তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে তৃণমূলেরই বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনের সুর চড়াচ্ছে কংগ্রেস।
গত ১৯ জানুয়ারি ধনেখালিতে মৃত্যু হয় তৃণমূল কর্মী কাজি নাসিরুদ্দিনের। অভিযোগ ওঠে, পুলিশের মারেই মারা গিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ধনেখালির অনন্তপুরে এক প্রতিবাদ সভায় কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “পুলিশের সাহায্য নিয়ে তৃণমূলই ওঁকে খুন করেছে।”
এর আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান মৃত তৃণমূল কর্মীর পরিবারকে ‘সমবেদনা’ জানিয়ে এসেছেন। নাসিরুদ্দিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন প্রদীপবাবু। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি তৃণমূলকে ঘটনার জন্য ‘দায়ী’ করেছেন অধীর। এই প্রসঙ্গেই তৃণমূল-সিপিএমকে এক সারিতে রেখে তীব্র সমালোচনাও করেন তিনি। বহরমপুরের সাংসদের কথায়, “সিপিএমের আমলে সবথেকে বেশি সংখ্যালঘু মানুষ খুন হয়েছিল। তৃণমূলের আমলেও একই ঘটনা ঘটছে। বাংলার মানুষ বুঝতে পারছেন, সিপিএম এবং তৃণমূলের কোনও মৌলিক ফারাক নেই।”
তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুতে ধনেখালিতে কংগ্রেস নেতাদের আনাগোনা স্বভাবতই ‘ভাল চোখে’ দেখছে না দল। এ দিন সভায় যাওয়ার পথে মাকালপুর-ফিডার রোড এবং মদনমোহনতলায় অধীর চৌধুরীকে লক্ষ্য করে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান দেন তৃণমূল কর্মীরা। উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। |
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ কংগ্রেস নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুকে ‘কাজে লাগাতে’ চাইছে বলে মনে করেন হুগলি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা সভাপতি তথা সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের কথায়, “নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতি করছে কংগ্রেস।” এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েও অধীরবাবু ‘নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ’ ছাড়া তৃণমূলকে কী ভাবে এই ঘটনায় ‘দায়ী’ করলেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি।
নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনা যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ফল এমন ইঙ্গিত অবশ্য মিলেছে মৃতের স্ত্রী মানুজার বক্তব্যেও। তিনি ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের ‘উসকানি’তে পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে তাঁর স্বামীকে। হুগলি জেলা রাজনীতিতে অসীমার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত সপ্তগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তাঁরই ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ছিলেন নাসিরুদ্দিন। যাঁর মৃত্যুর পরে তৃণমূলের জেলাস্তরের কোনও নেতা ধনেখালিতে পা রাখেননি। মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা! এ সব নিয়ে স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ আছে। ওই এলাকায় তৃণমূলের ব্যানার-ফেস্টুন ছেঁড়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত শুক্রবার ধনেখালির জয়রামবাটির বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন ওরফে নাসুর সঙ্গে মদনমোহনতলা এলাকায় কিছু পুলিশ কর্মীর বচসা বাধে। পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। শনিবার ভোরে মারা যান ওই তৃণমূল কর্মী। |