কিডনি কার, হবে ডিএনএ পরীক্ষা
রোগিণীর মৃত্যুতে পুলিশ নিষ্ক্রিয় কেন, ক্ষুব্ধ কোর্ট
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে কলকাতার সিপি-কে ডেকে ভর্ৎসনা করেছিল হাইকোর্ট। এ বার তদন্তে নেমে জেলা পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ও দায়সারা ভাব দেখাল, এক মহিলার মৃত্যুর মামলায় সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটি কিডনি চক্র সক্রিয়। সেই চক্রের সঙ্গে চিকিৎসকেরাও জড়িত বলে অভিযোগ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাইকোর্টে মামলা করে জানায়, চক্রটিকে চিহ্নিত করে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতিরা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের নির্দেশ, কিডনি চক্রের তদন্তের ভার জেলা পুলিশের হাত থেকে নিয়ে দিতে হবে ডিআইজি (সিআইডি)-কে। আর এই ঘটনায় অপর্ণা সর্দারের মৃতদেহের পুনরায় ময়না-তদন্ত করতে হবে। সেটা করবেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ।
ডিভিশন বেঞ্চের আরও নির্দেশ, কেন ওই মহিলার অস্ত্রোপচার করা হল, তাঁকে কোন কোন ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তিনি নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার পরে কোন ধরনের চিকিৎসা করা হয়েছিল সে-সব পরীক্ষা করে দেখে রিপোর্ট তৈরির জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে। পুলিশের হেফাজতে থাকা মৃতার কিডনি দু’টি আসলে তাঁরই কি না, ডিএনএ পরীক্ষা করে তা জানতে হবে। এই সব কাজ শেষ করে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী তাপস ভঞ্জ এ দিন জানান, ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর মন্টু সর্দার নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী অপর্ণাদেবীকে সোনারপুরে সত্যবালা মেমোরিয়াল নার্সিংহোমে নিয়ে যান। মহিলার পেটে ব্যথা হচ্ছিল। নার্সিংহোমের চিকিৎসক হরষিত সরকারের সুপারিশে অপর্ণাদেবীকে ভর্তি করা হয়। সে-রাতেই অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর পেটে। আইনজীবীর অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের আগে স্বামীকে বিষয়টি জানানো হয়নি, তাঁর সম্মতিও নেওয়া হয়নি। মন্টুবাবু অস্ত্রোপচারের কথা জানতে পারেন পরের দিন সকালে। চিকিৎসক সাফাই দেন, হঠাৎ জরুরি হয়ে পড়ায় খবর না-দিয়েই অস্ত্রোপচার করতে হয়। দু’তিন দিন পরেই অপর্ণাদেবীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ব্যথা শুরু হওয়ায় ২০ অক্টোবর ফের অস্ত্রোপচার করা হয় অপর্ণাদেবীর পেটে। এ বারেও বিষয়টি মন্টুবাবুকে জানানো হয়নি। চিকিৎসক পরে তাঁকে জানান, অপর্ণাদেবীর বিশেষ একটি স্ত্রীরোগ রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় সেটারই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
ওই চিকিৎসক ১৫ নভেম্বর মন্টুবাবুকে জানান, তাঁর স্ত্রীকে কয়েক দিনের মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু অপর্ণাদেবীকে ছাড়া হয়নি। মন্টুবাবুর সঙ্গে দেখা করাও বন্ধ করে দেন ওই চিকিৎসক। গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে ২৩ নভেম্বর সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মন্টুবাবু। আইনজীবীর অভিযোগ, পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না দেখে ২৭ নভেম্বর ফের থানায় অভিযোগ করেন মন্টুবাবু। থানা তাঁকে একটি জিডি নম্বর দেয়। ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় নার্সিংহোম থেকে মন্টুবাবুকে ফোন করে জানানো হয়, তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। মন্টুবাবু সাড়ে ৮টায় নার্সিংহোমে গিয়ে দেখেন, তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ পুলিশ-মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশি রিপোর্টে বলা হয়, এটি ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’। তাঁর দু’টি কিডনি সংরক্ষণ করা হয়েছে। মন্টুবাবু মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হলে হাইকোর্ট পুলিশের রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। এ দিন সেই রিপোটর্র্ জমা পড়ে। ডিভিশন বেঞ্চ পুলিশের কাছে জানতে চায়, দু’দিন অভিযোগ জানানো হল। অথচ সাত দিন নিষ্ক্রিয় থেকে মৃত্যুর পরে তদন্ত শুরু করল পুলিশ! কেন? মৃত্যুর আগে রোগিণীর জবানবন্দিও নেওয়া হল না। কেন? একটি গুরুতর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হল না। কেন? বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, এই চক্রে চিকিৎসক ও অন্যদের যুক্ত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুলিশের আচরণও রহস্যজনক।
পুলিশ কোথাও উদাসীন, কোথাও বা অতিসক্রিয় কেন? এই প্রশ্নও তুলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.