প্রত্যাশার শুক্রবার। কিন্তু সেই শুক্রবারেই আশা-নিরাশার দু’রকম ছবি দেখলেন অভিনেতা কমল হাসন। এক দিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে তাঁর প্রযোজিত একশো কোটির ছবি ‘বিশ্বরূপম’-এর মুক্তি ঘিরে ছড়াল বিতর্ক। তাঁর নিজের রাজ্য তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণের তিন রাজ্যে ছবিটির প্রদর্শনীর উপরে জারি হল নিষেধাজ্ঞা। আর এমন একটা দিনেই তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন রজনীকান্ত। প্রায় চার দশক আগে যে নায়কের সিনেমায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি, আজ সেই কমল হাসনের সমর্থনে মুখ খুলে রজনীকান্ত জানালেন, কমলের পক্ষে কাউকে আঘাত করা সম্ভবই নয়। ‘বিশ্বরূপম’-এর মুক্তি নিয়ে গত ক’দিন ধরেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল। একটি গোষ্ঠীর অভিযোগ, ছবিটিতে তাঁদের ধর্মাবলম্বী মানুষদের ‘নেতিবাচক’ ভাবে দেখানো হয়েছে। ক্ষোভ মেটাতে ছবি মুক্তির আগে সেই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের জন্য ‘বিশ্বরূপম’-এর বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করেছিলেন কমল হাসন। সেই উদাহরণ এ দিন তুলে ধরে রজনীকান্ত বলেন, “সেন্সর বোর্ডের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেও ওই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জন্য বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন কমল। এর থেকেই ওঁদের প্রতি কমলের শ্রদ্ধার আন্দাজ মেলে।” ‘বিশ্বরূপম’ আটকালে প্রায় একশো কোটি টাকার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রজনীকান্তের। |
সে আশঙ্কা নেহাত অমূলকও নয়। গত কাল ছবিটির প্রদর্শনীর উপর তামিলনাড়ু সরকারের ১৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছিলেন কমল। মাদ্রাজ হাইকোর্ট জানায়, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ছবিটির প্রদর্শনী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত সেখানে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ। একই পথে হেঁটেছে কর্নাটকও। তবে ২৭ জানুয়ারি বেঙ্গালুরু-সহ কর্নাটকের বাকি অঞ্চলের অল্প কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা বিশ্বরূপম-এর। নিরাপত্তার স্বার্থে হায়দরাবাদেও ছবিটির প্রদর্শনী এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেরলে অবশ্য নির্বিঘ্নেই মুক্তি পেয়েছে ‘বিশ্বরূপম’।
এই পরিস্থিতিতে কমল হাসনের হয়ে রজনীকান্তের আসরে নামা অনেক হিসেব বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। দক্ষিণের সিনেমা-শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের বক্তব্য, প্রায় চার দশকের সম্পর্ক ওঁদের। দু’জনেই দু’জনকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন। ১৯৭৫ সালে কে বালচন্দ্র-র ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন কমল হাসন। আর ওই ছবি থেকেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন রজনীকান্ত। তিনটি জাতীয় পুরস্কার-সহ একগুচ্ছ পুরস্কার পেয়েছিল ছবিটি। তার পরেও বেশ কয়েকটি সিনেমা একসঙ্গে করেছেন দু’জনে। রজনীকান্তের এ দিনের আবেদনের পরে ‘বিশ্বরূপম’-বিরোধিতার হাওয়া অনেকটাই কমতে পারে বলে আশা অনেকের।
ছবির প্রযোজক তথা নায়ক
কমল হাসন কী বলছেন?
লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে জানালেন, ভারতীয় বিচারব্যবস্থার উপর তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বিচারব্যবস্থার সিদ্ধান্ত অবশ্য এখন সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি। সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া ছবির উপর আদৌ কি কোনও রাজ্য সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে? প্রশ্ন মণীশের।
আপাতত ক্ষোভ, প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্নে অনিশ্চিত ‘বিশ্বরূপম’-এর ভবিষ্যৎ। প্রাপ্তি শুধু একটাই।
চার দশকের পুরনো বন্ধুকে পাশে পাওয়া। নিরাশার শুক্রবারে সেই বা কম কী? |