হাতে গোনা ওষুধ দোকান খোলা, ভোগান্তি দুই জেলায়
রকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান চালুর প্রতিবাদে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডিএ) ধর্মঘট পালিত হল দুই মেদিনীপুরেও। সোমবার ওই সংগঠনের সমাবেশও ছিল কলকাতায়। দুইয়ে মিলে এ দিন দুই জেলায় বন্ধ রইল বেশিরভাগ ওষুধ দোকান। গুটিকয়েক খোলা দোকানে লাইন পড়েছিল দীর্ঘ। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হল রোগী ও তাঁদের পরিজনদের।
বিসিডিএ-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি আশিস চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “ধর্মঘটের বিষয়টি আগে থেকেই প্রচার করা হয়েছিল। কোন কোন ওষুধ দোকান খোলা থাকবে তা-ও প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে মানুষের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
অধিকাংশ দোকানই বন্ধ তমলুকে। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
সরকারি হাসপাতালে ওষুধ দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের দাবি, ওই দোকান থেকে পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে রোগীদের ওষুধ দেওয়া হবে। অত কম দামে ওষুধ বিক্রি করা সম্ভব নয় সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীদের পক্ষে। এতেই আপত্তি ওষুধ দোকানের মালিকদের। তাঁদের অভিযোগ, ওই সব দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই সব সংস্থার থেকে সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীরা কম দামে ওষুধ পাচ্ছেন না। ফলে ছাড় দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই এ দিনের ধর্মঘট।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল চত্বরে এখনও ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান চালুই হয়নি। তা সত্ত্বেও এ দিন তমলুক শহরের প্রায় ৬০টি ওষুধের দোকানের মধ্যে মাত্র ৮টি ওষুধের দোকান খোলা ছিল। এ দিন মেদিনীপুর শহরে ১০টি ওষুধ দোকান খোলা ছিল। তার মধ্যে অধিকাংশই মেদিনীপুর মেডিক্যালের আশপাশে। তার বাইরে বিভিন্ন মোড়ে ও বাজারে ১-২টি করে ওষুধ দোকান খোলা রাখা হয়। তাতেও অবশ্য সমস্যা মেটেনি। যেখানে ২৫-৩০টি ওষুধ দোকান খোলা থাকে, সেখানে ৩-৪টি দোকান খুলে পরিস্থিতি সামলাতে কষ্টই হয়। প্রতিটি দোকানেই প্রচণ্ড ভিড় ছিল। ওষুধ কিনতে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
ঝাঁপ খুলেছে অল্প কয়েকটি দোকানের। সেখানেই লম্বা লাইন ক্রেতাদের। মেদিনীপুর শহরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা চণ্ডীপুরের এক রোগীর আত্মীয় সনাতন মাইতি বলেন, “চিকিৎসক যে সব ওষুধ লিখে দিয়েছেন, তার সব ক’টি হাসপাতালে ছিল না। বাইরে ওষুধ কিনতে গিয়ে দেখি প্রায় সব দোকান বন্ধ। যেটি খোলা রয়েছে, সেটিতেও এত ভিড় যে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে।’’ স্ত্রী-র অসুস্থতার জন্য এ দিন তমলুক শহরের শঙ্করআড়ায় এক চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন পাঁশকুড়া স্টেশনবাজারের বাসিন্দা শেখ আবদুল শাহ। তিনি বলেন, “অনেক খোঁজ করার পর একটি ওষুধের দোকান খোলা পেলেও সেখানে সব ওষুধ পাইনি। ফলে অসুবিধায় পড়েছি।”
বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল ভৌমিক অবশ্য অসুবিধা হয়েছে বলে মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “জরুরি পরিষেবা দেওয়ার জন্য তমলুক শহর-সহ জেলার প্রতিটি এলাকায় ওষুধের দোকান খোলা ছিল। ফলে রোগীদের অসুবিধায় পড়ার অভিযোগ ঠিক নয়।”
অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পাইকারি ও খুচরো মিলিয়ে প্রায় ২২০০টি ওষুধের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে পাইকারি ওষুধের দোকান প্রায় ৬০০টি। বিমলবাবুর দাবি, ‘‘জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরো মিলিয়ে প্রায় ১৬০০ দোকানদার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিল। এর মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ীই বেশি। খুচরো ওষুধের দোকান খোলা ছিল।”
মেদিনীপুরে শহরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমও রয়েছে। বর্তমানে অনেক নার্সিংহোমেরই নিজস্ব ওষুধ দোকান রয়েছে। যাদের সেই সুযোগ নেই, তারা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে রেখে দিয়েছিল। ফলে বন্ধের কারনে ওষুধ না পেয়ে কাউকে সমস্যায় পড়তে হয়নি বলেই বিসিডিএ-র দাবি।


দাওয়াইয়ে দুর্ভোগ
ওষুধ-বিক্রেতাদের দিনভর ধর্মঘটে সোমবার রাজ্যবাসীর ভোগান্তি হল বিস্তর। ড্রাগ কন্ট্রোলের খবর, রাজ্যে অনুমোদিত প্রায় ৩৬ হাজার দোকানের মধ্যে হাজার আড়াই খোলা ছিল। কলকাতায় প্রায় ১২ হাজারের মধ্যে খুলেছে মাত্র ২৭০টি। কেষ্টপুরে একটি দোকান জবরদস্তি বন্ধ করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ধর্মঘটের উদ্যোক্তা বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ) জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সব দোকান খোলা থাকবে।

কেন ধর্মঘট?
সরকারি হাসপাতালে ফেয়ার প্রাইস শপ (ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান) বন্ধ করাই মূল দাবি।

ফেয়ার প্রাইসে আপত্তি কেন?
ওখানে ১৪২ ধরনের জেনেরিক ওষুধ অন্তত ৩০% ছাড়ে মিলছে। ক্রেতা বেশি থাকলে ৬০%-৬৫% ছাড় দিয়েও লাভ থাকছে। ফলে অন্য ফার্মাসিতে বিক্রি কমছে।

ন্যায্য মূল্যের দোকান কত?
আপাতত ছ’টি। সরকারের লক্ষ্য প্রথমে ৩৫টি হাসপাতাল। পরে সব সরকারি হাসপাতালে দোকান খোলা।

এত সস্তা কী ভাবে?
জেনেরিক নামের ওষুধের (যেমন, প্যরাসিটামল বা অ্যানালজেসিক) বিজ্ঞাপন বা প্রচারে খরচ নেই। তাই ব্র্যান্ড নামের ওষুধের তুলনায় অনেক কমে বেচা যায়।

জেনেরিকের গুণগত মান?
একই থাকার কথা। কারণ, বাজারের প্রতিটি ওষুধের মান যাচাই করা নিয়ম। যদিও ওই যাচাই-পদ্ধতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছে। উপরন্তু জেনেরিকেও প্রস্তুতকারীর নাম লেখা থাকে।

বিসিডিএ জেনেরিক বেচছে না কেন?
ব্র্যান্ডেড ওষুধের তুলনায় লাভ কম। ফেয়ার প্রাইসের মতো বিপুল ক্রেতা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.