|
|
|
|
সিদ্ধান্ত হতে পারে আগামী মাসে |
মোদীকেই মুখ করার প্রস্তুতি শুরু বিজেপিতে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি দখলের জন্য নরেন্দ্র মোদীকেই প্রচারের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চান সঙ্ঘ নেতৃত্ব। জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর এই নতুন ভূমিকার ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত হবে। সদ্য নির্বাচিত বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ নিজেও আজ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতা করে নিতিন গডকড়ীকে সরিয়ে রাজনাথকে সভাপতি করেছে সঙ্ঘ। কিন্তু লোকসভা ভোটের বৈতরণী পেরোতে রাজনাথকে দিয়ে যে খুব বেশি কাজ হবে না, তা ভালই জানেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজনাথের নেতৃত্বেই লড়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই ভোটে ভরাডুবি হয়েছিল দলের। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে একটি অনুঘটকের প্রয়োজন, যাতে ভর দিয়ে দল ভোট বৈতরণী পেরোতে পারে। আপাতত নরেন্দ্র মোদীই সেই তুরুপের তাস। দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশও তেমনটাই মনে করছেন। বিজেপি সূত্রের মতে, আগামী মাসে জাতীয় পরিষদের বৈঠকের পরেই নরেন্দ্র মোদীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সভাপতি নির্বাচনের পর সেটিই হবে দলের প্রথম বড় সিদ্ধান্ত।
রাজনাথ আজ বলেন, “বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী এমন এক জনের হওয়া উচিত, যাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী গুজরাতকে একটি মডেল রাজ্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। রাজ্যের প্রশাসনও ভাল। গোটা দেশের কাছেই জনপ্রিয় নেতা মোদী। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমি শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। মোদীর সঙ্গেও কথা বলব।” এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনের গত কালই প্রকাশিত এক জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রাহুল গাঁধীকে অনেক পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন মোদী। এখনই ভোট হলে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মোদীকে পছন্দ ৪৮ শতাংশ ভোটারের। তুলনায় রাহুলকে পছন্দ ১৮ শতাংশের। আর মনমোহন সিংহকে সমর্থন করছেন ৭ শতাংশ ভোটার।
জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন-বৈঠকের আগেই করা হয়েছিল এই জনমত সমীক্ষা। কংগ্রেসের নেতাদের দাবি, জয়পুরের বৈঠকে রাহুলকে সহ-সভাপতি করার পর সমীক্ষা হলে অন্য ফল হত। দাবি যা-ই হোক, বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, মোদী ছাড়া গতি নেই। দলের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “এর আগে বিজেপি যত বার লোকসভা নির্বাচন জিতেছে, তার পিছনে একটি প্রেক্ষাপট ছিল। এক বার রাম জন্মভূমি আন্দোলন অনুঘটকের কাজ করেছে। পরে কারগিল যুদ্ধের হাওয়া বিজেপিকে ফায়দা দিয়েছে। সামনের নির্বাচনেও এমন কোনও অনুঘটকের প্রয়োজন। এই মুহূর্তে মোদীই সেই অনুঘটক হতে পারেন।”
কংগ্রেসে রাহুল গাঁধীর উত্থানের পর এখন থেকেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে ‘রাহুল বনাম মোদী’ প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির অনেকে মনে করেন, রাজনাথ আসার পর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে মোদীর নাম ঘোষণার সম্ভাবনা বেড়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সঙ্ঘ ও বিজেপিরই অনেকের আপত্তি রয়েছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, “দুর্নীতি প্রশ্নে নিতিন গডকড়ীকে অপসারণ করা হয়েছে। মোদীকে এনে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মাথাচাড়া দিক, সেটি নিশ্চয়ই কাম্য নয়।” তা ছাড়া, মোদীর ব্যাপারে নিজেদের আপত্তি স্পষ্ট করে দিয়েছে এনডিএ জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক জেডি (ইউ)-ও। এই অবস্থায় কিছুটা দেখে এগোনোর পক্ষপাতী দলেরই একটা বড় অংশ।
কিন্তু বিজেপির অন্য একটি অংশের বক্তব্য, মোদীকে তুলে ধরলে যদি রাজনীতির মেরুকরণ হয়, তো হোক। সংখ্যালঘু ভোট এমনিতেই বিজেপি তেমন পায় না। তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেসও যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের ‘গেরুয়া-সন্ত্রাস’ সংক্রান্ত মন্তব্য তারই প্রমাণ। বিজেপি নেতাদের এই অংশের বক্তব্য, মোদী জাতীয় রাজনীতিতে এলে উন্নয়নের তাসকে সামনে রেখেই এগোবেন। আর সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে বিজেপি এখন থেকেই মাঠে নেমেছে। উন্নয়ন আর জাতীয়তাবাদ এই দুইয়ের মিশেলে নরেন্দ্র মোদীই হয়ে উঠতে পারেন বিজেপির মুখ। |
|
|
|
|
|