|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা
|
দায়ী ‘অর্থাভাব’ |
বিপদ-বাজার |
কাজল গুপ্ত |
সকাল থেকে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে দোকানের সামনের বেঞ্চিতে সবে খেতে বসেছিলেন শ্যামলবাবু। তখনই তাঁর ঠিক সামনে বিশাল একটি চাঙড় ভেঙে পড়ল। কয়েকটা টুকরো এসে পড়ল খাবারে। ঘটনায় কেউ আহত না হলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে যথেষ্ট।
এ ঘটনা শুধু একটি মার্কেটের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিধাননগরের একাধিক মার্কেটের এ রকম বেহাল দশা নিয়ে একাধিক বার পুরপ্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু অর্থাভাবে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুরপ্রশাসন। ফলে বেহাল মার্কেটগুলির কয়েকটির ছাদের একাংশ ভেঙে চৌচির হয়ে গিয়েছে। পলেস্তারা খসে বেরিয়ে পড়েছে লোহার খাঁচা। জল পড়ছে চুঁইয়ে চুঁইয়ে। বাথরুমগুলির অবস্থা তথৈবচ।
পাশাপাশি, বাজারগুলির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও বেশ পুরনো। দোকানের বিভিন্ন সামগ্রী দোকানের বাইরে হাঁটাপথের উপর থাকে। ক্রেতাদের অভিযোগ, যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে আগুন লেগে দোকান পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান বিক্রেতারা।
এলাকার বাসিন্দা তমাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিধাননগরে জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। শপিং মল, রেস্তোরাঁও গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু মার্কেটগুলি আজও সেই পুরনো ধাঁচেই রয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও চেষ্টাও নজরে পড়ে না।” |
|
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, শহর সাজাতে প্রশাসন উদ্যোগী হলেও অধরা থেকে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ক্রেতারা মার্কেটে ঢুকতে চান না। ফলে লাভ কমছে। পুরপ্রশাসন অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েই খালাস। বিধাননগর কেন্দ্রীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামলকান্তি রায় বলেন, “পুরসভা সংস্কার করলে ভাল। অনেক মার্কেটের অবস্থা খুব খারাপ। পাশাপাশি মার্কেটগুলির সম্প্রসারণ করতে পারলে পুরসভারও আয় বাড়তে পারে।”
বিধাননগর তৈরি হওয়ার পরে বিভিন্ন ব্লকে লোকাল সেন্টার বা মার্কেট তৈরি করা হয়েছিল। মোট ১৬টি মার্কেট তৈরি হয়, সবই দোতলা। পোশাক-সামগ্রী থেকে মুদির দোকান দেওয়া হয়েছিল। নগরোন্নয়ন দফতরের আওতাধীন ছিল এই মার্কেট কমপ্লেক্সগুলি।
বাম আমলের পনেরো বছরেও ছবিটা ছিল একই। তাঁদের দাবি ছিল, নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে থাকায় সংস্কারের কাজ পুরসভা করতে পারত না। সে কারণেই পুরসভার কাছে মার্কেটগুলি হস্তান্তরের দাবি তোলা হয়েছিল। পরে মার্কেটগুলির দায়িত্ব পায় পুরসভা। কিন্তু তার পরে পুরনির্বাচন এসে যাওয়ায় সংস্কারের পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে চলে যায়। নতুন পুরবোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরেও এখনও সমস্যার সমাধান হয়নি। সম্প্রতি কাউন্সিলরদের সভায় মার্কেট সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিএ, ইসি, বিডি এই মার্কেটগুলির বেহাল দশা নিয়ে একাধিক বার পুরপ্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। |
|
পুরপ্রশাসন এর আগেও মার্কেট সংস্কারের কথা বলেছিল। কিন্তু অর্থাভাবে তা করা যায়নি বলে তাঁদের দাবি। এমনকী, এই সময়ে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প স্থগিত রেখেছে পুরপ্রশাসন। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ওঠা মার্কেট সংস্কারের দাবির কথা মাথায় রেখে এখন বিকল্প পথে হাঁটতে চাইছে পুরসভা। পুরকর্তৃপক্ষের মতে, শুধু সংস্কারই নয়, মার্কেটগুলিকে ঘিরে বিকল্প আয়ের কথাও বিবেচনায় ছিল। পুরসভা সূত্রে খবর, মার্কেট সংস্কারে একটি পরামর্শদাতা বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সংস্কারের কাজ তার মাধ্যমেই হবে।
পুরসভা সূত্রে খবর, সংস্কারের পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্কেটগুলি বহুতল করা হবে। সেখানে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের পরে বাকি তলগুলিকে কাজে লাগিয়ে আয়বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে। মার্কেটগুলি হবে জি-প্লাস-ফোর। এর ফলে বাজার এলাকায় পার্কিং সমস্যাও মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ।
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, “একটি মার্কেটে সংস্কারের কাজ এগিয়েছে। আরও তিনটি মার্কেটে সংস্কারের কাজ করা হবে। এ কাজ সফল হলে বাকি মার্কেটগুলির ক্ষেত্রেও এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে।”
|
ছবি: শৌভিক দে |
|
|
|
|
|