|
|
|
|
রিপোর্ট চাইলেন নারায়ণন |
রাজ্যপালকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ তমালিকার |
সোমনাথ চক্রবর্তী • কলকাতা |
তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি রাজ্যপালের কাছে নালিশ জানালেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সন তমালিকা পণ্ডা শেঠ। তাঁর অভিযোগ, হলদিয়ায় পুরভোটের আগে হুমকি দিয়ে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেও বামেদের হারাতে পারেনি তৃণমূল। তাই বামেরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হলদিয়া পুরসভাকে পদে পদে বাধা দিয়ে উন্নয়নের কাজ করতে দিচ্ছে না রাজ্যের শাসক দল। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, ‘এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বহু চিঠি দিয়েছি। বলা সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন কোনও আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সুবিচারের আশায় আপনার দ্বারস্থ হয়েছি। একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো (পুরসভা)-কে রক্ষা করতে আপনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা রাখি’।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, তমালিকাদেবীর চিঠি পেয়ে বসে থাকেননি রাজ্যপাল। তিনি এ নিয়ে মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন। মুখ্যসচিব সেই চিঠি পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে। স্বরাষ্ট্র দফতর পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। মহাকরণের খবর, এক সপ্তাহ আগে নির্দেশ গেলেও এখনও রিপোর্ট পাঠাননি জেলাশাসক।
রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছর পরে হলদিয়া পুরসভার নির্বাচন হয়। গত বছর ৩ জুন। তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুকে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে মোট ২৬টি আসনের মধ্যে বামেরা দখল করে ১৫টি। সিপিএম নেত্রী তমালিকাদেবীকে চেয়ারপার্সন করে পাঁচ বছরের জন্য বোর্ড গঠিত হয়। তমালিকাদেবীর অভিযোগ, নতুন বোর্ডকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যপালকে দেওয়া চিঠির সঙ্গে গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত মাসে ৩৫টি ঘটনার উল্লেখ করে একটি তালিকা এবং তার মধ্যে কয়েকটির সিডি-ও পাঠিয়েছেন তমালিকাদেবী। |
|
স্থানীয় সাংসদ শুভেন্দুবাবুর বিরুদ্ধেও সরব তমালিকাদেবী। তিনি লিখেছেন, ‘গত ১৫ ডিসেম্বর হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে দলের এক সভায় তমলুকের সাংসদ বলেন, ২৬ ডিসেম্বরের পরে হলদিয়া পুরসভাকে বদলে দেওয়ার সাহস ও ক্ষমতা তাঁর আছে’। সাংসদের এই বক্তব্যের সিডি রাজ্যপালের হাতে তুলে দিয়েছেন তমালিকা। সাংসদের মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২৬ ডিসেম্বর শাসক দলের লোকেরা পুরসভায় তাণ্ডব চালিয়েছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিল সিপিএম। রাজ্যপালকে তমালিকা অভিযোগ করেছেন, ওই দিন বোর্ড মিটিং থাকলেও তাঁকে এবং বাম কাউন্সিলারদের পুরসভায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বহিরাগতদের নিয়ে সে দিন তৃণমূলের লোকেরা ভাঙচুরও করে। তাঁরা বোর্ড মিটিং করেন পুরসভার সার্কিট হাউসে। শুভেন্দুবাবু অবশ্য তমালিকার অভিযোগগুলিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। তাঁর কথায়, “নন্দীগ্রামের গণহত্যা ও নারী নির্যাতনে যুক্ত নেতা-নেত্রীদের কোনও কথার উত্তর আমি দেব না।” তমালিকার অভিযোগ, হলদিয়া পুরসভায় বামেরা জয়ী হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের বাধায় রাস্তা, পানীয় জল, নিকাশি, জঞ্জাল সাফাইয়ের মতো কাজ করা যাচ্ছে না। শাসক দলের কাউন্সিলাররা বোর্ড মিটিং এ উপস্থিত থাকলেও খাতায় সই করেন না। দীর্ঘ অভিযোগের তালিকায় বলা হয়েছে, ২৬ জুন শপথ নেওয়ার পরেই ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলার সদানন্দ মাইতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বছরের ২৩ জুলাই বোর্ড মিটিং-এর দিন চেয়ারপার্সন-সহ ১৪ জন বাম কাউন্সিলার এবং কর্মীদের পুরসভায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে বোর্ড মিটিং বাতিল করতে হয়। পুরসভার গাড়ির চালক মুকুন্দ বেরাকে হেনস্থা করা হয়।
এই ঘটনা নিয়ে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সে দিন পুলিশের সামনে ওই ঘটনা হলেও তারা নীরব দর্শক ছিল বলেই অভিযোগ করে চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি, আধিকারিক এবং কর্মীদের যখন-তখন নিগ্রহ করা হচ্ছে। তমালিকাদেবীর অভিযোগ, বামেদের বোর্ড ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করতে চাইছে তৃণমূলের সরকার। সে কারণেই এমন করছে তারা। |
|
|
|
|
|