|
|
|
|
চিন্তন বৈঠকে অভিমুখের খোঁজ |
সংস্কার আর আম আদমিই চ্যালেঞ্জ রাহুলের |
শঙ্খদীপ দাস • জয়পুর |
ঠিক পঞ্চাশ বছর আগের কথা। জয়পুর শহরের ঠিক মাঝখানে বিড়লা সভাঘর উদ্বোধনে এসেছিলেন জওহরলাল নেহরু। কাল থেকে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির বসছে সেই সভাঘরেই, সেখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে নেহরুর দৌহিত্র-পুত্র রাহুল গাঁধীর।
এক দশক আগে কংগ্রেসের শেষ চিন্তন বৈঠক হয়েছিল শিমলায়। জোট রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত সেই বৈঠকের যদি মাইলফলক হয়ে থাকে, তা হলে ১২৭ বছরের সুপ্রাচীন এই দলের ইতিহাসে জয়পুরও একটা আলাদা অধ্যায় হয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছে। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাহুল তথা নবীন প্রজন্মের আবাহন শুধু নয়, এই প্রথম কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ বৈঠকে দেখা যাবে তাঁদের আগ্রাসনও। ৩৪৫ জন আমন্ত্রিতের মধ্যে এ বার তরুণদের সংখ্যা ১৪৫।
শিমলা শিবিরে রাহুল ছিলেন না। যুব কংগ্রেসের তরফ থেকে মত জানানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র দু’জন। কিন্তু আগামী তিন দিন জয়পুরে রাহুলের নেতৃত্বে বৃদ্ধতন্ত্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো হাল্লা বোল জুড়ে দিতে পারেন নবীনরা। তাঁরা সংস্কারের পাশাপাশি আম আদমির স্বার্থ সুরক্ষার দাবিতে সরব হবেন, দলের নীতি নির্ধারণে সমান শরিক হয়ে ওঠার দাবি জানাবেন। সেই সঙ্গে দাবি জানাবেন, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে অন্তত ৩০ শতাংশ প্রার্থী বেছে নেওয়া হোক নবীনদের মধ্যে থেকেই। সূত্রের খবর, গত দু’রাতে রাহুলের নেতৃত্বে তারই নকশা রচিত হয়েছে।
চিন্তন শিবিরকে সাক্ষী রেখে রাহুলের এই রাজনৈতিক উত্থানের চিত্রনাট্য অবশ্য আরও অনেক আগে থেকেই তৈরি ছিল। কিন্তু কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, এখন সেটা গৌণ। বরং বৃহত্তর দায়িত্ব নিয়ে লোকসভা ভোটে যাওয়ার আগে রাহুল কী বার্তা দেবেন, সেটাই হয়ে উঠতে চলেছে এ বারের মুখ্য বিষয়। |
|
স্বাগত: চিন্তন বৈঠক উপলক্ষে সেজেছে জয়পুর। বৃহস্পতিবার। ছবি: পি টি আই |
কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, নয় বছর ধরে কেবল রাহুলের রোম্যান্টিসিজমই দেখেছে দেশ। কখনও দলিতের বাড়িতে গিয়ে তিনি রাত কাটিয়েছেন তো কখনও রোজগার যোজনার শরিক হয়ে মাটি কেটেছেন, কিংবা নিয়মগিরির জঙ্গলে গিয়ে আদিবাসীদের দাবিতে সায় দিয়েছেন। আবার বিহার ও উত্তরপ্রদেশ ভোটের সার্বিক দায়িত্ব নিয়েও ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। লোকসভা ভোটের আগে শুধু দল নয় গোটা দেশেরও কৌতূহল রয়েছে তাঁকে ঘিরে। আর্থিক সংস্কার প্রসঙ্গে তাঁর কী মত, আম আদমির স্বার্থ সুরক্ষায় তাঁর কী দাওয়াই, বিদেশনীতি নিয়ে কী বক্তব্য, প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে কী দিশা, জোট রাজনীতি নিয়ে কী ধারণা সুনির্দিষ্ট ভাবে এর অনেক কিছুই এখনও অজানা। এমনকী সংসদেও এমন কোনও বক্তব্যের নজির নেই, যেখানে এই সব প্রসঙ্গে তাঁর মত স্পষ্ট জানিয়েছেন রাহুল। সুতরাং ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর ‘প্যাকেজিং’য়ে তিনি জয়পুরে নিজেকে কী ভাবে মেলে ধরেন, সেটাই দেখার।
শিমলার চিন্তন শিবিরে ঠিক এমন ভাবেই নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সনিয়া গাঁধীর। আজ সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, সনিয়ার সামনে সে দিন চ্যালেঞ্জ ছিল সহজতর। তখন ১০৫টি সাংসদের দল কংগ্রেসের বিশেষ হারানোর কিছু ছিল না। উদারীকরণের পথে হেঁটে বাজপেয়ী সরকার যখন ‘ভারত উদয়ের’ উৎসব পালন করছিল, তখন শিমলার পাহাড় থেকে পাখির চোখের মতো আম আদমিকে দেখেছিলেন সনিয়া। গোধরা দাঙ্গা ও ২০০৩ সালের গোড়ায় নতুন করে রামমন্দির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাঁর শিমলা-বক্তৃতায় গোটা দেশকে বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক নীতি নিয়ে সতর্ক করেছিলেন সনিয়া। আর সেই সূত্রে বৃহত্তর ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়তে সফলও হয়েছিলেন। এমনকী পরবর্তী কালে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার গঠনের পর মনমোহন যখন পরমাণু চুক্তি-সহ সংস্কারের বার্তা দিয়েছেন, তখন আম আদমির প্রতি দরদ দেখিয়েই ভারসাম্য রেখেছিলেন সনিয়া।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারেই বিপরীত। কেন্দ্রে নয় বছর শাসনের পর দলের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া বইছে। আম আদমির উপরে সংস্কারের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আশঙ্কায় জোটের শরিকরাও দৃশ্যত দূরত্ব রাখছেন। আবার সংস্কারের জন্য মনমোহনকে দায়ী করার মতো বিলাসিতার সুযোগও রাহুলের নেই। এবং এখানেই রাহুলের চ্যালেঞ্জ। তাঁকে যেমন সংস্কারের বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে, তেমনই সংস্কারের ধাক্কায় আম আদমি-র যাতে অসুবিধা না হয় সেটাও দেখতে হবে। এবং এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে ভবিষ্যতে দল ও সরকার কী ভাবে চলবে, তার দিশা দেখাতে হবে তাঁকে।
পরপর তিন বার বিধানসভায় জিতে দিল্লিতে নিঃশ্বাস ফেলছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে মোকাবিলার দাওয়াইও দিতে হবে রাহুলকে। জয়পুর তাই রাহুলের বিরাট পরীক্ষা। |
|
|
|
|
|