অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে কলকাতা বিমানবন্দর পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের এক টার্মিনাল। তিন দিনের কলকাতা সফরের শেষ দিনে রবিবার এর উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্ত রাজ্য রাজনীতির আমরা-ওরা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সেই অনুষ্ঠানও। যে বাম আমলে এর কাজ শুরু হয়েছিল, তার নেতারাই এখন ব্রাত্য। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সীতারাম ইয়েচুরিকে জানিয়েছেন, তিনি আসতে পারেন, তবে মঞ্চে থাকতে পারবেন না।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পরেও কেন এমন বার্তা? রাজভবন সূত্র বলছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান না, সিপিএমের নেতারা এই অনুষ্ঠান মঞ্চে থাকুন। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব বুঝেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সীতারামকে জানিয়েছেন, তিনি অনুষ্ঠানে আসতে পারেন। কিন্তু মঞ্চে থাকতে পারবেন না। আসন জুটবে মঞ্চের সামনে।
এই বিমানবন্দর আধুনিকীকরণের কাজ কিন্তু শুরু হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েই। |
পরিবহণ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে সীতারামও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে কারণেই তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলীয় বৈঠকের জন্য তিনি ও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন কলকাতাতেই।
অনুষ্ঠানে ডেকেও গুরুত্ব না দেওয়ার এই রাজনীতিতে বাম নেতারা দ্বিধায়। সীতারাম বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ কারাট, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মমতার এমন আচরণে বামেরা এই অনুষ্ঠান বয়কট করবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে বুদ্ধ-বিমানরা মনে করেন, বয়কট না করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকাটাই ভালো। সূর্যকান্ত মিশ্রও তো এখন সর্বদল বৈঠকে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তাই যেতেও পারেন সীতারাম, যদিও এ নিয়ে আগাম মুখ খুলতে রাজি নন।
রাষ্ট্রপতি সচিবালয়েরও নজরে এসেছে বিষয়টি। তাদের মতে, এখানে রাষ্ট্রপতির করণীয় কিছু নেই। অনুষ্ঠানে কে উপস্থিত থাকবেন, সেই তালিকা রাষ্ট্রপতি ভবন তৈরি করে না। |
রাষ্ট্রপতি সচিবালয় সূত্র জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত মঞ্চে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ, মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কে সি বেণুগোপাল, সচিব কে এন শ্রীবাস্তব ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ভি পি অগ্রবালের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। নেতাজির নামে এই বিমানবন্দরটি হওয়ায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরকে আধুনিক করার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন মমতার পূর্বসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই। বুদ্ধবাবু যখন রাজ্যে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন, সেই পর্বে সিঙ্গাপুরে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, তিনি কলকাতা বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের পক্ষে। দলে এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়। কারণ, দলের কিছু নেতা, বিশেষ করে বাম শ্রমিক সংগঠনের নেতারা চাইছিলেন, আধুনিকীকরণের কাজটা করুক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষই। পরে বুদ্ধবাবু বলেন, কলকাতা বিমানবন্দরের প্রসঙ্গে নয়, তিনি বেসরকারিকরণের কথা বলেছিলেন নতুন কোনও বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে। কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়েই আধুনিকীকরণের কাজ করানো হবে। বামেদের এই মনোভাব দেখে বিমানমন্ত্রী প্রফুল পটেল কলকাতা বাদে দেশের অন্যান্য প্রান্তের বিমানবন্দর আধুনিকীকরণের কাজ বেসরকারি হাতে তুলে দেন। |
বাম নেতাদের বক্তব্য, সেই সময় তাঁদের মতো বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে মমতাও বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এখন যখন টার্মিনালটির উদ্বোধন হতে যাচ্ছে তখন এই আমরা-ওরার রাজনীতি করে কী লাভ? এমনও নয় যে মমতা ক্ষমতায় আসার পর এর কাজ শুরু হয়েছে। বাম জমানায় রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছিল এ ব্যাপারে, দিল্লিতে সীতারাম ও নীলোৎপল বসুরাও তৎপর হয়েছিলেন। বারবার সরেজমিনে খতিয়ে দেখে সীতারামরা এ কাজের তদারকিও করেছেন। সীতারাম বাড়তি নজর দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ হিসাবেও। এর পরেও উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি হতে দেখে ক্ষুব্ধ বামেরা।
শুধু রাজনীতির কারবারিরা নন, নয়া টার্মিনালের উদ্বোধনের মুখে রাজনীতি নিয়ে ব্য্যস্ত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও। ২৯ তারিখ কর্মী ইউনিয়নের নির্বাচনে হাঙ্গামার আশঙ্কায়, বৈঠক করতে হচ্ছে দফায় দফায়। সিপিএমকে হঠাতে এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তৃণমূল। পোস্টার-ব্যানারে প্রায় মুখ ঢাকার জোগাড় বিমানবন্দর এলাকার। সে অবশ্য নির্বাচনী লড়াই। কিন্তু সবেতেই রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলা এই রাজ্য আমরা-ওরাকে ব্রাত্য করতে পারছে না উন্নয়নের মঞ্চেও। |