অবশেষে আলজিরিয়ায় রক্তক্ষয় শেষ হল। তবে এখনও নিখোঁজ বহু পণবন্দি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁদের খোঁজ চালাচ্ছে আলজিরিয়ার বিশেষ সেনা দল। সব মিলিয়ে ২৫ জন বিদেশি ও আলজিরীয় পণবন্দি নিহত হয়েছেন ইসলামি জঙ্গিদের হাতে। সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৩২ জঙ্গিও।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আজ জানান, তিন ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায়। চার জন এখনও নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাঁরাও জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ জানান, জঙ্গি হামলায় আটকে পড়া ২২ জন ব্রিটিশকে দেশে ফেরানো হয়েছে। কঠোর হাতে সন্ত্রাসবাদ দমন করার আহ্বান জানান ক্যামেরন।
জেজিসি কর্প নামে জাপানের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মুখপাত্র জানান, তাঁদের দশ জন জাপানি ও সাত জন অন্য বিদেশি কর্মীর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁরা এও জানান যে ৭৮ জন কর্মীর মধ্যে ৬১ জন নিরাপদে আছেন। মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে, জঙ্গি হামলায় আটক দুই মালয়েশীয়ের এক জন মারা গিয়েছেন। অপর জনের কোনও খোঁজ নেই। জানা যায়নি নিখোঁজ ৫২ জন ফিলিপিন্সবাসী আদৌ জীবিত না মৃত।
আলজিরিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, শেষ ৭২ ঘণ্টায় ৩২ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। ৬৮৫ জন আলজিরীয় ও ১০৭ জন বিদেশিকে উদ্ধার করেছে সেনা। |
বাড়ি ফিরছেন বিদেশি কর্মীরা। আলজিরিয়ার এক বিমানবন্দরে। ছবি: রয়টার্স |
আলজিরিয়ার সেনা সূত্রের খবর, প্রায় ৩০ জন জঙ্গি বুধবার সকালে আক্রমণ করে ওই গ্যাস ক্ষেত্রটিকে। লিবিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকেছিল তারা। কারণ ওই গ্যাস ক্ষেত্রটি ইন আমেনাস শহর থেকে কিছু দূরে, সাহারা মরুভূমির মধ্যে লিবিয়ার কাছে অবস্থিত। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ‘সিগনেটরিজ অফ ব্লাড’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠন আক্রমণ চালায়। যারা নিজেরা আল কায়দার সহযোগী। এদের মুখপাত্র, মোক্তার বেলমোক্তার পণবন্দিদের প্রাণের বিনিময়ে দু’টি শর্ত দেয়। প্রথমটি ছিল প্রতিবেশী দেশ মালি থেকে ফরাসি হস্তক্ষেপ বন্ধ করার দাবি। অন্যটি হল, আমেরিকায় বন্দি আল কায়দা জঙ্গি ওমর আবদেল রহমান ও আফিয়া সিদ্দিকির মুক্তি। কিন্তু আমেরিকা কোনও ভাবেই এই শর্তে রাজি হয়নি। আলজিরীয় সেনাপ্রধান জঙ্গিদের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য ডাক দিলেও কাজ হয়নি। শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রমাদ গুনেছে সেনা বাহিনী। উপায় না দেখে আক্রমণের পথ নেয় তারা। এতে সেনাদের সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ হয়। উদ্ধার করা সম্ভব হয় স্থানীয় শ্রমিকদের। কিছু শ্রমিক পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। শনিবার সকালে মোক্তার জানায়, বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে ৩৪ পণবন্দির মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও ৭ জন তাদের হেফাজতে রয়েছে। এদের মধ্যে তিন জন বেলজিয়ামের নাগরিক। দু’জন মার্কিন। এক জন জাপানি এবং এক জন ব্রিটিশ। শনিবার আমেরিকার বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন আলজিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন। পণবন্দিদের জন্য তাঁর উদ্বেগ ও জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেন। আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লিও পানেত্তা এ দিন একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন,“আমাদের নাগরিকদের বাঁচাতে সমস্ত রকম পদক্ষেপ করতে আমরা রাজি।” উত্তর আফ্রিকাকে আল কায়দা অধ্যুষিত বলেও চিহ্নিত করেন তিনি। ওই গ্যাস ক্ষেত্রের এক কর্মী ইবা অল হাজা পণবন্দি হিসেবে দু’দিন ছিলেন। তিনি জানান, জঙ্গিরা অনেক রকমের আধুনিক অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। তারা হাজাকে বলে, “তুমি আলজিরীয় ও মুসলিম। তোমাকে মেরে আমাদের তো কোনও লাভ নেই। আমরা তো বিদেশিদের চাই।” |