মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে ক্ষুব্ধ অগ্রদ্বীপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
সব দেখেশুনে অফিসারের চোখ তো ছানাবড়া। রীতিমতো বাঁধ কেটে ভাগীরথীর পাড়ে মাটি চুরি করছে মাফিয়ারা। ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে কাজে ব্যস্ত এক দল লোক। ট্রাক্টরের ট্রলিতে বোঝাই করে দিব্যি পাচার হয়ে যাচ্ছে বালি।
বুধবার দুপুরে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের কালিকাপুর থেকে ট্রলি-সমেত সাতটি ট্রাক্টর আটক করল পুলিশ। তার মধ্যে পাঁচটি ট্রলি বালি বোঝাই ছিল। ওই ভাগীরথীর পাড়েই রয়েছে একটি ইটভাটা। পুলিশ জানায়, কালিকাপুর গ্রামে পুরনো কাটোয়া-দাঁইহাট রাস্তার পাশেই রয়েছে একটি ইটভাটা। ওই ভাটার পাশ দিয়েই ভাগিরথীর দিকে যেতে গিয়ে পুলিশের নজর পড়ে বেশ কিছু শ্রমিক ঝুড়ি কোদাল দিয়ে ভাগিরথীর পাড় থেকে মাটি কাটছে। পুলিশ যেতেই শ্রমিকেরা চম্পট দেয়। তখন পুলিশ গাড়িগুলি আটক করে অগ্রদীপ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের (বিএলএলআরও) কর্তাদের সন্দেহ, ইটভাটার জন্যই দিনের পর দিন মাটি চুরি চলছে। |
কাটোয়া ২ বিএলএলআরও দফতর সূত্রে জানা যায়, পুলিশের কাছে খবর পেয়ে দফতরের আধিকারিক অরবিন্দ চক্রবর্তী-সহ অন্য কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, বাঁধের ৫-৬ ফুট পর্যন্ত কেটে নিয়ে মাটি মাফিয়ারা ট্রাক্টর চলাচলের রাস্তা করেছে। অরবিন্দবাবু বলেন, “বাঁধটা হাঁ হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র কালিকাপুরের ওই জায়গা থেকে কয়েক লক্ষ ঘনফুট মাটি কেটে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।”
এ দিন ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে এলাকাবাসী তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, দিনের পর দিন মাটি মাফিয়ারা ভাগিরথীর পাড় কেটে সাফ করে দিচ্ছে। কোনও জমিমালিক মাটি কাটার ব্যাপারে আপত্তি জানালে তাঁদের হুমকি দিচ্ছে মাফিয়ারা। ওই সব বাসিন্দারা পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ ওই মাফিয়াদের ধরে না। কেবলমাত্র কয়েকটা মাটিভর্তি গাড়ি আটক করে। অরবিন্দবাবু বলেন, “এলাকার লোকজন প্রথমে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও পরে তাঁরা শান্ত হন। আমরা সকলে চাই মাটি মাফিয়াদের বাড়াবাড়ি বন্ধ হোক। এ জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।” এমনিতে কাটোয়া ২ ব্লকে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ইটভাটা। বিএলএলআরও দফতর সূত্রে জানা যায়, অন্তত ৫০টি ইটভাটা রয়েছে ওই এলাকায়। যার মধ্যে ১৭টি অবৈধ। বিএলএলআরও জানান, অবৈধ ইটভাটা গুলির বিরুদ্ধে কাটোয়া থানায় ইতিমধ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। |
এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, পুরো অগ্রদীপ পঞ্চায়েত ও পূর্বস্থলীর পিলা পঞ্চায়েত জুড়ে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য চলছে। যন্ত্র দিয়ে ভাগিরথীর পাড়ে মাটি কাটা চলছে। পুলিশ এ রকম দু’টি যন্ত্র আটক করেছে। এলাকাবাসী জানান, অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েত এমনিতেই ভাঙন প্রবণ এলাকা। ভাঙনের জন্য চরবিষ্ণুপুর গ্রাম স্থানান্তর করতে হয়েছে প্রশাসনকে। বিএলএলআরও বলেন, “ভাগিরথীর জল বাড়লেই বাঁধের ভিতর দিয়ে তা গ্রামে ঢুকে পড়বে।” অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের প্রধান নিতাই মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “এলাকায় কেউ ভাগিরথীর পাড় থেকে মাটি চুরি করে না।” যদিও কয়েক আগেই তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল মণ্ডল কাটোয়ার মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে অগ্রদ্বীপ ও শক্তিপুর পঞ্চায়েত এলাকায় মাটি মাফিয়াদের বাড়াবাড়ির কথা জানিয়েছিলেন।
সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের পঞ্চায়েতের মদতে মাটি মাফিয়াদের এমন দৌরাত্ম্য। প্রশাসনের উচিত তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা।” বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “কাটোয়া ও কালনার মহকুমাশাসককে পুলিশ এবং বিএলএলআরও দফতরকে সঙ্গে নিয়ে মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
|