সার্ধশতবর্ষে এখনও বিস্মৃত
উপেন্দ্রকিশোর
লেন কী মশাই? এই জানুয়ারীর শীতে দার্জিলিং? এখন তো বেলা বারোটায় বরফ পড়বে সেখানে! দার্জিলিঙের সীজন সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর।” বছর ষাটেক আগে বাঙালির দার্জিলিংকে শীতে উপেক্ষিতা করে সাড়া জাগিয়েছিলেন নিরঞ্জন মজুমদার ওরফে রঞ্জন। তাঁর দার্জিলিং-যাত্রায় সহযাত্রী ওই প্রশ্নটি করেছিলেন। কিন্তু সিজন হোক চাই না হোক, দার্জিলিং বাঙালির ভ্রমণে দেড়শো বছরেরও বেশি জড়িয়ে আছে। আর সেই জড়িয়ে থাকার বহু নিদর্শন আজও ছড়িয়ে আছে পত্রিকার পাতায়। সখা, সাথী, সন্দেশ ও মুকুল পত্রিকায় নিজের দার্জিলিং ভ্রমণের বিবরণ লিখেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তাঁর জন্মের এই সার্ধশতবর্ষেও টুনটুনির বই, গুপী গাইন বাঘা বাইন-এর বাইরের সে সন্দেশ ক’জন জানেন সন্দেহ। এ কলকাতা জানে গড়পার রোডের ইউ রায় অ্যান্ড সন্স বাংলা ছাপার জগতে কী আলো এনেছিল। তবে সে আজ শুধু এলিট চর্চার বিষয়। কোনও যথার্থ উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র, যার মধ্যে থাকবে তাঁর সমস্ত লেখা, আঁকা সব ছবি, তোলা সব আলোকচিত্র তাঁর মৃত্যুর শতবর্ষ ছুঁতে চললেও এখনও অধরা।
কিঞ্চিৎ আশার আলো, বইমেলায় ‘চর্চাপদ’ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দার্জিলিং, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ও সৌম্যেন পাল সম্পাদিত সটীক সচিত্র সংস্করণে। সযত্ন-প্রকাশনায় দার্জিলিং ও তিব্বত নিয়ে উপেন্দ্রকিশোরের লেখাগুলি তাঁর তোলা ও আঁকা ছবি-সমেত সংকলিত। টীকায় প্রায় প্রতিটি প্রসঙ্গের বিবরণ আছে। পাহাড়, মেঘ, ঝর্না, সূর্যের আলো মিলিয়ে নামলিপি এঁকেছেন সৌজন্য চক্রবর্তী। কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়ের মতো সেই গদ্যে দার্জিলিং আরও এক বার চোখের সামনে: ‘পর্বতের কোলে মেঘের নিদ্রা দেখিতে বড়ই সুন্দর। চঞ্চল মেঘ সমস্ত দিন ধরিয়া ছুটাছুটি করে। তাই কি সন্ধ্যাকালে তাহার ঘুম পায়? ওই দ্যাখো, তাহারা কেমন শান্ত হইয়া পর্ব্বতের গায়ে শুইয়া পড়িয়াছে। সমস্ত রাত্রি তাহারা ওইরূপ ভাবে কাটায়। সকালবেলা সূর্যের আলো তাহাদের গায়ে পড়িবামাত্র তাহাদের ঘুম ভাঙিয়া যায়।’ ১০ মে ১৮৬৩ উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম। বিবিধ বর্ষ পালনের হুজুগে বাঙালির ঘুম কিন্তু এখনও ভাঙল না।

দেশনায়ক
‘দেশনায়ক’ অভিধাটি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেটা ১৯৩৯ সুভাষচন্দ্র তখনও পুরোদস্তুর ‘নেতাজি’ হয়ে ওঠেননি, দ্বিতীয় বার কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েও পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন, সেই সময়েই বিচলিত রবীন্দ্রনাথ অভিধাটি দেন। সুভাষচন্দ্রের মতো যোগ্য নেতা ভারতবর্ষ বিশেষ পায়নি, আটাত্তর বছরের কবির উপলব্ধি। সুতরাং নেতাজির প্রথম সম্পূর্ণ ইতিহাস-ভিত্তিক জীবনীটির (অনূদিত) বাংলা নাম সাব্যস্ত হল দেশনায়ক: সুভাষচন্দ্র বসু ও ভারতের মুক্তি সংগ্রাম(আনন্দ), যদিও মূল ইংরেজি বইটির নাম ছিল হিজ ম্যাজেস্টি’জ অপোনেন্ট: সুভাষচন্দ্র বোস অ্যান্ড ইন্ডিয়া’জ স্ট্রাগল এগেনস্ট এম্পায়ার (পেঙ্গুইন ও অ্যালেন লেন)। রচয়িতা, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ্, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুগত বসু। নেতাজির ১১৬তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্-লগ্নে ২০ জানুয়ারি, নেতাজি ভবনে বাংলা অনুবাদ-গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর হাতে প্রথম বইটি তুলে দিলেন নেতাজির জার্মান-বাসিনী কন্যা অনিতা বসু-পাফ। ছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও। আর ছিল সাশা ঘোষালের উদাত্ত গান। বিবেকানন্দের ভাবশিষ্য নেতাজি যে দেশবাসীকে ত্যাগ ও সেবায় জীবন উৎসর্গের ডাক দিয়েছিলেন, মনে করিয়ে দিয়ে ধ্বনিত হয়ে উঠল: ‘‘সংশয়পারাবার অন্তরে হবে পার, উদ্বেগে তাকায়ো না বাইরে।”

আকস্মিক
কাজের শীর্ষে তিনি তখন। গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত। এমনই এক সময়ে, আকস্মিক ভাবে, চলে গেলেন ইতিহাসবিদ্ কুমকুম চট্টোপাধ্যায়। পেনসিলভ্যানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াতেন তিনি, সেখানেই ঘটল তাঁর রোগক্লেশ ও জীবনাবসান। প্রেসিডেন্সি-র উজ্জ্বল ছাত্রী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট, ১৯৮৯ থেকে মার্কিন দেশে ইতিহাসের শিক্ষক। ১৭-১৯ শতকের উত্তর ভারতের বাণিজ্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে তাঁর সমৃদ্ধ গবেষণা। প্রধান দুটি বই মার্চেন্টস, পলিটিকস অ্যান্ড সোসাইটি ইন আর্লি মডার্ন ইন্ডিয়া, বিহার (১৭৩৩-১৮২০), এবং দ্য কালচার্স অব হিস্টরি ইন আর্লি মডার্ন ইন্ডিয়া: পার্শিয়ানাইজেশন অ্যান্ড মুঘল কালচার ইন বেঙ্গল আধুনিক ভারত ও বাংলার ইতিহাসে আগ্রহী পাঠকের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে গণ্য। ২২ জানুয়ারি তাঁর স্মরণে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এ আয়োজিত হয়েছে একটি সভা, বিকেল ৪ টেয়। ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র, লক্ষ্মী সুব্রহ্মণ্যম এবং ইন্দ্রাণী চট্টোপাধ্যায় আলোচনা করবেন তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত নানা চিন্তাভাবনা বিষয়ে।

গণতন্ত্রের সংকট
দেশ স্বাধীন হলেও গাঁধীজির ‘স্বরাজ’ কি আমরা পেয়েছি? এই মৌলিক প্রশ্নটি নিয়ে নির্মলকুমার বসুর ১৯৪৭-’৬৭-র মধ্যে লেখা প্রবন্ধগুলি সংকলিত হয়েছিল গণতন্ত্রের সংকট-এ। রচনাগুলি আজও সমান প্রাসঙ্গিক। বিস্মৃত বইটি সংযোজন সহ পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে অভ্র ঘোষের সম্পাদনায়। ’৬৭ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ অতুল্য ঘোষকে বিরোধীপক্ষ যে ভাবে চিত্রিত করতেন, তা যে বাস্তবনিষ্ঠ ছিল না, অতুল্যঘোষ: এক নিঃসঙ্গ পান্থ বইয়ে স্বীকার করেছেন এ কালের বামপন্থী অজয় চট্টোপাধ্যায়। সূত্রধর-এর উদ্যোগে দু’টি বই-ই প্রকাশিত হবে ২২ জানুয়ারি সন্ধে ছ’টায় ভারতসভা হলে। প্রকাশ করবেন শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত। নির্মলকুমার বসু ও অতুল্য ঘোষ স্মারক সম্মান পাবেন অভীককুমার দে ও হিমাংশু হালদার। গণতন্ত্র প্রসঙ্গে বলবেন প্রদীপ বসু।

উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে নতুন বছর মানেই ‘দ্য ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স’। ১৯৫২-য় শুরু, প্রৌঢ়ত্বেও একই গরিমা। এ বারের সারারাতব্যাপী ৬১তম বার্ষিক অধিবেশন ২২-২৫ জানুয়ারি নজরুল মঞ্চে, নিবেদনে ‘দেশ’ পত্রিকা। নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠান সাজানো। থাকবেন যশরাজ, ছান্নুলাল মিশ্র, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, শিবকুমার শর্মা, পারভীন সুলতানা, শুভদা পারাদকর, শাহিদ পারভেজ, গুন্ডেচা ব্রাদার্স, উল্লাস কাশালকর, বিশ্বমোহন ভাট, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, পার্থসারথি, নিশাত খান, কৈবল্যকুমার গুরাভ, মিতা নাগ, মিতা পণ্ডিত, মঞ্জুষা পাটিল, আরশাদ আলি খান, গণেশ ও কুমারেশ রাজগোপালন। সঙ্গীত সম্মান পাচ্ছেন সেতারশিল্পী পণ্ডিত মণিলাল নাগ। অন্য দিকে ৫৬’য় পড়ছে ‘উত্তরপাড়া সঙ্গীত চক্র’-র সঙ্গীত সম্মেলন। এক সময় আসতেন বড়ে গোলাম আলি, রবিশঙ্কর, বিসমিল্লা খান, বিলায়েত খান, আলি আকবর, বিরজু মহারাজ প্রমুখ। চেষ্টা থাকে ‘উত্তরপাড়া সঙ্গীত ভবন’-এর মাধ্যমে নতুন প্রতিভা তৈরিরও। এ বারের অনুষ্ঠান ২৩-২৫ জানুয়ারি উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরির মাঠে।

সুবর্ণ জয়ন্তী
বাবা চিন্ময়জীবন ঘোষের সান্নিধ্যে কবিতার সঙ্গে পরিচয়। কাজী সব্যসাচীর প্রেরণায় ১৯৬৩-তে নিয়মিত আবৃত্তি শুরু প্রদীপ ঘোষের। ১৯৭০-এ প্রথম একক অনুষ্ঠান। কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী এমন আবৃত্তি অনুষ্ঠান সেই প্রথম। সে বছরই এইচএমভি থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড বেরোয়। কলকাতা দূরদর্শনের প্রথম দিনের সম্প্রচারেও ছিলেন তিনি। তাঁর আবৃত্তি-ভুবনের পঞ্চাশ পূর্ণ হল। সত্তর পেরিয়েছেন নিজে। তাঁর রেকর্ড-সিডি প্রায় একশো। আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে অংশ নিয়েছেন বিবিসি সহ বিদেশি রেডিয়োতে। ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাংলা আকাদেমিতে বেলঘরিয়া আবৃত্তায়ন ও বাণীচক্র তাঁকে জীবন-কৃতি সম্মান দেবে। থাকবেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

নবরূপে মেঘনাদবধ
অল্প বয়সে রবীন্দ্রনাথ নির্মম সমালোচনা করেছিলেন মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর। পরে বুঝতে পারেন ওই কাব্যের মর্ম। কিন্তু রবি-করে আচ্ছন্ন এই বঙ্গ বুঝেছে কি? ১৮৬১-তে রবীন্দ্রনাথের জন্মবর্ষেই প্রথম প্রকাশ এটির। সুতরাং এর সার্ধশতবর্ষ পালনে উদ্যোগী পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ। তাঁদের সংগঠন ‘উপমা’ তৈরি করেছে এর একটি পাঠাভিনয়। রজত বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজয়লক্ষ্মী বর্মণের তত্ত্বাবধানে অভিনয়ে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবেশ রায়চৌধুরী, রত্না মিত্র, দেবাশিস রায়চৌধুরী প্রমুখ। প্রথম অভিনয় ২৫ জানুয়ারি মধুসূদনের জন্মদিনে মধুসূদন মঞ্চে।

কার্টুন চর্চা
বাংলায় তখন চরম খাদ্যসঙ্কট, অল্প দামে মিলছিল কলা স্বাস্থ্যকর, বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। কার্টুন আঁকলেন কাফী খাঁ, প্রফুল্লচন্দ্র ফলের দোকানি, কলা বাড়িয়ে ধরেছেন জ্যোতি বসুর দিকে। আঁতকে পিছিয়ে যাচ্ছেন জ্যোতিবাবু। কার্টুনিস্টদের উপর সরকারি খাঁড়া নামেনি। আবার বাঘের হাতে ‘বেনিফিটস অব ফাস্টিং’ নামে একটি বই, গাঁধীজি বইয়ের একটা পাতায় আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন বাঘটিকে। বাঘের চোখ বইয়ের দিকে নয়, গাঁধীর দিকে। এঁকেছিলেন ডেভিড লো। রাজনৈতিক কার্টুনের ইতিহাস এ ভাবেই রয়েছে খবরের কাগজ আর সাময়িকপত্রে। সে সবেই মজে থাকেন সুমিত ঘোষ, পেশায় শিক্ষক। ভালবাসেন রাজনৈতিক কার্টুন দেখতে ও জমাতে। সঙ্গে সঙ্গে তার ইতিহাসও সন্ধান করেছেন। সে সব নিয়েই প্রকাশিত হল তাঁর ভারতে রাজনৈতিক কার্টুন চর্চা(আনন্দ)। প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী, শঙ্কর, আহমেদ, কুট্টি, রেবতীভূষণ, আবু এব্রাহাম, আর কে লক্ষ্মণ, ও ভি বিজয়ন, রাজিন্দর পুরি, অমল চক্রবর্তী প্রমুখ কার্টুনিস্টের কাজ নিয়ে আলোচনা আছে এ বইয়ে।

সন্দেশ-শিল্পী
‘তিনি অকৃতদার। কিন্তু চারটি সন্তানের জনক হয়েছেন।’ আনন্দবাজার পত্রিকায় নকুড়ের সন্দেশ নিয়ে এক লেখার শুরুটা ছিল এমনই। সিমলের শতাব্দীপ্রাচীন গিরীশ-নকুড়ের দোকান ও প্রতিষ্ঠানের মেজবাবু প্রশান্ত নন্দী যেন সমার্থক। সরের রোল, মৌসুমি, সৌরভ, মোহিনীর পরে প্রশান্তবাবুর সন্তান-সন্ততির সংখ্যা বেড়েছে। ইদানীং কুল্পির সন্দেশায়ন নিয়ে মেতেছিলেন। ১৬ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন। বাবার অকালপ্রয়াণে ১২ বছর বয়সেই দোকানে বসা। ৫৬-তে চিরঅবসর। দিনে ঘুমোতেন। নতুন আইডিয়ার খোঁজে রাত জাগতেন। জ্যোতিষচর্চায়ও তুমুল আগ্রহ। নতুন সন্দেশের জন্মও হত নক্ষত্র বিচার করে। মিষ্টির স্বাদে আলাদা মাত্রা জুড়ত সদালাপী মানুষটির বুদ্ধিদীপ্ত সরস টিপ্পনি।

ঋতু-উৎসব
একের পর এক ঋতু-উৎসব শান্তিনিকেতনের প্রাঙ্গণ ভরে তুলেছে। শুরুটা করেন শমীন্দ্রনাথ: ১৯০৭-এর শ্রীপঞ্চমী-তে। এই পটভূমিতেই লালিত প্রমিতা মল্লিক। তাঁর ‘ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন’ ১৭তম বার্ষিক উৎসবে কলামন্দির-এ ‘ছয় ঋতু যে নৃত্যে মাতে’ অনুষ্ঠানে উপহার দিল এরই প্রতিধ্বনি। শুরুতেই ছ’টি ঋতুর প্রতীক হিসেবে ছ’টি শিশুকে নৃত্যের মধ্যে দিয়ে আবাহন করেন শিল্পী প্রীতি পটেল। কালিদাসের ঋতুসংহার থেকে সংস্কৃতে পাঠ করেন প্রমিতা মল্লিক। প্রদীপ মলহোত্রর কণ্ঠে আবৃত্তি এক অন্য মাত্রা যোগ করে। গান-নাচ-ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্রের আবহে এক বিশ্বজনীন আহ্বান বেজে উঠল সে সন্ধ্যায়।

ছয় দশক
যে সাফল্য মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা আদৌ পছন্দ করি না। আমার থিয়েটার সব ধরনের মানুষজন দেখেন, পিসিমা থেকে বাচ্চা ছেলে, মুদির দোকানি, গৃহবধূ, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক... । দর্শককে রেসপেক্ট করি, তাই আমার বিশ্বাসটুকু সহজ ভাবে তাঁদের কাছে কমিউনিকেট করার চেষ্টা করি। বলছিলেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য, সায়ক নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার, বিজন থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা। শেষ হওয়া বছরটায় ষাট পূর্ণ হল তাঁর। ’৭৮-এ শুরু, ’৭৯-তে তাঁর ‘দুই হুজুরের গপ্পো’তেই দর্শক মাত। একে-একে আশি-নব্বই দশকে ‘জ্ঞানবৃক্ষের ফল’ ‘দায়বদ্ধ’ ‘বাসভূমি’ ‘কর্ণাবতী’ ‘অ-আ-ক-খ’ পেরিয়ে নতুন শতকে ‘সাঁঝবেলা’ ‘দিলদার’ ইত্যাদি প্রযোজনা। হালে ‘পিঙ্কি বুলি’র পর নতুন প্রযোজনা ‘ধ্রুবতারা’ নিয়ে বললেন ‘এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যখন সত্যি যেটা সেটা বলতে পারছি না।’ জনপ্রিয়তার পাশাপাশি নাটকের নানা সম্মান-পুরস্কার তাঁর মুকুটে। অভিনয়ের থেকেও নির্দেশনা তাঁর বেশি পছন্দের, ‘তাতে সৃষ্টির আনন্দটা আরও, উইংস-এর পাশে বসে দেখতে পাই, নিজের ভাবনা কী ভাবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।’ ২৩ জানুয়ারি তপন থিয়েটারে তাঁর তিনটি নাটক নিয়ে নিভা আর্টস-এর উৎসব: ‘সারাদিন মেঘনাদ’।


স্মরণ
সকালের দিকটায় বিশপ লেফ্রয় রোডে মাঝেমধ্যেই চলে আসতেন হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, নিজের ঘরে একা-একা বসে কাজ করছেন সত্যজিৎ... এ রকমই কোনও এক দিন তিনি হাজির, সে দিন তাঁর গায়ে জমকালো একটা টি-শার্ট, দেখে সন্দীপ বললেন ‘বাবা, হারাধনকাকুর টি-শার্টের রংটা দেখেছো?’ সত্যজিৎ কাজ থেকে চোখ না তুলেই বললেন ‘দেওয়ালের রং ভাল হলে সব রঙের পর্দাই তাতে মানায়। ও পরবে না তো কে পরবে?’ সত্যজিৎকে ‘ঈশ্বর’ মানতেন যিনি, সেই হারাধনের (১৯২৬-২০১৩) হঠাৎ চলে যাওয়ার পর সেই বাড়িতে বসেই স্মৃতিতে ফিরে যাচ্ছিলেন বিষণ্ণ সন্দীপ। “যত বয়স বাড়ছিল তত কালারফুল হয়ে উঠছিলেন। ‘কেমন আছ’ জিজ্ঞেস করলেই বলতেন ‘ফার্স্ট ক্লাস, দারুণ আছি।’ এত বয়সেও কখনও বুড়ো হয়ে যেতে দেখিনি, রীতিমতো হোমওয়ার্ক করতেন, চরিত্র নিয়ে ভাবতেন, ডিরেক্টরস অ্যাক্টর। এই তো ‘বরফি’ করার সময় ফোনে বললেন ‘বুড়োদের অবজার্ভ করছি মন দিয়ে। অনুরাগ (বসু) আমাকে এখানে রে’জ অ্যাক্টর বলে পরিচয় করাচ্ছে!’ ‘ফটিকচাঁদ’ বা ফেলুদা-য় সিধুজ্যাঠার (সঙ্গে ‘গোরস্থানে সাবধান’-এর ছবি) মতো রাশভারী চরিত্র করার আর কেউ রইল না।” বহু অভিনয়ের মধ্যে ‘মহানগর’, ‘কাপুরুষ’,‘আকাশকুসুম’, ‘দেখা’, ‘পরিণীতা’ স্মরণীয়। ‘ক্রান্তিকাল’-এর জন্যে জাতীয় পুরস্কার, রাজ্য সরকারের ‘বঙ্গবিভূষণ’ পেয়েছেন। ’৪৮-এ ‘দেবদূত’-এ আত্মপ্রকাশ, দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে দেড়শোর বেশি ছবিতে অভিনয়! ‘তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হবে নন্দনে ২৭ জানুয়ারি বিকেল ৫টায়, তাঁর পরিবারের মানুষজন থাকবেন, দেখানো হবে বরযাত্রী’, জানালেন অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। ছবি: হীরক সেন
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.