|
|
|
|
বাড়িতে আগুন, ছাদে উঠে বাঁচার আর্জি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বরাবাজার |
সিঁড়ি বেয়ে নিচের তলা থেকে গলগল করে ধোঁয়া উঠে আসছিল। আগুনের তাপে নিচের তলার দোকানে যাওয়া যাচ্ছিল না। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার ভোররাতে বাঁচার আশায় দোতলার ছাদে উঠে পড়েছিলেন বরাবাজারের চকবাজারের ব্যবসায়ী উত্তম করমোদক। বাঁচার জন্য চিৎকার করে তাঁরা পড়শিদের ডাকছিলেন। পরে লাগোয়া বাড়ির ছাদ থেকে পড়শিদের বাড়িয়ে দেওয়া বাঁশের মই বেয়ে তাঁরা নেমে আসেন। তাঁদের উদ্ধারের কিছু পরেই রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বাড়ির দেওয়াল ফেটে যায়। পুরুলিয়া থেকে দমকল কর্মীরা এসে আগুন আয়ত্তে আনতে সকাল হয়ে যায়।
বাড়ির একতলায় উত্তমবাবুর ফল ও দশকর্মার দোকান। পাশেই রান্নাঘর। বৃহস্পতিবার দোতলার ঘরে দুই কিশোর ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে উত্তমবাবু শুয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “ভোর প্রায় চারটের সময় ধোঁয়ায় ঘুম ভেঙে যায়। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি চারদিকে ধোঁয়া। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আগুনের তাপে নিচে নামতে পারছিলাম না। দোতলায় আগুনের শিখা উঠে আসছিল। দেওয়াল হাতড়ে আমরা ছাদে উঠে আসি।” সেখান থেকে তাঁরা চিৎকার করতে থাকেন।
তত ক্ষণে জেগে সারা পাড়া উঠেছিল। পড়শি রিঙ্কু করমোদক, অরুণ প্রামাণিকরা বলেন, “ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি উত্তমবাবুর দোকানের ভিতর থেকে প্রচুর ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ওঁরা ছাদ থেকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে ডাকছিলেন।” পাড়ার ছেলেরাই বিদ্যুৎ দফতরের স্থানীয় অফিস থেকে বাঁশের লম্বা একটা মই নিয়ে আসেন। একটি বাড়ির ছাদে মইটা তুলে দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় উত্তমবাবুর ছাদে। উত্তমবাবুর বড় ছেলে সুবর্ণর কথায়, “পড়শিরা সময় মতো মই না আনলে কী যে হত, ভেবে পাচ্ছি না। মই বেয়ে নামার সময় প্রতি মুর্হুতে মনে হচ্ছিল হাত ফস্কে বোধহয় নিচে পড়ে যাব।” তার মা আনুবালাদেবী বলেন, “আগুন আমাদের শেষ করে দিল। কিন্তু মই বেয়ে যে কী ভাবে নেমেছি মনে নেই। মাটিতে পা দিয়ে মনে হল নতুন জন্ম হল।”
দমকল আসার আগে পড়শিরা জল ঢেলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিশির করমোদক, অংশু কাটারুকা, দিপক কর বলেন, “আমরা আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে বাড়ির জানালার কাচ টুকরো টুকরো হয়ে আমাদের গায়ে ছিটকে আসে।” আগুন লাগল কী করে? গৃহকর্তা উত্তমবাবুর ধারণা, “শর্ট সার্কিট থেকে এই বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে।” পুরুলিয়া দমকল বিভাগের আধিকারিক সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “বাড়িটিতে ধূপ ও দেশলাইয়ের মতো প্রচুর দাহ্য পদার্থ মজুত করা ছিল। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|