এ বার তথ্যচিত্রে সিংপোদের বুনো চায়ের ইতিহাস
দুশো বছর আগের কথা। স্কটল্যান্ডের রবার্ট ব্রুস তখনও অসমে চা বাগান গড়ার কথা ভাবেননি। মহিলা শ্রমিকরা দল বেঁধে চা-পাতা তোলেন না সে সময়। তখন বন্য চা গাছ হত কয়েক মিটার উঁচু। পাতা তুলতে হত হাতির পিঠে চড়ে! সেই তখন থেকেই সিংপোরা বুনো চায়ের আস্বাদ নিতেন সকাল-বিকেল। অসমে প্রথম আধুনিক চা-বাগান গড়ার কৃতিত্ব মণিরাম দেওয়ানের হলেও, ইতিহাস বলছে তাঁর বাগান গড়ার আগেই সিংপো রাজা নিংগ্রু লা লন্ডনে চা পাঠিয়েছিলেন! ইতিহাসে উপেক্ষিত সেই চা-প্রেমী রাজার কাহিনিই সেলুলয়েডে ধরতে চলেছেন সিংপো সমাজের লেখক রাজীব নিংখি।
সিংপো সমাজ ও অসমে সিংপোদের হাত ধরে প্রথম চা-প্রেমের ইতিবৃত্ত নিয়ে প্রথম এমন একটি তথ্যচিত্র তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছেন নিংখি। ইতিহাসবিদ অমলেন্দু গুহ ও অঞ্জন বরুয়ার বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, উজানি অসমের মার্গারিটায়, সিংপো রাজত্বে আতিথ্য নেওয়া রবার্ট ব্রুসকে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন সিংপোরাজ বিসা গাম। তখন সবে উনবিংশ শতকের শুরু। সেই থেকে আজ অবধি সিংপোরা চায়ের উপরে কর্তৃত্ব করছেন। তাঁদের তৈরি ‘অরগ্যানিক টি’ এখন বিদেশে রফতানি হয়। কানাডায় সিংপো চায়ের কার্যত একচেটিয়া ব্যবসা। রাজীব নিংখির কথায়, “মণিরাম দেওয়ান বাগান করার আগেই নিংগ্রু লা ৩৫ বাক্স চা লন্ডনের মিন্সিং লেন নিলাম কেন্দ্রে পাঠান। সেই চায়ের দাম ওঠে তখনকার দিনেই ৪৮০ পাউন্ড। তখনও কলামের চা-চাষ শুরু হয়নি। বনেই জন্মাত। হাতির পিঠে চড়ে পাতা সংগ্রহ করতে হত।” সেই দৃশ্যের পুনর্নির্মাণ করছেন রাজীব।
বণিকের চেহারায় আতিথ্য নেওয়া ইংরেজ তার মানদণ্ড ছেড়ে রাজদণ্ড বের করার পরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সিংপোরা। দিহিং নদীর পারে, নিংরু পোস্ট এলাকায় ইংরেজ সেনার উপরে সিংপোরাজ নিংগ্রু লা-র সৈন্যরা আক্রমণ চালায়। ১৮৪৩ সালের সেই লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন কোম্পানির বহু সেনা। ব্রিটিশ রাইফেল থেকে বেয়নেট কেড়ে নিয়ে পাল্টা-মার দেওয়ার সেই সব দৃশ্যও তথ্যচিত্রে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। তবে ইংরেজ বাহিনীর জবাবি হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে শেষ অবধি নিংগ্রু লা পিছু হঠেন। রাজ্যপাট ছেড়ে অরুণাচল প্রদেশের চাংলাংয় ঘাঁটি গড়েন। আমৃত্যু সেখানেই ছিলেন।
এখনও সেই ঐতিহ্যকে সযত্নে বুকে আগলে রেখেছেন নিংগ্রু লা-র নাতি নিংগ্রু লা সেং। সম্মুখ সমরে ব্রিটিশ রাইফেলের মুখ থেকে ঠাকুরদার উপড়ে নেওয়া দু’টি জং ধরা বেয়নেট আজও তাঁদের কাছে গর্বের সামগ্রী।
অসমের ইকো-ট্যুরিজম সোসাইটি ও সিংপো উন্নয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা এই তথ্যচিত্রটি মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ দেখানো হবে। মানসপ্রতিম গগৈয়ের ক্যামেরায় উনিশ শতকের উজানি অসম, সিংপো রাজপোশাক ও তদানীন্তন যুগকে প্রাণবন্ত করতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াচ্ছেন শিল্প নির্দেশক বরুয়া দেবানন্দ উলুপও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.