চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি (১০-৬টা) পর্যন্ত।
|
থিয়েটারকর্মিণী |
ছেলেবেলায় মায়ের কাছে নাটকে হাতেখড়ি, তারপর পাড়ার দাদাদের সহযোগিতা। পুজোর সময় পাড়াতেই নানা অনুষ্ঠানের মাঝে আমাদের ছোটদের নাটক খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠত তখন। পরের দিকে আমরা এ পাড়া ও পাড়া থেকে ডাকও পেতাম অভিনয়ের জন্য। সেই সূত্রে, সুরমন্দিরের পর ভারতীয় গণনাট্য সংঘ।’ গল্প বলে চলেছেন চিত্রা সেন, নিজের জীবনের গল্প। সে গল্পে মঞ্চ, সংগ্রাম আর মজাও। শৈশবটা কেটেছে উত্তর কলকাতায়। ছ’সাত বছর বয়স পর্যন্ত সুকিয়া স্ট্রিটের মামাবাড়িতে। পাশেই বিষ্টু ঘোষের আখড়া। ডাকাবুকো চিত্রা সে আখড়াতেও যেতেন। চিত্রা মণ্ডল থেকে শ্যামল সেনকে বিয়ে করে চিত্রা সেন। ‘চলাচল’ নাট্যগোষ্ঠী থেকে লোকরঞ্জন শাখা, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ থেকে ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে অভিনয় চিত্রা সেনের দীর্ঘ বৈচিত্রময় জীবন-অভিজ্ঞতা এ বার সরাসরি তাঁরই মুখে। থিয়েটার-সিনেমা-সিরিয়ালে এখনও সচল অভিনয়-জীবনের ফাঁকে ফাঁকে চিত্রা তাঁর নিজের কথা বলেছেন দেবাশিস রায়চৌধুরীকে। রেকর্ডিং থেকে সেই অনুলিখন নিয়েই তৈরি হয়ে উঠেছে থিয়েটার কর্মিণীর কথা (নাট্যচিন্তা)। |
|
|
|
|
ভাস্কর |
ছোট থেকেই শিল্পের প্রতি ছিল সহজাত আকর্ষণ। পত্র-পত্রিকায় ভাল ছবি দেখলেই কেটে রাখতেন। তখন থেকেই শিল্পী হওয়ার বাসনা। হাতেখড়ি নন্দলাল বসুর ছাত্র ফণিভূষণ দাসের কাছে। তাঁর তত্ত্বাবধানেই বাটিক, লেদার ক্রাফ্ট, মাটির পাশাপাশি এমব্রয়ডারি ও কাঠের কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন। ভাস্কর্যের প্রতি অদম্য আকর্ষণে ১৯৫১-য় ভর্তি হন সরকারি আর্ট কলেজে। ভাস্কর্য নিয়ে প্রথম মহিলা স্নাতক উমা সিদ্ধান্ত। প্রথম দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে নিরুৎসাহ করেন: মেয়েদের পক্ষে ভাস্কর্যের মতো কঠিন কাজ সম্ভব হবে না। উমা দমেননি। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন প্রদোষ দাশগুপ্তকে। তাঁর মাধ্যমেই পরিচয় মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, ভ্যান গগ, রুবেন্স সহ অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, বিনোদবিহারী, রামকিঙ্করের কাজের সঙ্গে। ধ্রুপদী ভারতীয় ভাস্কর্য তাঁর কাজকে প্রভাবিত করে। উল্লেখযোগ্য কাজ ‘ভার্জিন মাদার’, ‘ব্লসম’, ‘মাদার ক্যাকটাস’ ইত্যাদি। ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড’ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। ১৯৫৭-য় যতীন দাস পার্কে তাঁর প্রথম প্রদর্শনীর বিষয়ও ছিল এটি। ’৮০-এর শেষে উমা বানিয়েছেন বিভিন্ন মুখচ্ছবির সিরিজ। এই সিরিজের কাজ ‘প্রিমিটিভ-ওয়ান’ ১৯৯২-এ এনে দিয়েছে ললিতকলা অ্যাকাডেমির জাতীয় পুরস্কার । কাঠ ও পাথর ছাড়াও তাঁর শিল্পের মাধ্যম ব্রোঞ্জ। ফাইন আর্টস-এর শিক্ষকতা করেছেন। ১১ জানুয়ারি আশিতম জন্মদিনে গ্যালারি-৮৮ তে শুরু হয়েছে তাঁর আঁকা ছবি ও ভাস্কর্যের পূর্বাপর প্রদর্শনী। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা বই ইউরোপের ডায়েরি (রক্তকরবী)। প্রদর্শনী চলবে ৩১ জানুয়ারি, রোজ দুপুর ২-৭টা (ছুটির দিন বাদে)। |
|
|