রক্ষা পেলেন লাল কার্ডের ওডাফাও
দু’কোটি জরিমানা দিয়ে মোহনবাগানের নির্বাসন তুলেছিলেন ক্লাব কর্তারা। দেড় লক্ষ জরিমানা এবং এক ম্যাচের বাড়তি শাস্তি মেনে নিয়ে নিজের ফুটবলার জীবনও বাঁচিয়ে ফেললেন ওডাফা ওকোলি।
রেফারি, ম্যাচ কমিশনার ও এক সদস্যের অশোক গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনসবার রিপোর্টেই নানাভাবে ওডাফাকে দায়ী করা হয়েছিল। তাতে সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত নির্বাসন দিতে পারত ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। কিন্তু মোহনবাগানের স্ট্রাইকারের কাতর আবেদনে সাড়া দিয়ে কমিটির সদস্যরা সামান্য শাস্তি দিলেন তাঁকে। ৯ ডিসেম্বর ডার্বি ম্যাচে লালকার্ড দেখার জন্য এমনিতেই দু’ম্যাচের সাসপেনশন ও দশ হাজার টাকা জরিমানা ছিলই। সোমবারের কমিটির বৈঠকের পর সেটা সব মিলিয়ে হল তিন ম্যাচ এবং এক লাখ ষাট হাজার টাকা।
ইতিমধ্যেই সালগাওকর ম্যাচ খেলেননি মোহন-অধিনায়ক। কমিটির বৈঠকের পর যা দাঁড়াল তা হল, পরের সিকিম ইউনাইটেড এবং ইউনাইটেড স্পোর্টসের ম্যাচও খেলতে পারবেন না ওডাফা।
টোলগের সঙ্গে ওডাফার যুগলবন্দি দেখা যাবে ১ ফেব্রুয়ারি ওএনজিসি ম্যাচ থেকেই। ঘরের মাঠে খেলা। তবে কল্যাণী না যুবভারতী এখনও ঠিক হয়নি। ৯ ফেব্রুয়ারির ডার্বি ম্যাচেও খেলবেন তিনি। কমিটির বৈঠকের খবর শোনার পরই কলকাতার বিমান ধরতে বেরিয়ে যান ওডাফা। সঙ্গী তাঁর এজেন্ট আর এক প্রাক্তন চিমা ওকোরিকে নিয়ে। বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, “আমি খুশি, চাপটা অনেকটাই কমে গেল।” ফেডারেশন সূত্রেরও খবর, তাঁর পায়ে ফুটবল ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওডাফা। মোহনবাগান কর্তারা অবশ্য তাদের ফুটবলারের শাস্তি বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ। ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্র বলে দিলেন, “খুবই কঠোর সিদ্ধান্ত। ওডাফা এমন কী করেছে যে আবার শাস্তি পেল?” ক্লাব তাঁবুতে অবশ্য ওডাফার শাস্তি কম হওয়ায় খুশির হাওয়া। মোহনবাগান এমনিতেই অবনমনের আওতায়। সবুজ-মেরুন সদস্য সমর্থকদের ধারণা ওডাফা ফিরলেই টিম বাঁচবে।
কী ঘটেছিল
৯ ডিসেম্বর যুবভারতীতে ডার্বি ম্যাচে লাল কার্ড দেখলেন ওডাফা। শাস্তি- দু’ ম্যাচ সাসপেন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
রেফারির ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টে তেড়ে এসে গালাগাল এবং ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি মাঠে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ ওডাফার বিরুদ্ধে।
এক সদস্যের অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় কমিটিও সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ওডাফাকেই দোষী সাব্যস্ত করে।
১৫ জানুয়ারি ফেডারেশনের কার্যকরী সমিতির বৈঠকে ওডাফার বিষয়টি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে পাঠিয়ে দেন ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল পটেল।
কী শাস্তি হতে পারত
উত্তেজনা ছড়ানোর দায়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির ধারা অনুযায়ী, সর্বাধিক এক বছর সাসপেন্ড হতে পারতেন ওডাফা।
শেষ পর্যন্ত কী হল
অতিরিক্ত এক ম্যাচ সাসপেন্ড এবং দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচ সাসপেন্ড এবং এক লক্ষ্য ষাট হাজার টাকা জরিমানা।
কী ভাবে হল
শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে ওডাফার নরম মনোভাব ও নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। সঙ্গে পা থেকে বল কেড়ে না নেওয়ার জন্য আবেদন ফেডারেশনের কাছে।
দিল্লির ফুটবল হাউসে দুপুর তিনটে চল্লিশ মিনিটে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সভা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর ওডাফাকে প্রথমবার সভায় ডেকে পাঠান হয়। তখন সেখানে ওডাফার সঙ্গে চিমাও সভায় যান এই বলে যে, ওডাফা নাকি ভাল ইংরাজি বলতে পারে না। সেখানে নিজের সপক্ষে ওডাফা বলেন “আমি রেফারির গায়েও হাত দিই নি। তাঁকে কোনও রকম গালাগালিও দিইনি। যা হয়েছে সেটা আমি রাগের মাথায় উত্তেজনাবশত করে ফেলেছি।” তখন তাঁকে কমিটির চেয়ারম্যান এন এ খান বলেন, “আমরা ম্যাচের সিডি দেখেছি এবং রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের রিপোর্ট সবই আপনার বিপক্ষে রায় দিয়েছে। তাছাড়া সিডিতে আমরা দেখলাম আপনি রেফারির দিকে অনেকবার ছুটে গিয়ে রেফারির উপর চড়াও হচ্ছিলেন এবং বারবার তর্ক করছিলেন। গায়ে হাত তোলা ছাড়া সবই করেছেন। এ বার আপনিই বলুন আমাদের জায়গায় আপনি থাকলে কি করতেন?”
এতেই ওডাফা নরম হয়ে যান। বলেন “আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন।” তখন এন এ খান ওডাফাকে বলেন আপনি বাইরে গিয়ে আপনার যা বলার লিখে আনুন।” ঘড়িতে তখন চারটে বেজে পাঁচ, প্রায় ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে ওডাফা হলের বাইরে এসে কাগজ আর পেনের খোঁজ করতে থাকেন। কাগজ ও পেন যোগাড় করে চিমা ওকোরি খস খস করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে একটি আবেদনপত্র লিখে ফেলেন। সইটা অবশ্য ওডাফাই করলেন চিঠিতে। ওডাফা তার বৌ-ছেলেদের কথা এবং তাঁর জীবিকার কথা বলেন। লেখেন “ভদ্রমহোদয়গন আমি যদি কোনও ভুল করে থাকি তার জন্য আপনাদের কাছে আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ফুটবলই আমার জীবিকা। আমার ছোট ছোট কয়েকটি বাচ্চাও রয়েছে। তাই দয়া করে আমার পা থেকে ফুটবল কেড়ে নেবেন না।”
প্রতিক্রিয়া
রহিম নবি: ওডাফা যত তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরবে তত ভাল। ও ফিরলে আমাদের দলের শক্তি আরও বাড়বে। ওডাফার মাঠে ফেরার প্রতিক্ষায় রইলাম। এ ব্যাপারে ফেডারেশনকেও একটা বড়সড় ধন্যবাদ দিতে হবে। ওডাফার বক্তব্য শোনার পর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যরা যে রায় দিয়েছেন তাতে একজন ফুটবলারের পা থেকে বল চলে যায়নি। মাঠে নামার পর মোহনবাগানের জার্সি গায়ে ওডাফাও নিজেকে নিংড়ে দেবে।

উগা ওপারা: অবনমন বাঁচাতে গেলে এই মুহূর্তে ওডাফাকে দরকার মোহনবাগানের। আশা রাখছি, ফেডারেশনের শাস্তি মেনে নিয়ে দ্রুত মাঠে ফিরবে ওডাফা। একজন ফুটবলারের পা থেকে বল চলে যাওয়াটা সত্যিই কষ্টকর।

আমি খুশি, চাপটা অনেকটাই
কমে গেল।
ওডাফা ওকোলি
খুবই কঠোর সিদ্ধান্ত। ওডাফা এমন কী
করেছে যে আবার শাস্তি পেল?
অঞ্জন মিত্র
সভা থেকে বেরিয়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবী প্রেমাশিস চৌধুরি বললেন “ওডাফা পরে নরম হলেও প্রথমে কিন্তু বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন। আমরা তখন ওকে বলি দেখুন সব জিনিষের মতই খেলাতেও নিয়মকানুন আছে। এবং সেগুলো খেলোয়াড়দের মেনে চলা উচিত। না করলে তার জন্য কড়া শাস্তি নিয়মেই আছে।” এর পরেই নাকি ওডাফা আর তাঁর সঙ্গী চিমা নরম হতে শুরু করেন। তারপরই শুরু হয় নাটক। নিজেদের মধ্যে প্রায় এক ঘন্টার উপর দফায় দফায় কথা বলে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ সচিব কুশল দাস এবং তার দশ মিনিট পর আই-লিগের সিইও সুনন্দ ধরকে ডেকে পাঠান কমিটির চেয়ারম্যান। তার পর লেখা শুরু হয় রায়। প্রায় এক ঘন্টা ধরে রায় তৈরি করা হয়। আবার সেই পাতা ছিঁড়েও ফেলা হয়। এই রকম-চার-পাঁচবার করতে করতে প্রায় সন্ধে সাতটায় শাস্তি নির্ধারণ হয়। বড় শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়ে যান ওডাফা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.