পরিস্রুত পানীয় জলের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই দাবি মেনে হুগলির ধনেখালি ব্লকের দশঘরা-২ পঞ্চায়েত এলাকার শ্রীকৃষ্ণপুর মৌজায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর গ্রামীণ জল সরবরাহ প্রকল্পটি রূপায়ণ করে ২০১১ সালের অক্টোবরে। কিন্তু ১৫ মাস পরেও সেই প্রকল্পের জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। প্রকল্পটি এখনও চালুই করা হয়নি। কেননা, প্রকল্পের দায়িত্বভার নিয়ে পঞ্চায়েত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মধ্যে চাপান-উতোর চলছে।
শ্রীকৃষ্ণপুর মৌজায় জনসংখ্যা আট হাজারের উপরে। পঞ্চায়েতের বসানো গুটিকয়েক নলকূপের জলই গ্রামবাসীরা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করছেন। তার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে প্রতিদিন। ২০০০ সাল থেকে তাঁরা পরিস্রুত পানীয় জলের দাবি তুলছিলেন। ২০০৭ সালে প্রকল্পটির সূচনা করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। জলের পাইপ লাইন বসানো এবং জলাধার নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৯ সাল নাগাদ। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ৩৫টি ট্যাপকল বসানোর কাজ শেষ হয় ২০১১ সালের অক্টোবরে। এর পরেই দফায় দফায় বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা শীঘ্রই পানীয় জল সরবরাহের দাবি তুলেছেন। পঞ্চায়েত অফিসে এ নিয়ে প্রায়ই ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখানো হচ্ছে। গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের হারাধন ঘোষ। সমস্যার জন্য তিনি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দিকেই আঙুল তুলেছেন। ওই দফতরের উদাসীনতার জন্যই কোটি টাকার উপরে খরচ করে প্রকল্পটি করা হলেও তা চালু করা যায়নি বলে তাঁর অভিযোগ। হারাধনবাবুর দাবি, “ওই দফতরের আধিকারিকেরা প্রকল্পটি আমাদের হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। তার পরেই তা চালু করার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের দায়িত্বভার দেওয়া হয়নি। পরিষেবারও ব্যবস্থা করা হয়নি। ওই দফতরে বারবার দরবার করছি। কিন্তু কিছু হচ্ছে না।”
পক্ষান্তরে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের চুঁচুড়া মহকুমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুস্মিত বাগচি বলেন, “প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পঞ্চায়েতকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। একটি কমিটি গঠন করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছু হয়েছে বলে তাঁরা জানাননি।” প্রধান ওই নির্দেশিকা পাওয়ার কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “আজ অবধি প্রকল্পটির দায়িত্বভার নেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। নির্দেশিকা সংক্রান্ত কোনও চিঠিও পাইনি। ওই দফতরের আধিকারিকেরা শুধু মুখে বলেছেন, প্রকল্পের দায়িত্বভার নিতে হবে।” এ প্রসঙ্গে সুস্মিতবাবু বলেন, “উদ্যোগী পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা চেয়ে নিয়ে যান। ওই পঞ্চায়েতকে ফের চিঠি পাঠানো হবে।”
এই চাপান-উতোরে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। ভাস্কর দত্ত নামে গ্রামবাসী বলেন, “জলই যদি না পেলাম, তা হলে এত খরচ করে প্রকল্প করা হল কেন? কারও কোনও দায়িত্ব নেই।” রতন বাগ নামে আর এক গ্রামবাসীর আক্ষেপ, “এ ভাবে পড়ে থেকে ট্যাপকলগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারও কোনও উদ্যোগ নেই।” |