|
|
|
|
খোলা আকাশের নীচে অঙ্গনওয়াড়ি কালনায় |
কেদারনাথ ভট্টাচার্য • কালনা |
গোটা কালনা মহকুমায় প্রায় হাজারের কাছাকাছি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোর হাল যা তাতে শিশু ও প্রসূতিদের দেখভাল কতটা কার্যকরীভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। নিয়ম অনুয়াযী, পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন দিক দেখাশোনার জন্য প্রতিটি ব্লকে এক জন করে শিশু বিকাশ প্রকল্প উন্নয়ন আধিকারিক থাকার কথা। মহকুমার পাঁচটি ব্লকের জন্য রয়েছে মাত্র দু’জন আধিকারিক। একজনের অধীনে রয়েছে তিনটি ব্লক। অন্যজনের দু’টি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মহকুমার পাঁচটি ব্লকে ছড়িয়ে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪১০। এর মধ্যে মন্তেশ্বর ও কালনা ১ ব্লকেই রয়েছে ছ’শোর বেশি কেন্দ্র। অথচ বেশির ভাগ কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন তো দূরের কথা, সামান্য নিজস্ব ঘরও নেই। যেমন মন্তেশ্বর ও কালনা ২ ব্লকেই ঘর নেই তিনশোরও বেশি কেন্দ্রে। কালনা ২ ব্লকে শৌচাগার রয়েছে মোটে ৫৫টি কেন্দ্রে। মন্তেশ্বরে পানীয় জলের ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে প্রায় ১০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। মন্তেশ্বর ব্লকে ১৩২টি কেন্দ্রই চলছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র এবং শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে। শৌচাগার নেই ৮৭টি কেন্দ্রেই। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির দেখাশোনা করার জন্য ১২টি জন সুপারভাইজারের থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩ জন। মন্তেশ্বর ও কালনা ২ ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প উন্নয়ন আধিকারিকের দায়িত্বে রয়েছেন গৌতম মজুমদার। তিনি বলেন, “মহকুমা প্রশাসনের উন্নয়নমূলক বৈঠকে আমাদের ডাকা হয়। সেখানে সমস্যার কথা জানানো হয়। সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদের উদ্যোগ সারা বছরই থাকে। অন্যান্য স্কুলে বড় জায়গা থাকলে সেখানেও গড়া যেতে পারে কেন্দ্র।” |
|
মন্তেশ্বরের একটি অঙ্গনওয়াড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
কালনা ১ ব্লকে রয়েছে ৩৪৮টি কেন্দ্র। এর মধ্যে ৪৫টি কেন্দ্রের পরিকাঠামোর হাল অত্যন্ত করুণ। এখানে সুপারভাইজার রয়েছেন তিন জন। প্রয়োজনের তুলনায় যা তিন ভাগেরও কম। কালনা ২ ব্লকে ২৭৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৪টিরই নিজস্ব কোনও ঘর নেই। প্রায় ৮৬টি কেন্দ্র চলছে প্রাথমিক স্কুল বা ক্লাবঘরের মতো জায়গায়। ২১টি কেন্দ্র চলছে খোলা আকাশের তলায়। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৭টি কেন্দ্রে ভবন তৈরির কাজ চলছে। ১১ জন সুপারভাইজারের জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৩ জন।
পূর্বস্থলী১ ব্লকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে ২৭টি। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেফালি সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “যতদূর মনে পড়ছে প্রায় ৩৫টি কেন্দ্রের পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে।” ব্লক প্রশাসনের দাবি, ১২টি কেন্দ্র চলছে খোলা আকাশের নীচে। পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানসী দাসও জানান, মাস দুয়েক আগেও এখানকার ৫৪টি কেন্দ্রের ছাদ ছিল না। তিনি বলেন, “ব্লক অফিস থেকে উদ্যোগী হয়ে বেশিরভাগ কেন্দ্রকেই কাছাকাছি স্কুলে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাবুইডাঙা গ্রামে দু’জন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য জমি দিতে চেয়েছেন। জমি পেলে পঞ্চায়েত সমিতি সেখানে পরিকাঠামো গড়ে দেবে।” কালনা ১, পূর্বস্থলী ১, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক রেবা দাস অবশ্য বিশেষ কিছু বলেত চাননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমরা সমস্যার কথা এসডিও’কে জানাই। জানতে হলে সেখানে যান।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি খাসজমি বা দান করা জমিতেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির জন্য পরিকাঠামো গড়া হয়। জমি পাওয়ার পর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নামে তা নথিভুক্ত হয়। এর পর শিশু বিকাশ প্রকল্প উন্নয়ন আধিকারিক জমির দলিল জমা দেন ব্লক অফিসারের কাছে। তার পর সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি-সহ বিভিন্ন তহবিল থেকে গড়া হয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন। সরকারি জমি অমিল, সেখানেই সমস্যা রয়েছে। কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবেও কোনও জমিদাতা এগিয়েও আসেননি। কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠির বক্তব্য, “পরিকাঠামোর সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। শিশু বিকাশ উন্নয়ন প্রকল্প আধিকারিক ও সুপারভাইজার পদের অভাব সম্পর্কে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” |
|
|
|
|
|