বায়োস্কোপে বাজিমাত
পাওয়ার প্লে
নো রিস্ক, নো সৃজিত! স্বস্তিকাকে পাশে নিয়ে, বারংবার নিয়ম ভাঙার ঝুঁকি নিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এবং ঝুঁকি নিয়েই বাজি মাত করলেন। এই বাজি ক্যুইজের। সদ্যোজাত ‘আনন্দ প্লাস’-এর উদ্যোগে রবিবার সন্ধ্যায় রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবের মাঠে বসেছিল তারকাখচিত কু্যইজের আসর: বায়োস্কোপে বাজিমাত! স্পনসর ক্যামেলিয়া। পাওয়ার্ড বাই অরিষ। রুপোলি পর্দার তারকারা গ্ল্যামারের ছায়াপথ ছেড়ে প্রশ্নোত্তরের রণাঙ্গনে। বিনা যুদ্ধে কেউ এতটুকু জমি ছাড়তে নারাজ। মুনমুন সেনের দিকে প্রশ্ন ছিল, সুচিত্রা সেনের ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবির ‘এই রাত তোমার আমার’ গানে কে সুর দিয়েছিলেন? মুনমুন ঠিকঠাক উত্তর দিলেন: ‘‘হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।’’ এবং তিনি পয়েন্ট পাওয়ামাত্র পাশের টেবিল থেকে প্রসেনজিৎ: ‘‘এটা কী হল? তা হলে পরের রাউন্ডে আমাকে বিশ্বজিৎ নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।’’ এ রকমই যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা। শুধু ক্যুইজ নয়, বন্ধুদের পরস্পরকে নিয়ে হাসি-তামাশা, ভয়ঙ্কর স্লেজিং। ক্যুইজমাস্টারের ভূমিকায় ‘কহানি’খ্যাত সুজয় ঘোষ। মঞ্চে গণ্ডগোল সামাল দিতে ম্যাচ রেফারির ভূমিকায় জিৎ। সুজয় শুরুতেই আবেদন রাখলেন, ‘‘ঝামেলা হলে বাঁচিও, জিৎ’’। উত্তরে জিৎ: ‘‘কেউ কিচ্ছু করবে না। সবাই চায় তোমার সঙ্গে র্যাপো রাখতে, বলিউডে ছবি করতে।’’ সঙ্গে সঙ্গে দর্শকমহলে হাসির হররা।
চারমূর্তি একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে প্রথম
প্রসেনজিৎ। দেব। মিঠুন। জিৎ।
ছয়টি টিম। একটিতে ‘সিসা’ ছবির সেই জুটি...মিঠুন-মুনমুন। পাশে টিম ‘মনের মানুষ’, গৌতম ঘোষ ও প্রসেনজিৎ। বাকিগুলির কোনওটিতে পরমব্রত এবং কোয়েল, কোনওটায় দেব এবং ঋতুপর্ণা, কোথাও আবার অঞ্জন দত্ত এবং পাওলি দাম। সব টিমকে হারিয়ে ১৩৫ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন: সৃজিত-স্বস্তিকা। অতঃপর অঞ্জন-পাওলি এবং পরম-কোয়েলের টিম যুগ্ম রানার্স আপ। ‘মহাগুরু’ অবশ্য এই রেজাল্টকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। “পার্শিয়ালিটি। কহানি, বাইশে শ্রাবণ থেকে প্রশ্ন করছিস। এ বার নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবি, কোয়েলের বিয়ের তারিখ কবে। এ রকম করলে আমি খেলব না,” বলতে বলতে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন মিঠুন চক্রবর্তী। কিছু পরে বোঝা গেল গোটাটাই ছিল মজা।
মিঠুনই এ দিনের টকিং পয়েন্ট। মঞ্চে তখনও পরম, সৃজিত, দেব ঢোকেননি। মিঠুন দাঁড়িয়ে, ‘‘আগে বুড়োরা বসুক, তার পর আমি বসব।’’ পুরো বাওয়ালি আনলিমিটেড! ম্যাচ রেফারি জিৎ তাঁকে এক বার শাসানিও দিলেন, ‘‘মিঠুনদা, মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে।’’ কিন্তু মিঠুনকে থামায় কে? পরমকে প্রশ্ন ছিল, ‘‘বাইশে শ্রাবণ ছবিতে আবিরের চরিত্রটির নাম কী ছিল?’’ পরম উত্তর দিলেন, সূর্য সিনহা। ক্যুইজমাস্টার: “না, ওটা সূর্য সেন।” অন্য টেবিল থেকে মিঠুনের টিপ্পনী: “ভুল বলেছে। নম্বর কাটতে হবে।” পরম (উত্তেজিত): “কে বলেছে ভুল?” মিঠুন: “মিঠুন চক্রবর্তী আর মিঠুন বোস কি এক? সূর্য সেনকে সূর্য সিনহা বলেছে, ও নম্বর পাবে না।” রেফারি (কড়া গলায়): “মিঠুনদা, তুমি তোমার কাজ করো।” ম্যাচ রেফারি যত আইন দেখান, মিঠুন ততই সব তছনছ করে দেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও সৃজিত তাই মিঠুনকে ভূলতে পারছেন না, ‘‘মিঠুনদা পুরো অনুষ্ঠানটা যা করে দিল। আনলিমিটেড মস্তি!’’ গৌতম ঘোষ হাসছেন, ‘‘ওফ, মিঠুনটা আস্ত শয়তান।’’ রাতের পার্টিতে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জিৎকে খেলার নিয়ম বোঝাচ্ছিলেন, ‘‘আরে, তুই ম্যাচ রেফারি। সবার ওপরে। তোর হাতে ক্ষমতা। মিঠুনকে থামাবি তো।’’ জিৎ সবিনয়ে জানালেন, মিঠুনদাকে থামানোর ক্ষমতা তাঁর নেই। সম্বরণকে পাল্টা প্রশ্ন করা হল, ‘‘পরের বার আপনি হবেন রেফারি?’’ এ বার তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘মিঠুন থাকবে?’’ মস্তি, বাওয়ালি। সব মিলিয়ে পুরো কলেজ ক্যান্টিন। মাঠে বসে দর্শকাসন থেকে পাস দিচ্ছেন অর্জুন চক্রবর্তী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়রা।

হট সিটে: আমিই ইন্ডাস্ট্রি: প্রসেনজিৎ

মুক্ত-কন্যা: ঋতুপর্ণা
মঞ্চ থেকে ক্যুইজাররা কেউ কেউ চেঁচাচ্ছেন, ‘‘এই কৌশিক, এখানে এসে বোস তো।’’ দর্শকাসনে বসা তারকারাও যেন এখানে প্রতিযোগীর মেজাজে। আর প্রতিযোগীরা? ব্যান্টার করতে ছাড়ছেন না ‘বুম্বাদা’ও। সৃজিতকে অ্যাঙ্করের প্রশ্ন, “অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী কোন দোকানের কচুরি, জিলিপি খেতে ভালবাসেন? ” সঠিক উত্তর এল, ‘‘মহারানি’’। প্রসেনজিৎ সঙ্গে সঙ্গে টিপ্পনী কাটলেন, ‘‘ভাল। ফেসবুক, টুইটার। চালিয়ে যা।’’ যেন নিপুণ পরিচালকের হাতে তৈরি গেম শো, পরতে পরতে উত্তেজনা। অথচ, এই টাটকা রিয়ালিটি শো-র কোনও পরিচালক নেই। নেই তৈরি চিত্রনাট্য। গোটাটাই স্বতঃস্ফূর্ত। অঞ্জন দত্ত ফিদা, ‘‘অনুষ্ঠানটা আমাকে কলেজ লাইফে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।’’ নতুন আনন্দ প্লাসের পাঞ্চলাইনও তো তাই। ‘‘আনন্দ প্লাস মানে এনার্জি, প্যাশন, তারুণ্য,’’ বলছিলেন সহযোগী অ্যাঙ্কর গৌতম ভট্টাচার্য।
ভিতরের সেই ছটফটে তারুণ্যকেই খুঁজেছে সকলে। মুনমুন থেকে সুজয় ঘোষ, পরম, পাওলি প্রমুখ ছয় জন সকালের ফ্লাইট ধরে মুম্বই থেকে সটান উড়ে এসেছিলেন ক্যুইজে যোগ দিতে! বাণিজ্যিক প্রেরণায় নয়, স্বতঃস্ফূর্ত প্রণোদনায়।
তিক্ততার শেষ আনন্দ প্লাস পার্টিতে। ফের একসঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, নীল দত্ত।
ক্যুইজটা গত বছর হয়েছিল শনিবারের পত্রিকার ব্যানারে। সে বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন স্বস্তিকা এবং ঋতুপর্ণা। পরপর দু’ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে কেমন লাগছে? স্বস্তিকার উত্তর: ‘‘খুব ভাল। আর সবচেয়ে ভাল কোনটা জানেন? ইন্ডাস্ট্রির লোকদের মধ্যে সারা বছর দেখা হলে সিনেমা, কাজ নিয়েই কথা হয়। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে আমাদের ভেতরের বাচ্চাটাও বেরিয়ে আসে। মিঠুনদা, বুম্বাদার মতো সিনিয়রেরাও বলছেন, ‘পার্শিয়ালিটি। খেলব না।’ এ সব তো স্কুলের ছেলেমেয়েরা করে।’’ ঋতুপর্ণা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ছবি নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘‘অপরাজিত তুমি।’’ মাইকের গোলযোগ? অপরাজিতা শব্দটাই আকারহীন পুংলিঙ্গ হিসাবে শোনা গেল? নাকি ঋতুপর্ণা ভুল বললেন? কাটা যাবে তাঁর পয়েন্ট? এ সব নিয়ে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা তখন তীব্র উত্তেজিত। এমনকী পরম আর দেব-ও। মনে হচ্ছিল, এখানেও হলুদ আর লাল কার্ডের দরকার।
প্রেসিডেন্সি কলেজের পোড় খাওয়া ক্যুইজার সৃজিত এই সময়েই ঝুঁকিটা নিলেন। এবং সবাইকে কনফিউশনে ফেলে দিলেন। তখন buzzer রাউন্ড। যিনি আগে ‘বাজার’ বাজাবেন, তিনিই উত্তর দেবেন। কোনও টেবিলে বাজার এক বার বেজে উঠলে অন্য টেবিলের বাজনা, লাল আলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। দেখা গেল ক্যুইজমাস্টার প্রশ্ন শেষ করার আগেই ‘বাজার’ টিপে দিচ্ছেন সৃজিত।
‘বায়োস্কোপে বাজিমাত’জয়ী স্বস্তিকা-সৃজিত। জুড়ির ট্রফি কেড়ে নিচ্ছেন দেব-মিঠুন। তখনও মস্তি আনলিমিটেড।
সুজয় এবং ম্যাচ রেফারি জিত কড়া হাতে সামলাতে গেলেন, ‘‘প্রশ্ন শেষ করার পর ‘বাজার’ বাজানো নিয়ম।’’ সৃজিত পাল্টা দিলেন, ‘‘ধরো, তুমি কহানি নিয়ে প্রশ্ন করছ। আমার মনে হতেই পারে, ‘কহানি’ সিনেমার সব উত্তর আমার জানা। তাই আমি আগে বাজার টিপেছি। তুমি প্রশ্ন শেষ করো, আমি উত্তর দিচ্ছি।’’ জিৎ: “নিয়ম কিন্তু লেখা আছে, প্রশ্নের শেষে বাজার টিপতে হবে।” সৃজিতের সমর্থনে ততক্ষণে অন্য টেবিল থেকে এগিয়ে এসেছেন প্রসেনজিৎ, ‘‘কেন হবে না? ও তো আগে বাজার বাজিয়ে রিস্ক নিচ্ছে। প্রশ্নের উত্তর না পারলে নেগেটিভ মার্কিং।’’ অগত্যা জিৎ ঘুরে দর্শকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন, ‘‘আপনারা কী বলেন?’’ দর্শকের রায়, ঝুঁকি নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন শেষের আগে ‘বাজার’ টেপেন, তাঁর দায়িত্ব।’ সমবেত দাবিতে ম্যাচ রেফারি নিয়ম বদলে দিলেন। প্রশ্ন শেষের আগেই ‘বাজার’ টেপা যাবে।
মঞ্চ আলো করে থাকা চার সুন্দরী: কোয়েল, স্বস্তিকা, মুনমুন, পাওলি (বাঁ দিক থেকে)
শেষ কথা: নিয়মটা তা হলে কী? রাজ্যসভার সাংসদ, ক্যুইজমাস্টার ডেরেক ও ব্রায়ান ঘটনাটা শুনে হাসছিলেন। ‘‘নিয়ম একটাই। বাজার বাজলেই ক্যুইজমাস্টার প্রশ্ন থামিয়ে দেবেন। ধরুন, প্রশ্ন করা হল, রাজধানী শহরটি যমুনার ধারে। নাম কী? এ বার কেউ রাজধানী শহরটি শুনেই বাজার টিপে দিলেন। ক্যুইজ মাস্টারও সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন থামিয়ে দেবেন। আর বলবেন না। এ বার উত্তর দাও। ফুটবলে যেমন হাতে বল লাগলেই পেনাল্টি, প্রশ্ন শেষ করার আগে বাজার টিপলেও তেমন।”
ঝুঁকি নিয়ে নিয়ম ভেঙেই তাই বাজিমাত। কিছু হাউলিং, কিছু ফাউলিং আর ঝুঁকি। এই মন্ত্রেই তারুণ্যের বাজিমাত!

সন্দীপ রায়

বিরসা দাশগুপ্ত

রিঙ্গো

শুভ্রা কুণ্ডু

শ্রীলা মজুমদার

দীপ দাশগুপ্ত

লক্ষ্মীরতন শুক্ল

অশোক ধানুকা

নীলরতন দত্ত

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়

সত্যম রায় চৌধুরী

উষসী চক্রবর্তী

সন্দীপ ভুতোরিয়া

অপূর্ব সাহা
জয়ী ও যুগ্ম রানার আপ-দের পুরস্কার তুলে দিলেন এবিপি সংস্থার মুখ্য সম্পাদক অভীক সরকার। ক্যামেলিয়া গোষ্ঠীর নীলরতন দত্ত। অন্যান্য পুরস্কার দেন এবিপি এম ডি অ্যান্ড সি ই ও ডি ডি পুরকায়স্থ, অ্যাঞ্জেল এগ্রিটেকের হাসিবুল হক, ও’ ক্যালকাটা-র অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এবং অরিষ-এর রত্নেন্দু ও অনুপমা ত্রিপাঠি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.