মোহনবাগান নিয়ে নজিরবিহীন রায় দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ফের আইন-কানুন ঘাঁটতে নামতে হল ফেডারেশন কর্তাদের।
সওয়া শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবকে বাঁচাতে কোন পথে এগোতে হবে তা বার করতে আইনজীবীদের কালঘাম ছুটেছে। এ বার ‘টেবলের তলায় সমঝোতা করে মোহনবাগানকে বাঁচানো হয়েছে’ এই মন্তব্যের জন্য ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদারকে কী শাস্তি দেওয়া যায় তা নিয়ে আইনের খোঁজ শুরু করেছে এআইএফএফ। যেহেতু ইঙ্গিতটা টাকার লেনদেন এবং ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলকে উদ্দেশ্য করে, সে কারণে প্রচণ্ড চটেছে ফেডারেশন। খোঁজ করা হচ্ছে ওই মন্তব্যের পেপার কাটিং এবং সিডি-র। ফেডারেশন সচিব কুশল দাস বললেন, “আইন ঘাঁটা হচ্ছে। যদি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে তা হলে যা করার করা হবে।”
এ দিন রাতেই এ ব্যাপারে কাজ শুরু করে দিল ফেডারেশন। লাল-হলুদ সচিবকে শো-কজ করা হচ্ছে। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে তাঁকে জরিমানা অথবা মোহন কর্তাদের মতো নির্বাসনের মুখে পড়তে হতে পারে। কুশলবাবু যখন বিরক্ত হয়ে বলছেন, ‘মোহনবাগানের নির্বাসন ওঠায় ইস্টবেঙ্গলের কী ক্ষতি হল? ওদের তো নিয়মানুযায়ী তিন পয়েন্ট ও তিন গোল দেওয়া হয়েছে,’ তখন আবার খবর আসে কল্যাণবাবুর দলের কোচ ট্রেভর মর্গ্যানও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। ফেডারেশন সচিব বলেন, “আমরা খোঁজ নিচ্ছি মর্গ্যানও কী বলেছেন?” তাঁকেও শো-কজ করা হতে পারে, শোনা যাচ্ছে। |
আরে তুমিও বাঁচবে! ওডাফাকে কোচ যেন সেটাই বোঝাচ্ছেন।
বুধবার মোহনবাগানের ‘নয়া’ প্র্যাক্টিসে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
শুধু ইস্টবেঙ্গল সচিব-কোচের ওপর নয়, ‘হাতে-পায়ে’ ধরে নির্বাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মোহনবাগান কর্তাদের আচরণেও অবাক ফেডারেশনের লোকজন। গতকালের সভায় উপস্থিত এক কর্তা এ দিন বললেন, “টুটু বসু আর তাঁর ছেলে সৃঞ্জয় সভার সব মেম্বারের সামনে হাঁটু গেড়ে ক্ষমা চেয়ে গেলেন। পরে বাড়ি গিয়ে ‘ভি’ দেখিয়ে, ‘আমাদের জয় হয়েছে, ইস্টবেঙ্গলকে দেখিয়ে দিয়েছি’ মার্কা মন্তব্য করায় রীতিমতো অবাক হয়েছি। এ সব কী হচ্ছে! এ রকম দ্বিচারিতা কেন? এটা তো রাজনীতির জায়গা নয়।” কর্মসমিতির সিদ্ধান্তের সরকারি চিঠি এ দিন মোহনবাগানকে পাঠিয়ে দিয়েছে ফেডারেশন। অন্য দিকে, ‘আর কোনও দিন কোনও ম্যাচে দল তুলব না’, এই মুচলেকার চিঠি তৈরির কাজও কলকাতায় শুরু করে দিয়েছেন টুটু বসু-অঞ্জন মিত্ররা। শাস্তি থেকে বাঁচার পর তাঁদের আচরণ যে ফেডারেশন কর্তাদের ক্ষুব্ধ করেছে, জেনে গিয়েছেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। সে কারণে সচিব অঞ্জন মিত্র এ দিন বলেন, “ক্লাব বেঁচেছে, আই লিগে টিম ফিরেছে, ফুটবলারদের পায়ে বল পড়েছে, এতেই আমরা খুশি।” বিকেলে ক্লাবে কর্মসমিতির সভার পর মোহন-কর্তারা যেন আরও ভিজে মুড়ি। চমকপ্রদ বিবৃতির লোভ ছেড়ে বাস্তবের জমিতে ‘গ্যাং অব ফোর’। অবনমন বাঁচানোর তীব্র চাপ। সঙ্গে জরিমানার দু’কোটি কী ভাবে যোগাড় হবে তা নিয়ে মহাচিন্তা। কমিটিও গড়া হল। শোনা যাচ্ছে, জরিমানা কমানোর আবেদন করা হবে। এবং টাকার অঙ্ক কিছুটা কমবে।
আড়াই বছরের শাস্তি পুরো তুলে নেওয়ায় ভারত জুড়ে বিতর্ক তৈরি হলেও এ দেশের ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার অফিসে হেলদোল নেই। বেশির ভাগই প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলের পাশে। ইস্টবেঙ্গল, ভাইচুং ভুটিয়া-সহ কে ক্ষুব্ধ হয়েছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। সিদ্ধান্তটা যাঁদের তাঁরা বলছেন, এ ছাড়া অন্য পথ ছিল না। কারণ, পুরো নির্বাসন না তুললে মোহনবাগানকে আই লিগে ফেরানো অসম্ভব ছিল। শুধু এ বারের আই লিগে সাসপেন্ড করে রাখলে বাগানের পয়েন্ট শূন্য হত। অবনমন নিয়ে অন্য ক্লাবগুলো যে ভাবে চিঠি দিতে শুরু করেছিল তাতে ওই অবস্থায় পিছনের দরজা দিয়ে মোহনবাগানকে পরের আই লিগে ঢোকাতে গেলে মামলা হতে পারত। আবার মোহনবাগানের মতো বিরাট সমর্থনপুষ্ট ক্লাবকে দ্বিতীয় ডিভিশনে পাঠালে ভারতীয় ফুটবলের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ত। ভারতীয় দলের টিডি রব বান এবং কোচ কোভারম্যান্সের সঙ্গেও কথা বলেন ফেডারেশন কর্তারা। দু’জনেই বলেছিলেন, “স্থানীয় লিগে দল সাসপেন্ড হলে সমস্যা নেই। কিন্তু জাতীয় লিগে হলে তার প্রভাব পুরো দেশের ফুটবলের ওপর পড়ে। বিশেষ করে যদি সেই ক্লাব সমর্থকপুষ্ট হয়।” নির্বাসন তোলার সময় এটাও মাথায় রেখেছিলেন ফেডারেশন কর্তারা।
আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিসনে খেলা থেকে বাঁচলেও ১৬ ম্যাচে কি অবনমন বাঁচাতে পারবেন করিম বেঞ্চারিফারা? বিশেষত যখন প্রথমেই দু’টো কঠিন ম্যাচে (মারগাওয়ে ২০ জানুয়ারি সালগাওকর ও যুবভারতীতে ২৭ তারিখ ইউনাইটেড স্পোর্টস) ওডাফাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার ওডাফাকে নিয়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সভা ডাকছে ফেডারেশন। সেখানে ডাকা হয়েছে ওডাফাকেও। দু’ম্যাচের নির্বাসন যদি বেড়ে যায় তা হলে বাগানের আরও বিপদ। করিম এ দিন বলেছেন, “কাজটা খুবই কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়। সালগাওকরকেও অবনমন বাঁচিয়ে পাঁচ নম্বরে তুলেছিলাম।” কলঙ্কিত ডার্বি ম্যাচের পর এখনও যে ছ’টা ম্যাচ স্থগিত হয়েছে সেগুলোর নতুন দিনক্ষণ বৃহস্পতিবারই জানাবে আই লিগ কমিটি। এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে নামা আটকানোর পরেও দল যদি অবনমনের গাড্ডায় পড়ে, তা হলে মোহন-কর্তাদের বাঁচাতে আর কোনও প্রফুল্লর প্রসন্নতা পাওয়ার কিন্তু উপায় থাকবে না! |