রাত নামলে বদলায় বাঁধ
কটি সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকে জলপাইগুড়ি শহরের নামে থাকা একটি গ্রুপে গত জুনে শহরের এক তরুণী লিখেছিলেন, ‘গরমের হাত থেকে মুক্তি পেতে বাড়ির সকলে মিলে তিস্তা বাঁধের জুবলি পার্কে হাওয়া খেতে যাই। বাঁধে বেশ কয়েকটি বেঞ্চিতে বসে সময় কাটাব বলে ভেবেছিলাম। গিয়ে দেখি সব বেঞ্চ দখল হয়ে আছে। বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিরা বসে মদ বিয়ার খাচ্ছে। আমাদের দেখে কেউ বাঁকা কথাও বলল। ভয় পেয়ে চলে এসেছিলাম। সন্ধ্যের পরে আর বাঁধে যাওয়ার সাহস হয় নি।’
গত বৃহস্পতিবার তিস্তা বাঁধের সঙ্গে যুক্ত করলা বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয়। পাশ থেকে উদ্ধার হয় বিয়ারের বোতল। করলা নদীর পাঁকে তাঁর মুখ ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। তারপরে অনেকেই মনে করছেন, সেই অনেকদিন আগেই সতর্কবাণী ছিল, কিন্তু কেউই তাতে কর্ণপাত না করায় শেষ পর্যন্ত শহরেরই এক কিশোরীকে প্রাণ দিতে হল। শুক্রবার অনেকেই বলেন, সন্ধ্যের পরে তিস্তা আর করলা বাঁধের কী পরিস্থিতি হয় তা কমবেশি প্রত্যেকে জানে। শুধু পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা জানতে পারেন না বুঝি না।
সন্ধের পরে বাঁধের পরিবেশ নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রধান কারণ বিকেলের পরে বাঁধের নিকষ অন্ধকার পরিবেশ। ওই সুযোগে দিনভর বাঁধে থাকা ভিড় জটলার চরিত্র পাল্টে যায়। আড়াল আবডালের সুযোগ নিতে দিনভর প্রেমিক প্রেমিকাদের বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পরে যাদের দেখা যায়, তারা অন্য উদ্দেশ্যে আসেন। জুয়ার আসর থেকে আঠার নেশা বা মদ কিছুই বাদ যায় না। বাঁধেই চড়া দামে মেলেও ওই সমস্ত নেশার সামগ্রী। দীর্ঘদিন ধরে বাঁধে প্রাতঃর্ভ্রমণ করতে যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাঙ্ক আধিকারিক বলেন, “সকালে বাঁধে গিয়ে দেখি চারদিকে ছড়িয়ে আছে মদ আর বিয়ারের ফাঁকা বোতল। বাঁধের রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে বোতল ভাঙা কাচ। বোঝা যায় রাতে কী কান্ডটাই না হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এসব চলছে।”
তিস্তা বাঁধের দু’নম্বর স্পার অনেকটাই নির্জন। প্রতি সন্ধ্যায় সেখানে একাধিক চার চাকা গাড়ির আনাগোনা পরিচিত দৃশ্য। স্পার লাগোয়া এলাকায় বাড়ি এক ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, “বাইক বা সাইকেলে এসে বাঁধে নেশা করার দৃশ্য সয়ে গিয়েছে। যারা গাড়ি নিয়ে আসে তারা একটু ভিন্ন। তাদের সঙ্গে সেখানে মহিলারাও থাকে। অন্ধকারে ভাল করে কিছু দেখা যায় না। কিন্তু বচসা, মারামারি লেগেই থাকে। ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না।”
তবে সন্ধ্যের পরে প্রত্যেকে খারাপ মতলব নিয়ে বাঁধে যায় এটা অনেকে মেনে নিতে পারেননি। শিক্ষক তথা পরিবেশ প্রেমী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রাজা রাউত বলেন, “সূর্য ডোবার পরে তিস্তার ১ নম্বর স্পারের মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়। সেটা উপভোগের জন্য আমার মতো অনেকে বাঁধে যায়।” তবে ওই ব্যক্তিরা বেশিক্ষণ বাঁধে থাকতে পারেন না। অন্ধকার নামলে তাঁরা ফিরে চলে যান।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁধের দু’দিকে পুলিশ বাহিনী রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।” যদিও জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “শুধু টহল দিলেই সমস্যা মিটবে না। প্রয়োজন স্থায়ী পুলিশ চৌকি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.