|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
|
বিবি-১ খাল |
হারিয়ে যেতে যেতে |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
উধাও হয়ে যাচ্ছে গোটা একটা খাল!
সংস্কার নেই। পরিবর্তে রয়েছে দখলদারি। তাই কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার জল-নিকাশির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বাগজোলা বাইপাস-১ বা বিবি-১ ক্যানাল। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি পুরনো এই নিকাশি খালের জায়গায় জায়গায় রয়েছে দখলদারি। ক্রমাগত ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ফলে খাল ক্রমশ সরু হতে হতে নর্দমার আকার নিয়েছে। বর্ষায় জল বেরোতে না পারায় অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। জলমগ্ন হয়ে পড়ে রাজারহাট পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড। দু’বছর আগে পুরসভা সংস্কার করলেও এক বছরের মধ্যেই আবার আগের মতো সরু হয়ে পড়েছে খালটি। সংস্কারের জন্য সেচ বিভাগকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
১৯৫০ সাল নাগাদ চাষের জমির জল বার করার জন্য অর্জুনপুর খেলার মাঠ থেকে এই খাল কাটা হয়। অর্জুনপুর থেকে শুরু করে খালটি পুরসভার ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে জগৎপুর বাজারের কাছে বাগজোলা ক্যানালে মিশেছে। |
|
বিবি-১ নিকাশি খালটি গড়ে ১০ মিটার চওড়া। দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। গভীরতা গড়ে ১.৫ মিটার। ভিআইপি-র পশ্চিম অংশে এই খালটি আপার বিবি-১ এবং পূর্বে লোয়ার বিবি-১ নামে পরিচিত। খালটিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে বাগজোলা খালের অভিমুখে জলপ্রবাহ আছে। অর্থাৎ, খালটির প্রস্থ ও নাব্যতা ভিআইপি-র পশ্চিমে কম এবং পূর্বে বেশি।
পুরসভার ১০-১২টি ওয়ার্ডের নিকাশি জল বিভিন্ন নালা-নর্দমার মধ্য দিয়ে বিবি-১ খাল হয়ে বাগজোলা খালে পড়ে। ফলে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার জল-নিকাশি ব্যবস্থায় এই খাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার মধ্যে ফেলা হচ্ছে কঠিন বর্জ্য, বাড়ির ভেঙে ফেলা ইট আর প্লাস্টারের চাঙড়। জগৎপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় এই খালের মধ্যে জমা হচ্ছে বাজারের আবর্জনা। কোথাও খুঁটি পুঁতে খালের মধ্যেই গজিয়ে উঠেছে বাড়ি, দোকান। কোথাও খালে ফেলা হচ্ছে খাটালের আবর্জনা। ফলে খালটি বিভিন্ন স্থানে অগভীর ও সরু হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কারও হয় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য: বিশেষত ভিআইপি রোডের পূর্বে দখলদারির জেরে এই খালের জলধারণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। বিবি-১ খালটি শেষের দিকে অগভীর হয়ে পড়ায় পুরো নিকাশি জল এই খাল হয়ে বাগজোলায় পড়তে পারে না। ফলে বর্ষায় পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল দাঁড়িয়ে যায় এবং জলমগ্ন হয়ে পড়েন ৩০-৩৫ হাজার মানুষ।পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরেশ ঘোষের কথায়: “সেচ বিভাগের উচিত সর্বপ্রথম মানচিত্র ধরে এই খালের জমি উদ্ধার করে সংস্কার করে খালকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা। পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থা নির্ভর করে এই খালের উপরে। বর্ষায় অসংখ্য বাসিন্দাকে নোংরা জলে বন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেচ বিভাগ এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেয় না।” |
|
রাজারহাট পুরসভার সহকারী বাস্তুকার মনোদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক বছর আগে খালটি পুরসভার পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়েছিল। সেচ বিভাগকে খাল সংস্কার এবং দখলমুক্ত করার জন্য চিঠিও লেখা হয়েছে পুরসভা থেকে। তবে এখনও কোনও কাজ হয়নি।” পুরকর্তাদের দাবি: প্রতি বছর বর্ষার আগে টাস্ক ফোর্স গঠন করে পুরসভার পক্ষ থেকে খাল সাফাইয়ের কাজ হয়। কিন্তু সেচ বিভাগ এ নিয়ে উদ্যোগী হয় না।
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার পুরপ্রধান তাপস চট্টোপাধ্যায় বললেন, “ওটা সেচ বিভাগের খাল। সংস্কার বা দখল উচ্ছেদের জন্য সেচ বিভাগকেই উদ্যোগী হতে হবে। আমরা সহযোগিতা করব। বর্ষায় জল নিকাশি সমস্যার জন্য আমরা একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসিয়েছি। আগামী বর্ষায় সমস্যা হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে।” আর সেচ বিভাগের ক্যানাল ডিভিশনের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আশিস দত্ত বলেন, “ওই ক্যানাল সংস্কারের জন্য পরিদর্শন করা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ওই ক্যানালের দু’কিমি সংস্কার করা হবে।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|