ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কথা আগেই জানা ছিল। এ বার পাওয়া গেল ত্রিস্তর রাজ্য মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ১৩ জন বিধায়ককে ‘পরিষদীয় সচিব’ হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করান মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। এই সচিবরা সকলেই মন্ত্রী পদমর্যাদার, তাঁহাদের লালবাতি লাগানো গাড়ি, মন্ত্রীর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা থাকিতেছে। ইতিপূর্বে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা হইতে দলের ছয় মন্ত্রীর ইস্তফার পর তাঁহাদের বিভিন্ন রাজ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হয়। সেই বাবদেও মহাকরণ বা সচিবালয়ে ঘর, দফতর, গাড়ি, বেতন-ভাতা, অন্য যাবতীয় মন্ত্রিসুলভ সুযোগসুবিধা ওই পদত্যাগী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের লভ্য হয়। অর্থাৎ মন্ত্রীদের মাথার উপর এই উপদেষ্টারা, ঠিক তলায় বিভাগীয় মন্ত্রীরা এবং তাহার অব্যবহিত নীচেই মন্ত্রী-প্রতিম সদ্য-নিযুক্ত পরিষদীয় সচিবরাসব মিলাইয়া ত্রিস্তর একটি মন্ত্রিসভাই রাজ্যবাসীর প্রাপ্য হইল। মুখ্যমন্ত্রী আভাস দিয়াছেন, তিনি এখানেই থামিবেন না, রাজ্যের ৪৪জন মন্ত্রী পিছু একজন করিয়া পরিষদীয় সচিব নিয়োগের রাস্তাও খোলা রাখিবেন।
উন্নয়নের জন্য অর্থের অকুলান হইলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজকোষ তো ইতিপূর্বেও ক্লাবকে খয়রাতি দিতে কিংবা নিত্য রকমারি উৎসবের খরচ জোগাইতে কিংবা বিষমদে মৃতদের ক্ষতিপূরণ দিতে দিব্য অকৃপণ থাকিয়াছে। নবনিযুক্ত সচিবদের খরচাও রাজ্যবাসীর পকেট কাটিয়া সংগ্রহ করা অসম্ভব হইবে না। আসন্ন রাজ্য বাজেটে অর্থমন্ত্রীকে তাহার সংস্থান রাখিতে বলিলেই হইল। তবে কিনা মুখ্যমন্ত্রী নিজেই গত ছয় মাস ধরিয়া দাবি করিতেছেন, প্রতিশ্রুত কাজের মধ্যে ৯০ শতাংশই (মতান্তরে ৯৯ শতাংশ) তিনি ইতিমধ্যে করিয়া ফেলিয়াছেন। অস্যার্থ, পাঁচ বছর ধরিয়া রাজ্যবাসীর যে কল্যাণ করার কথা, তাহার সবটাই সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। কাজ তো তবে কিছুই বকেয়া নাই। তবে এই ১৩জন পরিষদীয় সচিবের জন্য কী কাজ পড়িয়া রহিল? ‘কেন’-র উত্তরটি আছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং অন্তর্দলীয় কোন্দলের মধ্যে। প্রতিটি জেলায় শাসক দলে যে অন্তর্দ্বন্দ্ব খুনোখুনির চেহারা লইয়াছে, তাহার পিছনে আছে ‘বঞ্চিত’ স্থানীয় দলীয় গোষ্ঠীপতিদের তীব্র কাজিয়া। এই ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীপতিদের তুষ্ট করিতে হইলে পরিষদীয় সচিবের মতো কোনও গালভরা পদ ও আনুষঙ্গিক সুযোগসুবিধা নাগালে আনিয়া দেওয়া আবশ্যক। মূলত প্রাপ্তিযোগের এই রাজনীতিই রাজ্য-মন্ত্রিসভার ত্রিস্তর সম্প্রসারণের নিহিত কারণ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায়-জেলায় ক্ষমতাদখল করিতে হইলে বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভ প্রশমন জরুরি। মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়া তাহা করার অবকাশ নাই, কারণ সেই কোটা ইতিমধ্যেই পূণর্র্। সংবিধান অনুযায়ী আইনসভার মোট সদস্যের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ মন্ত্রী হইতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গে যাহার সংখ্যা ৪৪। অতএব মন্ত্রীর সমান মর্যাদা, অধিকার ও সুযোগসুবিধা সংবলিত পদ দিয়া তাঁহাদের তুষ্ট করা। প্রাপ্তিযোগের রাজনীতি নূতন শিখর স্পর্শ করিল। |