শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে কিশোরী সীমা দাসকে। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে জানা গিয়েছে, প্রথমে গলা টিপে শ্বাসরোধ করা হয় ওই কিশোরীর। তারপরে মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মুখ নদীর পাঁকে গুঁজে দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে কিশোরীর সঙ্গে যৌন সংসর্গের ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। ওই কারণে ধর্ষণের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা শাসকের দফতরের পিছনে করলা নদীর পাড় থেকে শহরের মহামায়া পাড়ার বাসিন্দা সীমার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য তার দেহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিচারিকার কাজ করত সীমা। বুধবার সন্ধ্যার পর সে নিখোঁজ ছিল। বুধবার সন্ধ্যায় এক যুবক সীমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় বলে পুলিশ জেনেছে। ওই কিশোরীর ভাই জানান, সন্ধেবেলায় এক যুবক বাড়িতে এসে সীমার নাম ধরে ডাকে। সে টুপি পড়ে ছিল। ওই যুবকের সঙ্গে বেরিয়ে যায় সীমা। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি। |
বেশি রাতেও সীমা বাড়ি ফিরছে না দেখে তার বাড়ির লোক খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। রাত ১১টা নাগাদ সীমার মোবাইল নম্বরও সুইচড অফ ছিল। ঘটনার দিন রাত ১০টা পর্যন্ত সীমাকে নতুনপাড়া, পাহাড়িপাড়া এলাকায় ঘোরাফেরা করতেও দেখা গিয়েছে বলে পুলিশ জেনেছে। যে কারণেই পুলিশের অনুমান রাত ১০টার পরে সীমাকে খুন করা হয়। ঘটনার দিন বেশি রাতে তিস্তা বাঁধে দু’টি বাইকে চেপে কয়েক জন যুবককে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে বলেও জেনেছে পুলিশ। যে যুবক কিশোরীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় তার খোঁজ চলছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ওই কিশোরী সেই দিন স্বেচ্ছায় করলার বাঁধে গিয়েছিল, না কি জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত কিনারা হবে।”
যে যুবক সীমাকে ডাকতে আসে সে ছাড়াও আরও এক যুবকের কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। সন্ধ্যায় মহামায়া পাড়ার মোড়ে এক যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বলে প্রতিবেশীরা জানান। ওই অবাঙালি যুবক সীমাকে ডেকে কথা বলার চেষ্টা করেন বলেও পুলিশ জেনেছে।
|
• তিস্তার কোলে জলপাইগুড়ি শহর। নদীর পাশে একটি বাঁধ। পিডব্লুডি মোড় থেকে বাঁধের পাশে জেলা পুলিশ-প্রশাসন ও বন দফতরের অফিস রয়েছে। অন্য দিকে রয়েছে করলা নদী বাঁধ। প্রশাসনিক দফতরগুলির পেছন দিয়ে প্রায় ১ কিমি বিস্তৃত ওই নদী বাঁধ। সামনের দিক তিস্তা নদী বাঁধ দিয়ে ঘেরা। দৈর্ঘ্য দেড় কিমি। দুই বাঁধের প্রায় আড়াই কিমি এলাকা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জনবহুল।
• সরকারি কর্মী-সহ শহরে নানা কাজে আসা বাসিন্দারা বাঁধের পথ ব্যবহার করেন। সুকান্তপল্লি, সারদা পল্লি সহ নদী সংলগ্ন এলাকার হাজার খানেক বাসিন্দার যাতায়াতের পথ। তিস্তা বাঁধের পাশে জুবলি পার্ক। প্রতিদিন সেখানে প্রচুর মানুষ বেড়াতে যান। সন্ধ্যার পরে তিস্তা বাঁধে প্রবীণরা ভিড় করেন।
• বাঁধের পাশে বিভাগীয় কমিশনার, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, স্পেশাল আইজি, গোয়েন্দা পুলিশ, সদর মহকুমাশাসক, জেলা রেজিস্ট্রি অফিস, বন ও পূর্ত দফতর এবং সার্কিট হাউস।
• বাসিন্দাদের অভিযোগ বাঁধের এক প্রান্তে পুলিশি টহল শুরু হলে অন্য দিকে তার খবর চলে যায়। পুলিশ চলে গেলে ফের মদ ও জুয়ার কারবারিরা আসর জমিয়ে বসে। মহিলাদের কটুক্তি, চুরি ছিনতাই লেগেই রয়েছে।
• বাঁধের আড়াই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে আলোর ব্যবস্থা আছে মাত্র ২০০ মিটারে। জুবলি পার্কের ভেতরেও পর্যাপ্ত অলো নেই। সন্ধ্যার পরে জেলাশাসকের দফতরের পেছনে প্রায় ১ কিমি ও গোটা তিস্তা বাঁধ অন্ধকারে থাকে।
সন্ধ্যার পরে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে করলা বাঁধের বিস্তীর্ণ এলাকায় বসে মদ, গাঁজার ঠেক। নেশার মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে জেলাশাসকের দফতরের পেছনের করলা বাঁধও। প্রবীণ দের বসার জন্য তিস্তা বাঁধে বেঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে সেচ দফতর। সন্ধ্যার পরে সেখানে চলে মদের ঠেক। যৌন মেলামেশাও চলে।
• সপ্তাহে দু’এক দিন সন্ধের পরে পুলিশি অভিযান হয়। তবে সম্প্রতি নিয়মিত পুলিশি টহল শুরু হয়েছে।
• পুরসভার প্রস্তাব তিস্তা এবং করলা বাঁধের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে স্থায়ী পুলিশ চৌকি বসাতে হবে।
• প্রশাসনের প্রস্তাব সন্ধের পর বাঁধের দু’দিকে পুলিশ রাখা হবে। আলোর ব্যবস্থা হবে। সন্ধের পরে কম বয়সীদের বিশেষ করে কিশোরী, যুবতী তরুণীদের সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করতে দেখলে আটক করে পরিবারকে জানানোর ব্যবস্থা করা। |
বাঁধ এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন। পুলিশকে টহলদারি বাড়াতে বলেছি। বাঁধে খুঁটি পুঁতে আলো লাগানো সম্ভব নয়। অন্য কোনও উপায়ে আলোর ব্যবস্থা করা যাবে কিনা সে বিষয়ে পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব। পাশাপাশি বাঁধের নিরাপত্তা বাড়াতে শহরবাসীরও সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্মারকী মহাপাত্র, জেলাশাসক |
|
বিকেল ৪টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বাঁধে পুলিশি টহলের নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি সকালেও সাদা পোষাকে নজরদারি চলবে। স্থায়ী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
অমিত জাভালগি,পুলিশ সুপার, জলপাইগুড়ি |
|
পুরসভার তরফে ওই বিষয়ে কয়েক দফা প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দিল্লি কাণ্ডের থেকেও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। পুরসভাকে আলো লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হলে নিশ্চই নেওয়া হবে।
মোহন বসু, চেয়ারম্যান,
জলপাইগুড়ি পুরসভা |
|