বছর তিনেক আগে চালু হওয়া ‘শিক্ষার অধিকার আইনে’র চাপে নব্বই শতাংশেরও বেশি শিশু স্কুলের আওতায় এসেছে ঠিকই। কিন্তু প্রাথমিকে পড়ুয়ারা কী শিখছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
গত বছর স্কুলশিক্ষা নিয়ে সমীক্ষা করেছিল ‘প্রথম’ নামে একটি সংস্থা। তাতে দেখা গিয়েছে, দেশের ৯৭ শতাংশ শিশু স্কুলের আওতায় এলেও শিক্ষার মান নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় স্কুল-পড়ুয়াদের নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়। এ রাজ্য অবশ্য অনেক পিছিয়ে, মাত্র ৮৮ শতাংশ শিশু স্কুলের আঙিনায় পৌঁছেছে। তার মধ্যেও আবার প্রথম শ্রেণিতে পড়া ২৮ শতাংশ শিশুর অক্ষরজ্ঞান নেই।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাজ্যের প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের বেশির ভাগ পড়ুয়াই গড়গড় করে বই পড়তে বা অঙ্ক কষতে পারে না। বুঝতে পারে না ইংরেজি শব্দ বা বাক্যও। তৃতীয় শ্রেণির ১২ শতাংশ শিশুই এখনও পড়তে পারে না বাংলা শব্দ। ১০০ জনে ৪৫ জন প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াই চেনে না ইংরেজি অক্ষর। অষ্টম শ্রেণির ৪০ শতাংশ পড়ুয়া সহজ ইংরেজি বাক্যের মানে জানে না। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিশুদের মধ্যে ৭২ শতাংশই ইংরেজি শব্দ জানলেও তার অর্থ বোঝে না। অঙ্কের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও গভীরে। ১ থেকে ৯ সংখ্যাই চেনে না প্রথম শ্রেণির ২২ শতাংশ শিশু। অষ্টম শ্রেণির ৬০ শতাংশ পড়ুয়া সহজ ভাগটুকু পর্যন্ত করতে পারে না।
দক্ষিণ দিনাজপুরের শিক্ষক সঞ্জিত মাহাতো, মালদহের শিক্ষক সুনীল চট্টোপাধ্যায়দের মতে, “পড়াশোনায় সত্যিই পিছিয়ে পড়ছে শিশুরা। স্কুলে হয়তো ভর্তি অনেক বেড়েছে। স্কুলছুটও রোধ করা গিয়েছে অনেকাংশে। কিন্তু বাংলা, ইংরেজি বা অঙ্কে পিছিয়ে রয়েছে।” শিক্ষকদের একাংশের মতে, পুরনো পদ্ধতিতে পড়ানো ও শিক্ষকদের একাংশের সদিচ্ছার অভাবই এর মূল কারণ। সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পে পড়ানোয় উদ্ভাবনী চিন্তা প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে বইয়ের বাইরেও নানা রকম আকর্ষণীয় উপায়ে ছোটদের পড়ানোর উপরে। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশই তা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারছেন না।
দক্ষিণ দিনাজপুরের শিক্ষক বিভাস দাসের মতে, “গান গেয়ে বা ছড়া বলে, একটু অভিনয় করেও যদি ছেলেমেয়েদের অঙ্ক বা ইংরেজি শেখানো যায়, তাতে অনেক বেশি ফল মেলে। পড়াশোনার মান বাড়াতে সরকারি নজরদারিও অত্যন্ত জরুরি।” অ্যানুয়াল স্টেট এডুকেশন রিপোর্ট সেন্টার-এর জেনারেল ম্যানেজার রণজিৎ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, একই ক্লাসে বিভিন্ন মানের পড়ুয়ারা পড়ছে। কিন্তু মান অনুযায়ী প্রতি পড়ুয়ার জন্য শিক্ষক আলাদা করে যত্ন নিতে পারছেন কিনা, সেটা দেখা জরুরি।” গানেতা যে হচ্ছে না, প্রথাগত পদ্ধতির বাইরে অন্য ভাবে শিক্ষাদানের চলও যে বিশেষ হয়নি, প্রতীচী ট্রাস্টের একটি সমীক্ষায় তার স্পষ্ট ঈঙ্গিত রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, ‘আমাদের কি কোনও মানসম্মান নেই? সরকার আমাদের ক্লাসে নাচ-গান করতে বলছেন?”
২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের যে পরিকাঠামো তৈরি করার কথা, তার বেশির ভাগ কাজের ৫০ শতাংশও হয়নি। যেমন ২০১২ সালের মধ্যে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ৩০ জন পড়ুয়া প্রতি এক জন শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৬৭ শতাংশ স্কুলই সেই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। প্রায় ৫০ শতাংশ স্কুলে কোনও খেলার মাঠ নেই। ৬০ শতাংশ স্কুলে পাঁচিল দেওয়া হয়নি। ৩০ শতাংশ স্কুলে পানীয় জলের বন্দোবস্ত নেই। ৪০ শতাংশ স্কুল চলছে কোনও রকম শৌচাগার ছাড়াই। ৪০ শতাংশ স্কুলে নিয়মিত মিড-ডে-মিল দেওয়া হয় না। সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, পরিকাঠামোর এই সমস্যাগুলি চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে মিটিয়ে ফেলা হবে।
পড়াশোনার মান কবে একটু শুধরোবে?
|
মাঘে বাঘা শীত না-হোক, ফের মিলবে আমেজ |
কয়েক দিন ধরে ঘূর্ণাবর্তের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল শীত। দিনের বেলায় তো বটেই, রাতেও পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে আজ, মঙ্গলবার থেকে সেই ছবিটা বদলাতে চলেছে বলে আবহবিদদের আশ্বাস। সোমবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, দু’-এক দিনের মধ্যেই কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে পারদ ফের স্বাভাবিকের নীচে নামবে। ফিরবে মাঘের শীতের চেনা আমেজও। চলতি মরসুমের গোড়া থেকেই দফায় দফায় ব্যাট করেছে শীত। কখনও কখনও তার দুরন্ত মেজাজের সামনে তৈরি হয়েছে নতুন রেকর্ড। দু’-দু’বার শৈত্যপ্রবাহের মুখে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গ। আবার মাঝেমধ্যেই উচ্চচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের মুখে পড়ে থমকে গিয়েছে শীতের ইনিংস। আবহবিদেরা জানান, মধ্য পাকিস্তানের একটি ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা টেনে নিয়েছিল। পরে সেই ঘূর্ণাবর্ত সরে আসে পশ্চিম রাজস্থানের দিকে। তার ফলে এ রাজ্যের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন শীতপ্রেমীরা। সোমবার পারদ কিছুটা নিম্নমুখী। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, “রাজ্যে ফের উত্তুরে হাওয়া ঢুকছে। সেটা খুব শক্তিশালী না-হলেও আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমবে।” পাকিস্তানের ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হওয়ার পরে পরেই নতুন একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে হাজির হয়। সেটির দাপটে তুষারপাত হয় ভূস্বর্গে। তার জেরে শীত ফিরছে বাংলাতেও। |