পুরো টিম নিয়ে আজ ওয়াংখেড়েতে ঢোকার সময় অদ্ভুত একটা অনূভূতি হচ্ছিল।
মুম্বই টিমের সঙ্গে আমার চেনা-জানা আজকের নয়। বহু দিনের। ওয়াংখেড়েতেও প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। নিজের ক্রিকেটারজীবনের কথা বলছি আর কী। মনে আছে, দু’-দু’বার রঞ্জি ফাইনাল খেলেছি মুম্বইয়ের (তখন নাম ছিল বম্বে) সঙ্গে। অজিত ওয়াড়েকর, রমাকান্ত দেশাই, দিলীপ সারদেশাই, অশোক মাঁকড়উফ, কী টিম ছিল! এক-এক জন উইকেটে আসা মানে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফিরবে। বল হাতে নিলে পাঁচটা উইকেট মিনিমাম! ’৬৮-’৬৯-এর ফাইনালটার কথা বলি। বাংলা টিমটা সে বার বেশ ভাল। সুব্রত গুহ, আমি, গোপাল (বসু), অম্বর রায়, দিলীপ দোশি অনেকেই ছিল। প্রথম ইনিংসে আমরা চারশো তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওয়াড়েকর একা শেষ করে দিল। নিজে সেঞ্চুরি করল, মুম্বইও লিড নিয়ে ফেলল হেসেখেলে।
কবেকার কথা সব! চুয়াল্লিশ বছর আগের। সব মনেও নেই। কিন্তু একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। শনিবার থেকে যে মুম্বইয়ের মহড়া নিতে আমরা নামছি, তাদের ঐতিহ্য কিন্তু অতীতের মতো নয়। সচিনকে ছেড়ে দিন। ও আলাদা। ওয়াসিম জাফরকেও আমি ধরব না। কিন্তু বাকি মুম্বই টিমে আর কে আছে তেমন?
বলছি না যে, আমার টিম সৌরাষ্ট্র ফেভারিট। মুম্বইকে উড়িয়ে দেব। বলতে চাইছি যে, অতীতের মুম্বই টিমে জাতীয় দলের প্লেয়ার অনেক বেশি থাকত। এই টিমে সচিন ছাড়া আর কেউ নেই। আগরকর-জাফর সবাই প্রাক্তন তারকা। তবু ফাইনাল ওদের দিকে ঢলে। যদি জিজ্ঞেস করেন কতটা? উত্তর হবে, ৭৫-২৫। |
আসলে কয়েকটা ব্যাপার ধরলে মুম্বইকে বেশ কিছুটা এগিয়ে রাখতে হচ্ছেই। ওদের ঘরের মাঠে খেলা। এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, ওরা ভাল ভাবেই জানে। ম্যাচের আগের দিন পর্যন্তও ওয়াংখেড়ের উইকেট আমি এখনও দেখিনি। কিন্তু যতটুকু জানি, বাউন্স থাকবে। পেসার হোক বা স্পিনারবাউন্সকে কাজে লাগাতে জানলে উইকেট পাবেই। শুনলাম পেস-সহায়ক উইকেট হচ্ছে। স্বাভাবিক। তা ছাড়া ওদের রঞ্জি জয়ের রেকর্ড। এর আগে ৪৩ বার ফাইনাল খেলে ৩৯ বার জিতেছে। দেশের সেরা টিম নিঃসন্দেহে।
কিন্তু তাই বলে ঘাবড়ে যাচ্ছি না। আমার হাতেও সিদ্ধার্থ ত্রিবেদী আছে। জয়দেব উনাদকট আছে। যারা পেস বোলিংটা করতে পারে। আর আমার স্পিন বোলিং মুম্বইয়ের চেয়ে বেশি ভাল। বিশাল জোশী, ধর্মেন্দ্র জাডেজা, সবাই কিন্তু পরপর ম্যাচে পাঁচ-ছ’টা করে উইকেট তুলছে। বিশেষ করে হইচই হচ্ছে জোশী ছেলেটাকে নিয়ে। কিন্তু ক’দিন আগেও কেউ ওকে চিনত না। খুব ছোট থেকে ওকে দারিদ্রের সঙ্গে যুঝতে হয়েছে। পড়াশোনা করতে পারেনি। সে দিন একটা চ্যানেল ইন্টারভিউ নিতে এল, ও না ইংরেজি, না হিন্দি কিছুই ঠিকমতো বলতে পারল না। তা ছাড়া ওকে একটা সময় ‘চাকিং’-এর দায়ে রঞ্জি খেলা ভুলতে হয়েছিল। এখন অ্যাকশন ঠিক করে দিয়েছি। কেমন খেলছে ইন্টারনেট ঘেঁটে স্কোরবুক দেখলেই বুঝবেন।
আমাদের এই ‘আননোন ফ্যাক্টর’-টাই কিন্তু মুম্বইকে ফাইনালে ভোগাতে পারে। আমার টিমের অর্ধেক ক্রিকেটার কেমন ব্যাট করে, বা বোলিংয়ের হাতটা কেমন, ল্যাপটপ খুঁজেও বার করা যাবে না। কারও কারও আবার এটা দু’নম্বর রঞ্জি মরসুম। ওদের পাখিপড়ার মতো একটা জিনিস বুঝিয়েছি। মুম্বই বলে বেশি ভাবনা-চিন্তা করতে যেও না। আর পাঁচটা ম্যাচের মতো এটাকেও নাও। তাতে জিতলে জিতব, কিন্তু হারলেও লজ্জা নেই। আমরা তো প্রথম বার রঞ্জি ফাইনাল খেলছি। চাপ যা থাকার ওদের ওপর থাকবে। এমনিতেই এ বারের ফাইনাল নিয়ে উত্তেজনাটা আলাদা জায়গায় পৌঁছেছে। এমসিএ কর্তারা দেড়শো-দু’শো টাকা করে টিকিটের দাম করেছেন। এতে ভাল হবে। সচিনের সঙ্গে আমার ছেলেদের খেলাও ক্রিকেট সমঝদারদের চোখে পড়বে।
আর আমার নিজের লক্ষ্য? ব্যক্তিগত ইচ্ছে? আছে একটা। দেখুন, আমি রঞ্জি ফাইনাল খেলেছি বাংলার হয়ে। কিন্তু জিততে পারিনি। বাংলার কোচ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলাম। রঞ্জি জেতার স্বাদটা কী রকম হয়, জানতে আজও ইচ্ছে করে। সৌরাষ্ট্রের কোচ এত দূর এসে তাই আর খালি হাতে ফিরতে চাইছে না!
|