শুধু মহকুমা গ্রন্থাগারই নয়, গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিরও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে করুণ দশা। এমনকী নিয়মিত প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে বহু গ্রন্থাগারেই অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই এই অবস্থা।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, বারুইপুর, ক্যানিং ও আলিপুরএই পাঁচ মহকুমায় বর্তমানে গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১৫৫টি। এর মধ্যে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা গ্রন্থাগার ২টি, গ্রামীণ ৩৪টি, কাকদ্বীপ মহকুমা গ্রন্থাগার ১টি, গ্রামীণ ১৭টি, বারুইপুর মহকুমা গ্রন্থাগার ৭টি, গ্রামীণ ৩৩টি, ক্যানিং মহকুমা গ্রন্থাগার ১টি, গ্রামীণ ১৭টি এবং আলিপুর মহকুমা গ্রন্থাগার ৮টি এবং গ্রামীণ ৩৫টি। মূলত এই সব মহকুমা বা গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলি বহু বছর আগে সরকারি অনুমোদন পায়। বেশিরভাগেরই নিজস্ব কোনও ঘর না থাকায় স্থানীয় কোনও ক্লাব বা বাড়িতে তা তৈরি হয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরে ওই ক্লাবগুলিই সরকারি গ্রন্থাগারের অনুমোদন লাভ করে।
কিন্তু অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে গ্রন্থাগারগুলির পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ গ্রন্থাগারেই কোনও কর্মী নেই। কোথাও ভবনের অবস্থা একেবারেই খারাপ। কোথায়ও আবার রয়েছে পাঠ্যপুস্তকের সমস্যা। ফলে গ্রন্থাগার থাকেও সেখান থেকে কোনওরকম সাহায্য পাচ্ছেন না পাঠকেরা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমা বা শহর লাইব্রেরিতে কর্মী থাকার কথা একজন গ্রন্থাগারিক, একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক, একজন বুক বাইন্ডার ও একজন দারোয়ান কাম নৈশপ্রহরী।
গ্রামীণ লাইব্রেরির ক্ষেত্রে থাকবেন একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন সহকারী। গ্রন্থাগারগুলিতে পাঠকদের জন্য পাঠ্যবই ছাড়াও থাকার কথা বিভিন্ন নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, মাসিকপত্র, কার্টুন, কিশোর পত্রিকা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য নানা সহায়িকা গ্রন্থাদি। যাতে পাঠকরা এসে তাঁদের চাহিদামতো বই পান। কিন্তু দেখা গিয়েছে কোথাও কর্মীর অভাবে নিয়ম করে খোলা থাকছে না, কোথাও বই নেই প্রয়োজনমতো, কোথাও বা বেহাল ভবনেই চলছে লাইব্রেরি।
মগরাহাটের ‘গোকর্ণ কালীপ্রসাদ কমলাকান্ত ইনস্টিটিউশন গ্রন্থাগার’টি ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। এই গ্রন্থাগারের ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়ছে। ফাটল দেখা দিয়েছে দেওয়ালেও। বই রাখার প্রয়োজনীয় আলমারি নেই। বর্ষার জল পড়ে নষ্ট হচ্ছে বইপত্র। অন্যদিকে, ঢোলাহাটের ‘হরিণডাঙা সন্ধানী পাঠাগার’টি চলছে ১৯৮১ সাল থেকে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনও স্থায়ী গ্রন্থাগারিক নেই। একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক আছেন, কিন্তু তিনিও নিয়মিত আসেন না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। গ্রন্ধাগার কখন খোলা থাকে তা কেউই জানেন না। সম্প্রতি ওই গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেল, একতলার দু’টি ঘরের মূল গেটে তালা ঝোলানো। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখা গেল, দেওয়ালে বড় বড় ফাটল। গ্রন্থাগার বন্ধ কেন?
সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ খামারুরনতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “সহকারী গ্রন্থাগার বই আনতে অন্যত্র গিয়েছেন।” তবে লাইব্রেরি সময়মতো খোলা হয় বলেই তাঁর দাবি!
মহকুমা ও গ্রামীণ গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিকদের একাংশের বক্তব্য, বহু বছর ধরে গ্রন্থাগারগুলি চললেও ব্লক বা মহকুমা অফিসে এর কোনও দফতর করা হয়নি। ফলে কিছু প্রয়োজন পড়লে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ছুটতে হয় জেলায়। তাতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়। জেলা গ্রন্থাগারিক তাপস মণ্ডল বলেন, “ব্লক বা মহকুমায় গ্রন্থাগারের কোনও দফতর রাখা প্রয়োজন। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে, কিন্তু এখনও ব্যবস্থা করা যায়নি। ২০১০ সাল পর্যন্ত কর্মী নিয়োগ হয়েছে। তবে এখনও গ্রন্থাগারগুলিতে প্রায় দেড়শো কর্মীর অভাব রয়েছে। বাকি সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।” |