নিজস্ব সংবাদদাতা • ফাঁসিদেওয়া |
সম্প্রতি পরিযায়ী পাখিদের বাঁচাতে মহানন্দা ব্যারেজের এক পাশে বনভোজন পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবিকে গুরুত্ব দিতেই ব্যারেজের অপরপাশে বাংলাদেশের দিকে নতুন পিকনিক স্পটের পরিকাঠামো তৈরিতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। সোমবার ব্লক প্রশাসন, পুলিশ, পঞ্চায়েত আধিকারিকেরা ব্যারেজ এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকায় একটি বনসৃজন অনুষ্ঠানের পর ওই ঘোষণা করেছেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, ব্যারেজের ধার বরাবর লোহার রেলিং, ছাউনি দিয়ে বসার ব্যবস্থা, গাছ লাগিয়ে এলাকাটিকে সাজা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এদিন সকালে আধিকারিকদের কাছে পেয়ে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, তিন থেকে চার মাস এলাকায় থাকা পরিযায়ী পাখির রক্ষার দায়িত্ব গ্রামবাসীদেরই। কিন্তু পুজোর পর থেকে শীতের গোটা মরশুমে পিকনিক দলের উপর এলাকার ব্যবসায়ী এবং গ্রামবাসীরা উপকৃত হন। হোটেল, মাংস-মাছের দোকান, চায়ের দোকান, মুদিখানা’র দোকান-সহ নানাভাবে তাঁদের আয় হয়। কিন্তু ব্যারেজ এলাকায় বনভোজন পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার প্রচারে তাঁদের রোজগারে টান পড়ছে। নতুন এলাকা পিকনিকের জন্য নির্ধারিত হলে সমস্যা মিটবে। ফাঁসিদেওয়ার বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্র জানান, এলাকার জৈব বৈচিত্র রক্ষার জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। ব্যারেজে যেপাশে পরিযায়ীরা আসে, সেখানে কোনওভাবেই বনভোজন আর করতে দেওয়া হচ্ছে না। এলাকাটি শুধু ঘুরে দেখা যাবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা ভেবে ব্যারেজের অন্যপারে পিকনিক করাই যেতেই পারে। বিডিও বলেন, “বন দফতর ও সেচ বিভাগের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এলাকার সৌন্দর্যকরণ করা হবে।” |
একঝাঁক। জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি। |
ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি প্রণবেশ মণ্ডলের কথায়, “পাখিদের পাশাপাশি বাসিন্দাদের বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ব্যারেজে আসা বাসিন্দা ও পযর্টকদের উপর আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল। দুই দিকে ভারসাম্য রেখেই কাজ করা হচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যে এলাকাটি নতুন করে সাজা হবে।” গজলডোবা, রসিকবিল, কুলিকের মতই উত্তরবঙ্গে মহানন্দা ব্যারেজটি পরিযায়ী পাখিদের জন্য বিখ্যাত। রুডি শেলডাক, কমনটিল, পিনটেল, গাডওয়াল, হুইসলিং টিল, কমন পোচার্ড, রেড ক্রিসটেড পোচার্ড, পার্পেল হেরন, পায়েড হেরন-সহ একাধিক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি প্রতি বছর ব্যারেজে এসে আস্তানা গাড়ে। সুদূর কাশ্মীর, লাদাক ছাড়াও চিন, সাইবেরিয়া, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম আমেরিকা থেকে নভেম্বর মাস পাখিগুলি মার্চ মাস অবধি এলাকায় থাকে। সম্প্রতি হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) এলাকায় সমীক্ষা জানায়, চলতি বছরে ব্যারেজে ৩২০০ পরিযায়ী পাখি এসেছে।
ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মাছ ধরা, চর দখল, চাষবাসের বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত। এতে প্রতিবছর পাখিদের ক্ষতি হচ্ছে। মৎসজীবীদের শীতের মরশুমে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা দরকার।” একই দাবি জানিয়েছেন এলাকার মৎসজীবী গোপেন সরকার, অরুণ সরকার এবং কিরণ সরকারেরা। স্থানীয় বাসিন্দা রমেন সিংহ, পরিমল সিংহরা বলেন, “অনেক সময় তির দিয়ে পাখি শিকার হয়। আমরা, মৎসজীবীদের নিয়ে তা রুখেছি। বিকল্প পিকনিক স্পট তৈরি না হলে এলাকার ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাবেন। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।” |