|
|
|
|
চার কিশোরীকে উদ্ধার করে নায়ক করিমগঞ্জের মিঠন
উত্তম সাহা • শিলচর |
চার কিশোরীকে অপহরণকারীদের খপ্পর থেকে উদ্ধার করে পুরস্কৃত হলেন করিমগঞ্জের যুবক মিঠন দে। না, সরকারি তরফে এখনও স্বীকৃতি মেলেনি। আশা মিলেছে মাত্র। তাই তাঁর মতো অসমসাহসী যুবকরা যেন সরকারি উপেক্ষায় হতোদ্যম না-হয়ে পড়েন, সে জন্য এগিয়ে আসে শিলচরের দ্বীজেন্দ্র-ডলি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। শুধু প্রশস্তিগাথা মানপত্র আর কিছু নগদ অর্থ নয়। মিঠনের কথায়, ‘‘আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা, ট্রাস্টের দুই কর্মকর্তা, গিরিধারী কর এবং দুর্বা দেব যখন স্মৃতি-সম্মান তুলে দিচ্ছিলেন, তখন হল ভর্তি জনতা উঠে দাঁড়ান। করতালিতে সংবর্ধিত করেন আমায়।’’ এখন করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন অবশ্য তাঁকে সংবর্ধনার উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মানিত করা হবে বলে জেলাশাসক দেবেশ্বর মালাকার জানিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিক সম্মান দেরিতে মিললেও মিঠনের সাহসিকতার কথা গত ন’মাস ধরে বরাক উপত্যকার মানুষের মুখে মুখে। গত বছরের ১১ এপ্রিল আগরতলা থেকে শিলচরগামী ট্রেনে চড়েছিল ৩১ বছর বয়সী বিমাকর্মী মিঠন। গন্তব্য করিমগঞ্জ। হঠাৎ তার নজর পড়ে ট্রেনের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসা চার কিশোরীর দিকে। বয়স কত আর হবে! ১৭-১৮। সঙ্গে বসা তিন যুবক। এরা কি তাদের আত্মীয়? ভাবভঙ্গিতে সংশয় জাগে তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে মনে আসে এক ঝাঁক প্রশ্ন। ধর্মনগর আসতেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। তিন যুবকের একজন সেখানে নেমে পড়ে। কিশোরীদের বলে যায়, ‘‘এরা তোমাদের শিলচর নিয়ে গিয়ে কাজ জুটিয়ে দেবে।’’ মিঠনও ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করেন তাদের সঙ্গে। যুবক দুটি জানায়, কিশোরীরা শিলচরে আত্মীয়বাড়ি যাচ্ছে। তারা তাদের পৌঁছে দেবে। কিন্তু কোথায় আত্মীয়বাড়ি, কিছুই বলতে পারছিল না কিশোরীরা। এরা যে অপহরণকারীদের খপ্পড়ে পড়েছে, তা আর বুঝতে বাকি থাকে না মিঠনের। তিনি চার কিশোরীকে তাঁর সংশয়ের কথা জানান। এ বার ঘাবড়ে যায় এরাও। কিন্তু অপহরণকারীরা কী সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র। তারা মিঠনের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করে। কামরা ভর্তি মানুষ ছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি, সবাই মজা দেখছিল। তখনই এক স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায়। আরপিএফ-কে ডেকে আনতে নেমে পড়েন মিঠন। সেই সুযোগে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
এ বার চার কিশোরীর কী হবে? ত্রিপুরা পুলিশের এক কর্তাকে ফোন করেন তিনি। ট্রেন থেকেই পুরো ঘটনা জানান করিমগঞ্জ পুলিশকে। জানানো হয় কিশোরীদের বাড়িতেও। রাতের মতো চার কিশোরীকে তাঁর বাড়িতেই আশ্রয় দেবার পরামর্শ দেন সকলে। স্ত্রী বাবলিকে ফোন করেন মিঠন। তিনিও একই কথা বলেন। পর দিন করিমগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আগরতলা থেকে অভিভাবকরা এসে মেয়েদের নিয়ে যান।
চার জনেরই বাড়ি পশ্চিম ত্রিপুরার বড়জলায়। ওই এলাকাতেই গয়নার দোকানে কাজ করত অপহরণকারীদের একজন। তার পরামর্শেই কাজের আশায় ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিল চার কিশোরী। ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, যুবকটি পলাতক। |
|
|
|
|
|