|
|
|
|
তমলুকে এসে স্মৃতিচারণায় রাষ্ট্রপতি |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
তমলুকে রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিন স্বাধীনতা সংগ্রামীর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করতে পূর্ব মেদিনীপুরে এসে ‘পুরনো সেই দিনের কথায়’ ডুব দিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
শুক্রবার দুপুর ১২টার কিছু পরে তমলুকের নিমতৌড়ি হেলিপ্যাড মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামেন রাষ্ট্রপতি। নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের তিন প্রাণপুরুষ সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় ও সুশীলকুমার ধাড়ার মূর্তির আবরণ উন্মোচন করার সময় দৃশ্যতই বিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রণববাবুর প্রায় ২৫ মিনিটের ভাষণেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল মেদিনীপুরের স্মৃতি। তাঁর কথায়, “মেদিনীপুরের সঙ্গে বিশেষ করে তমলুকের সঙ্গে আমার পরিচয় রাজনৈতিক জীবনের ঊষালগ্নে। সেই ১৯৬৬ সাল থেকে সতীশদা, অজয়দা, সুশীলদার সঙ্গে আমার পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা। ১৯৬৯ সালে এই রাজ্য থেকে রাজ্যসভার একটি আসন পেয়েছিল বাংলা কংগ্রেস। অজয়দাই আমাকে সেই আসনে মনোনীত করেছিলেন। আমি দিল্লিতে গিয়ে সতীশদার বাড়িতে থাকতাম। সেই সময় আমরা ঠাট্টা করে বলতাম ওটা আমাদের কমিউন, কমিউনিস্ট পার্টিতে যেমন হয়।” দিল্লির ৭ নম্বর ইলেকট্রিক লেনের সেই বাড়ির স্মৃতি আজও ঘুরেফিরে আসে। রাষ্ট্রপতি মনে করেন, “ওই বাড়িতে একটা তাল গাছও লাগিয়েছিলেন সতীশদা।”
এ দিন সতীশচন্দ্র সামন্ত ও অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে তিন স্বাধীনতা সংগ্রামীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করার মাঝে-মাঝে ‘মেদিনীপুরের অলিতে-গলিতে যাতায়াতে’র স্মৃতিচারণায় ডুব দিচ্ছিলেন প্রণববাবু। |
|
বক্তা প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
তিনি বলেন, “সতীশদা ছিলেন সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। সতীশদাকে নিয়ে পণ্ডিত নেহরু বলেছিলেন এই রকম খাঁটি মানুষ দেখা যায় না। সতীশদা সামান্য অসুস্থ হলে ইন্দিরাজী তাঁকে দেখতে যেতেন হাসপাতালে।” অজয় মুখোপাধ্যায় প্রসঙ্গে প্রণববাবু বলেন, ‘‘১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল ছিল রাজনীতির কঠিন সময়। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে অস্থিরতার সময়। দেশে তখন খাদ্য ও আর্থিক সঙ্কট। সেই সময় অজয়বাবু মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রাজ্য চালিয়ে ছিলেন।” সুশীল ধাড়া তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সেনাবিভাগের প্রধান ছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী এবং সাংসদ হয়েছিলেন। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের ইতিহাস সংরক্ষণে সুশীলবাবুর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সুশীলদা যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিলেন তা হল নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধ তৈরি। এখানে স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। আমার বিশ্বাস এই ইতিহাস যে দিন পূর্ণাঙ্গ ভাবে প্রকাশ পাবে, সেই দিন প্রমাণ হবে, আন্তর্জাতিক চাপে নয়, কোনও উপহার হিসেবে নয়, আমরা লড়াই করে স্বাধীনতা পেয়েছি। এই তমলুকের মাটিতে রয়েছে মা মাতঙ্গিনীর আত্মত্যাগের কাহিনী। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মিছিলে গুলি খেয়েও তিনি হাতে ধরা পতাকা ছাড়েননি।”
ভাষণের শেষে এসে প্রণববাবু মেনে নেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে এত কথা বলা উচিত নয়। তবে, আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, এই এলাকার এক জন হিসেবে বললাম।” বেলা দেড়টা নাগাদ হেলিকপ্টারে ফের কলকাতার উদ্দেশে পাড়ি দেন রাষ্ট্রপতি। স্মৃতির অনুরণন সঙ্গে নিয়ে। |
|
|
|
|
|