গত অক্টোবরেই ৩৫টি বাস কিনেছে উত্তরঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি)। তারপরে চার মাসও কাটেনি। এরই মধ্যে সাতটি বাস মাঝে মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ছে। কোনও বাসের ‘ক্লাচ প্লেট’ পুড়ে যাচ্ছে মাঝরাস্তায়। কোনও বাসের টায়ার বারবার ফেটে যাচ্ছে। আবার কোনও গাড়ির ইঞ্জিন থেকে অস্বাভাবিক হারে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। রাস্তার ধারের গ্যারাজে কিংবা নিজেদের মেকানিক দিয়ে ইঞ্জিন খোলাও যাচ্ছে না। কারণ, বাসগুলি ‘ওয়ার্যান্টি’র সময়সীমার মধ্যে থাকায় বিক্রেতা সংস্থার মেকানিকরাই শুধু তা সারাতে পারবেন। না হলে তারা খরচ দেবে না। সব মিলিয়ে যাত্রীদের তো বটেই, সংস্থাও সমস্যায় পড়েছে। ওই ঘটনার পরে সংস্থার একাধিক কর্মী সংগঠনের পক্ষ থেকে বাস কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্তের দাবিও তুলেছেন। এনবিএসিটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগণ বলেন, “নতুন কয়েকটি বাসের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। নির্মাতা সংস্থার কাছে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। অন্য বাসগুলিতে একই রকম সমস্যা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবতে হবে।” পাশাপাশি, নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি বাস দেওয়া হয়েছে প্রমাণ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছে এনবিএসটিসি। |
সংস্থা সূত্রের খবর, গত অক্টোবর মাসে পর্যায়ক্রমে ৩৫টি নতুন বাস কেনা হয়। কোচবিহার, বহরমপুর, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি সহ বিভিন্ন ডিপোয় ওই বাসগুলি দেওয়া হয়। বেশির ভাগ গাড়ি বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে চালানো হচ্ছে। কোচবিহার, বহরমপুর, রায়গঞ্জ ও শিলিগুড়ি ডিপো থেকে চলাচলকারী ওই বাসগুলির মধ্যে তিন মাসে অন্তত ৭টি যান্ত্রিক সমস্যায় বিকল হয়ে পড়ে। তার মধ্যে কয়েকটি বাসের ‘ক্লাচ প্লেট’ প্লেট জ্বলে যাওয়া, হেডলাইট খারাপ হওয়া, টায়ারের সমস্যা নিয়ে বাস চালকেরা অভিযোগ জানান। তিন মাসে ওই সব বাসে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে চালকদের তরফে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। এর জেরে বাস চালকদের একাংশ নতুন বাস নিয়ে দূরপাল্লার রুটে পাঠানো নিয়ে চিন্তাভাবনার অনুরোধও করেন। নিগমের তরফে বাস সরবরাহকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অন্য বাসগুলির ক্ষেত্রে একই রকম সমস্যা হচ্ছে কি না সে ব্যাপারেও সতর্ক নজর রাখছেন নিগম কর্তারা। নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “বাস নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা কয়েকটি বাসের ‘ক্লাচ প্লেট’ বদলেও দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এমন চলতে থাকলে মুশকিল। সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন গাড়িগুলিকে ত্রুটি মুক্তি করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে ওই সংস্থার বাস যাতে আর কেনা না হয় সে ব্যাপারেও বোর্ড মিটিঙে বলব।” ক্ষুব্ধ নিগমের কর্মী সংগঠনগুলিও। নিগমের ইনটাকের এনবিএসটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক সত্যানন্দ দত্ত বলেন, “দূরপাল্লার বাসের সিট যে মানের হওয়া উচিত, ওই সব বাসে তা নেই। যাত্রীদের এসব অভিযোগ তো ছিলই। কিন্তু নতুন বাসগুলির কয়েকটি পরপর রাস্তায় অচল হয়ে পড়ায় সেগুলির মান নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বাস কেনার বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার।” তৃণমূল প্রভাবিত নিগমের কর্মী সংগঠনের নেতা আব্দুর রহমান বলেন, “তিন মাসের মধ্যে এ ভাবে বাস রাস্তায় অচল হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” সিটুর এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিউয়নের সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখে মন্তব্য করবেন।
|
• মোট বাস ৭৪০টি |
• সচল বাস ৫১০টি |
• বিকল বাস ২৩১টি |
|
এক একটি বাস কেনা হয় ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা দামে।
নতুন ৩৫টি বাস কিনতে মোট খরচ প্রায় ৬ কোটি টাকা। |
পুরানো বাস নিলামে বিক্রি করা হয়। ২০১২ সালে ৮৫টি
বাস বিক্রি করে সংস্থার প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হয়েছে। |
আয়: ফি মাসে টিকিট বিক্রি করে আয় গড়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার ও নভেম্বরে আয় ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে। |
ব্যয়: ফি মাসে গড় খরচ ১৭ কোটি টাকা। বেতন বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা। তেল বাবদ খরচ ৫ কোটি টাকা। যন্ত্রাংশ কেনা, রক্ষণাবেক্ষণে খরচ ২ কোটি টাকা। |
|
অভিযোগ |
অভিজ্ঞতা |
নতুন বাসে বেশ কয়েক দিন উঠেছি। কিন্তু এতটুকুও স্বাচ্ছন্দ্য পাইনি। হাঁটু সামনের দিকের সিটে লেগে যাচ্ছে। ঝাঁকুনি বেশি। পিছনের দিকে হেলান দেওয়া যায় না। পিঠ সোজা করে বসে থাকতে হয়।
রানা গোস্বামী, সম্পাদক দিনহাটা ব্যবসায়ী সমিতি |
বহরমপুর-আসানসোল নতুন বাস ১৮ জানুয়ারি গন্তব্যে পৌঁছনোর কিছু আগে বিকল হয়ে পড়ে। ক্লাচ প্লেট থেকে ধোঁয়া দেখে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গন্তব্যে যাওয়া হলেও ফেরার যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্মী |
|
|