|
|
|
|
বিদেশিদের ডাকা হবে ৩০ জানুয়ারি |
‘আন্তর্জাতিক’ তকমা বাঁচাতে কৌশল বইমেলা কমিটির |
মিলন দত্ত |
বদলের হাওয়া। যার জেরে ৩৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বইমেলার আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই এ বছরের কলকাতা বইমেলা শুরু হচ্ছে শনিবার, ২৬ জানুয়ারি। এবং এমনটা চেয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ইচ্ছে, অতএব সব রকম নিয়ম এবং ঐতিহ্য ভেঙে বইমেলার মেয়াদ চার দিন বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড। অথচ ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএ)-এর ওয়েবসাইটে এখনও উল্লেখ রয়েছে, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু হচ্ছে ৩০ জানুয়ারি, চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কারণ, শুরুর দিন এগিয়ে দেওয়ার ‘তথ্য’ কার্যত গোপন করে সরকারি ভাবে ৩০ জানুয়ারিকেই বইমেলা শুরুর দিন হিসেবে জানাচ্ছেন গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। যাতে কলকাতা বইমেলা ‘আন্তর্জাতিক’ তকমা বজায় রাখতে পারে।
ত্রিদিববাবুর কথায়, “২৬ তারিখে উদ্বোধন হলেও বইমেলা প্রকৃতপক্ষে শুরু হবে ৩০ তারিখেই। তবে যাঁরা ইতিমধ্যে স্টল তৈরি করতে পারবেন, তাঁরা বই বিক্রি শুরু করবেন। বিদেশের অতিথিদের আমরা ৩০ তারিখেই আসতে বলেছি।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ৩১টি আন্তর্জাতিক বইমেলা হয়। সব ক’টিই হয় আইপিএ-র নির্ধারিত ক্যালেন্ডার মেনে। ১৯৮২ সালে কলকাতা বইমেলা আইপিএ-র সদস্য হয়। ওই বছরই কলকাতা বইমেলা আইপিএ-র ক্যালেন্ডারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ওই ক্যালেন্ডারের প্রথমেই রয়েছে কলকাতা বইমেলার নাম। কারণ, আইপিএ আন্তর্জাতিক বইমেলাগুলির জন্য যে সূচি তৈরি করেছে, সেখানে কলকাতা বইমেলা শুরুর জন্য নির্ধারিত হয়েছে জানুয়ারির শেষ বুধবার। চলবে ১২ দিন।
আচমকা এ ভাবে বইমেলা শুরুর দিন এগিয়ে দেওয়াকে কী ভাবে দেখছে ওয়াকিবহাল মহল?
গিল্ডের প্রাক্তন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এর ফলে কলকাতা বইমেলা তার আন্তর্জাতিক চরিত্র খোয়াবে। গিল্ডের প্রাক্তন সম্পাদক এবং সভাপতি কল্যাণ শাহ যেমন বলছেন, “অনেক কষ্ট করে কলকাতা বইমেলাকে আইপিএ-র ক্যালেন্ডারে ঢোকানো হয়েছিল। ক্রমে বইমেলার একটা আন্তর্জাতিক চরিত্রও তৈরি হয়েছিল। আইপিএ-র ক্যালেন্ডার অস্বীকার করে এ ভাবে বইমেলা করলে শুধু শৃঙ্খলাভঙ্গই হয় না, মেলার আন্তর্জাতিক চরিত্রও নষ্ট হয়।”
হতাশ গিল্ডের প্রাক্তন সভাপতি দেবজ্যোতি দত্তও। তাঁর কথায়, “বাইরের প্রকাশকেরা আইপিএ-র ক্যালেন্ডার মেনে বইমেলায় যোগ দেন। কলকাতার বইমেলায় তাঁদের আকৃষ্ট করতে এবং মেলাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ওই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তো দেখছি কোনও নিয়মই মানা হচ্ছে না।”
মেয়াদ বৃদ্ধির কারণটা কী?
গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিববাবু জানিয়েছিলেন, বইমেলা চার দিন এগিয়ে আনা হলে ছোট ও মাঝারি প্রকাশকেরা উপকৃত হবেন। কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ স্ট্রিট পাড়ার এক মাঝারি প্রকাশক বললেন, “সরকারি দাক্ষিণ্য পাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আবদার মেনে বইমেলা যাঁরা চারদিন এগিয়ে আনলেন, তাঁরাই জানেন কাদের লাভ হবে। আমাদের তেমন লাভ হবে কি না জানি না, তাঁদের তো কিছু লাভ হবেই।” অনেক প্রকাশকের বক্তব্য, সরকারি আনুকুল্য পাওয়ার উপরে যদি বইমেলার দিন এগোনো-পিছোনো নির্ভর করে, তা হলে পাড়ায় পাড়ায় আর পাঁচটা বইমেলার সঙ্গে কলকাতা বইমেলার তফাত রইল না।
দু’বছরে মিলনমেলার ছাড় বাবদ ৮১ লক্ষ টাকারও বেশি লাভ করেছে গিল্ড। প্রায় এক কোটি টাকা ভাড়ার মেলার মাঠ গিল্ডকে দেওয়া হয় ৪০ লক্ষেরও কমে। অবশ্য ওই টাকার কিছুটা হলেও বইপ্রেমীদের পরিষেবা দিয়ে খরচ করা হবে বলে দাবি গিল্ডের। গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু দে জানালেন, এ বছর বিনা ভাড়ার বাস চালাবে গিল্ড। বইমেলা চলাকালীন পার্ক সার্কাস, উল্টোডাঙা আর রুবি মোড় থেকে মেলা পর্যন্ত ৩৫টি বাস চলবে। বিকেল ৪টে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই বাসে উঠতে ভাড়া লাগবে না। সুধাংশুবাবু বলেন, “সরকার এত টাকা ছাড় দিচ্ছে, আর বইপ্রেমীদের জন্য আমরা এটুকু করতে পারব না!” |
|
|
|
|
|