দু’দিন আগেই এই কলেজের নির্বাচনকে ঘিরে অশান্তি বেধেছিল নিতুড়িয়ায়। দলীয় বিধায়কের নেতৃত্বে সিপিএম এবং এসএফআই নেতা-কর্মীদের মারধর ও সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নিতুড়িয়ার সেই পঞ্চকোট কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অবশ্য দাপুটে জয় পেল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এখানে নির্বাচন বয়কট করেছিল এসএফআই। ছাত্র সংসদের ২৪টি আসনের সব ক’টিতেই জিতেছে টিএমসিপি।
বস্তুত, পুরুলিয়ার ১১ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্যে সাতটিতেই জিতেছে টিএমসিপি। বাঘমুণ্ডির সুইসা নেতাজী সুভাষ মহাবিদ্যালয়ে ফল অমীমাংসিত। ওই কলেজের ১২টি আসনের মধ্যে ৫টিতে জিতেছে টিএমসিপি, ৪টিতে জিতেছে ছাত্র পরিষদ, তিনটি টাই হয়েছে। জেলায় মহিলাদের একমাত্র কলেজ নিস্তারিনী মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দখলে রেখেছে ডিএসও। ২১টির মধ্যে ডিএসও পেয়েছে ১৫টি। ৬টি পেয়েছে এসএফআই। কাশীপুরের মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দখলে রেখেছে এসএফআই। আবার বরাবাজারের বিক্রম টুডু কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে এসএফআই। |
জেলার ছাত্র রাজনীতিতে কার্যত দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে ছাত্র পরিষদকে। বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কংগ্রেসের দখলে থাকলেও সুইসা কলেজের ছাত্র সংসদের দখল কার্যত হারাতে বসেছে তারা।আবার কংগ্রেসের খাসতালুক হিসাবে পরিচিত ঝালদায়অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজে এ বার নির্বাচনে কোন প্রার্থীই দিতে পারেনি ছাত্র পরিষদ। ছাত্র সংসদের ২১টি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই জিতেছে টিএমসিপি। একটিতে জিতেছে ছাত্র ব্লক। একটি আসন টাই হয়েছে। অথচ ওই কলেজে অবশ্য শক্ত সংগঠন ছিল ছাত্র ব্লকের। তবে, ওই এলাকার সংগঠনের দায়িত্বে থাকা ছাত্র ব্লকের নেতা প্রলয় চট্টোপাধ্যায় গত বছরই যোগ দেন টিএমসিপিতে। ফলে আসন বাড়িয়ে ফের ছাত্র সংসদ দখলে রেখেছে টিএমসিপি। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।
রঘুনাথপুর কলেজে প্রত্যাশিতভাবেই জিতেছে টিএমসিপি। ওই কলেজের ছাত্র সংসদের ৪২টি আসনের মধ্যে আগেই ১৯টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তারা। এ দিন ফল প্রকাশের পরে দেখা গেছে ৩৯টি আসনে তাদের জয় হয়েছে। ৩টি পেয়েছে এসএফআই। কাশীপুর কলেজে অবশ্য ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টি পেয়ে এসএফআই জয়ী হয়েছে। ৫টিতে জিতেছে টিএমসিপি।একটি টাই হয়েছে। প্রার্থী দিয়েও কোন আসন পায়নি ছাত্র পরিষদ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “কম সংখ্যায় ভোট পড়েছে। ফলে অনেকগুলি আসনে খুব কম ভোটে হেরেছে আমাদের প্রার্থীরা। কেন এই ঘটনা হল, আমরা খতিয়ে দেখব।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর নির্বাচনী এলাকা বলরামপুরের কলেজে ফের জিতেছে টিএমসিপি। এখানে ছাত্র সংসদের ২৪টি আসন হলেও ভোট হয়েছিল ২০টিতে। ১৯টি আসনেই জিতেছে তারা। একটিতে জিতেছে নির্দল প্রার্থী। পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ শতবার্ষিকী কলেজের ২১টি আসনের সব ক’টিতেই জিতেছেন টিএমসিপি প্রার্থীরা। হুড়ার লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজে ২৩টি আসনের মধ্যে মাত্র দু’টিতে জিততে পেরেছে এসএফআই। একটি টাই। বাকি ২০টি আসন পেয়েছে টিএমসিপি। পুরুলিয়া শহরের জগন্নাথ কিশোর মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ দখলে রাখাই নয়, আসন সংখ্যাও বাড়িয়েছে টিএমসিপি। আসন কমেছে ছাত্র পরিষদের। সেখানে ৩৬টি আসনের মধ্যে টিএমসিপি পেয়েছে ২০টি, এসএফআইয়ের দখলে গিয়েছে ১০টি। ছাত্র পরিষদ জিতেছে ৫টিতে এবং একটি টাই হয়েছে। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি গৌতম রায় বলেন, “ছাত্র সমাজ মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই যে আস্থা রাখছে, তা এই ফলে ফের প্রমাণিত হল।” ফলাফলে সন্তুষ্ট এসএফআই। সংগঠনের জেলা সভাপতি গৌরব সিংহের প্রতিক্রিয়া, “যে কলেজগুলিতে সন্ত্রাসমুক্ত অবস্থায় নির্বাচন হয়েছে, সেখানে গত বারের তুলনায় অনেক ভাল ফল করেছি আমরা।” |