পুলিশ সুপার নিজে যাননি। আইসি গিয়েছিলেন এলাকার ক্যাম্পে। বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারাও মোতায়েন করা হয়নি। শুধু স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে এক কনস্টেবল ও এক হোমগার্ড বাড়ানো হয়েছে।
বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে নিহত সিপিএম নেতা প্রদীপ তায়ের স্ত্রী চিত্রলেখা ও মেয়ে পৃথাকে নিরাপত্তা দিতে হবে বলে শুক্রবারই জেলা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। শনিবার বিকেলে চিত্রলেখাদেবী কলকাতা থেকে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু সারা দিনে এক বার ফোন করে ‘কোথায় আছেন’ জানতে চাওয়া ছাড়া পুলিশের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। রাতে এসডিপিও (বর্ধমান) অম্লানকুসুম ঘোষ তাঁদের বাড়ির কাছে পুলিশ ক্যাম্প দেখে আসেন। তবে বাড়িতে যাননি।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে বর্ধমান থানার আইসি-কে পাঠিয়েছিলাম। ওখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প আছে। সেটির শক্তিবৃদ্ধি করা হবে। ক্যাম্পের কর্মীদের ওই পরিবারের দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। সিনিয়র অফিসারেরাও ঘনঘন ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। ক্যাম্পের কর্মীদের কাছে আইসি এবং এসডিপিও-র ফোন নম্বর থাকবে, যাতে দরকার হলেই তাঁরা ফোন করতে পারেন।”
গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের কাছেই দেওয়ানদিঘিতে খুন হয়েছিলেন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপবাবু। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন সত্তরোর্ধ্ব জেলা নেতা কমল গায়েনও। অভিযুক্ত ২২ জনই তৃণমূলের। ধরা পড়েছিল ১১ জন। এর মধ্যে মূল অভিযুক্ত পতিতপাবন তা-সহ দু’জন এখনও হাজতে। বাকিরা জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। বাকি ১১ জনের মধ্যে আট জনকে পুলিশ ধরতে পারেনি। চার্জশিটে তিন জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন তা দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। জামিনে মুক্ত অভিযুক্তেরা তাঁদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রদীপবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে।
হাইকোর্টের নির্দেশ আসার পরেই শুক্রবার রাতে দেওয়ানদিঘি এলাকায় সরাইটিকর পঞ্চায়েত অফিসে পুলিশ ক্যাম্পে দু’জন কর্মী বাড়ানো হয়। এর আগে সেখানে দুই এএসআই এবং জেলা সশস্ত্র পুলিশের (ডিএপি) চার কনস্টেবল ছিলেন (অস্ত্র থাকে এক এএসআইয়ের কাছেও)। এর সঙ্গে যোগ হল এক কনস্টেবল এবং এক হোমগার্ড। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের প্রতিক্রিয়া, “হাইকোর্টের নির্দেশের পরে মাত্র এক কনস্টেবল আর এক এনভিএফ কর্মী! জেলা পুলিশ দায়সারা কাজ করলে তা কিন্তু আদালতেরই অবমাননা।”
নতুন করে কী এমন ঘটল যাতে ১১ মাস পরে নিরাপত্তার আর্জি জানালেন প্রদীপবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে? দেওয়ানদিঘির বাসিন্দাদের অনেকেই দাবি করেছেন, তাঁদের মোটেই কেউ হুমকি দিচ্ছে না। বরং এলাকার মানুষ ওই পরিবারটির প্রতি সহানুভূতিশীল। চিত্রলেখাদেবী বলেন, “যা ঘটেছে, আমি হাইকোর্টে জানিয়ে এসেছি। সংবাদমাধ্যমকে যা বলেছি, তার চেয়ে অনেকটাই বেশি ঘটেছে। তা প্রকাশ করে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাই না। খবরের কাগজে দেখলাম, আমার মেয়েকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তখন আর স্থির থাকতে পারিনি।” |