উত্তরবঙ্গের দিনহাটায় কলকাতার নাট্য নির্দেশক বেণু চট্টোপাধ্যায়কে হেনস্থার ঘটনা নিয়ে এ বার চাপানউতোর শুরু হল নাট্য উৎসবের উদ্যোক্তাদের মধ্যেই।
নাটকের সংলাপে দুর্নীতিগ্রস্তদের মুখে ‘মা-মাটি’ শব্দবন্ধ বসানোয় কিছু তৃণমূল নেতার রোষের মুখে পড়েছেন বর্ষীয়ান নির্দেশক। উৎসব আয়োজক প্রগতি নাট্য সংস্থার সভাপতি নারায়ণ সাহাও নিন্দায় সরব হন। বৃহস্পতিবার তারই বিরোধিতা করে বেণুবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন সংস্থার সম্পাদক তথা সিপিএম নেতা প্রদীপ পাল। বেণুবাবু-সহ বিশিষ্টজনেদের একাংশ কলকাতায় মৌনী মিছিলও করেন।
কোচবিহারের দিনহাটায় প্রগতি নাট্য সংস্থার উদ্যোগে ৪ থেকে ১৫ জানুয়ারি নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেই উৎসবে কলকাতার নিউ থিয়েটার্স গ্রুপের ‘সেতুবন্ধন’ নাটকের সংলাপে দুর্নীতিগ্রস্তের মুখে ‘মা-মাটি-মানুষ’ ও ‘দিদি’ শব্দটি ব্যবহার করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ভিডিও ক্যামেরার সামনে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় বেণুবাবুকে। ঘটনার পরে নাট্য সংস্থার সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী (সরাসরি রাজনীতি না করলেও তৃণমূল নেতাদের একাংশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল) নারায়ণবাবু বলেন, “অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকে মা-মাটি লেখার সম্ভাবনাই নেই। কেউ সস্তা হাততালি কুড়োতে চাইলে জনতা মানবে কেন?”
উত্তরবঙ্গ-সহ গোটা রাজ্য জুড়েই এই ঘটনার প্রতিবাদ হয়। ঘটনাচক্রে, ওই নাট্য সংস্থার সম্পাদক প্রবীরবাবু সিপিএমের দিনহাটা শহর লোকাল সম্পাদক, নাট্য উৎসব কমিটির সভাপতি পল্লব চৌধুরী সিপিআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য। প্রবীরবাবুর বক্তব্য, “নারায়ণবাবুর যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা সংস্থার নয়। আগামী শনিবারের মধ্যে বৈঠক
করে সংস্থার তরফে নাট্য উৎসব কমিটির সভাপতির সই করা লিখিত বিবৃতি জানাব।”
নারায়ণবাবু অবশ্য তাঁর মতামত থেকে সরতে নারাজ। তাঁর মতে, “শিল্পীর স্বাধীনতা নিশ্চয়ই থাকবে, কিন্তু তার প্রাসঙ্গিকতা থাকা দরকার। ওই ধরনের কথা উঠলে নাট্যদল দায় এড়াতে পারে না।” তাঁর দাবি, “আমি কোনও দল করি না। কারও ছত্রচ্ছায়ায় নেই। সংস্কৃতিই আমার কাছে মুখ্য। সম্পাদক কেন বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। কথা বলব।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষও রিপোর্ট তৈরি করছেন বলে জানা গিয়েছে।
দিনহাটা-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মৌনী মিছিল করেন বিশিষ্টজনদের একাংশ। বেণুবাবু ছাড়াও অশোক মুখোপাধ্যায়, মালিনী ভট্টাচার্য, চন্দন সেন, অসীম চট্টোপাধ্যায়, উষা গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ তাতে যোগ দেন। পরে নাট্যকার অশোক মুখোপাধ্যায় জানান, ২২ জানুয়ারি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর সামনে প্রতিবাদ সভা হবে। রাজ্যপালকে স্মারকলিপিও দেওয়া হবে। |